কয়েক মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে, মূলধারার মিডিয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ‘ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চাই’—স্লোগানটি অনলাইনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তথ্য যাচাইয়ের প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই স্লোগান কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নয়, বরং ফেসবুকে লাইক বা ফলো বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে খাবার, প্রসাধনী, পোশাক কিংবা ব্যক্তিগত ভ্লগের বিজ্ঞাপনে।  

বুধবার ‘তারাও ড.

ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য চান, শুধু ফেসবুকে “লাইক” বাড়াতে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ডিসমিসল্যাব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বিজ্ঞাপনে ড. ইউনূসের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ‘লাইক’ দেওয়া বা ‘ফলো’ করার আহ্বান জানানো হয়।

ডিসমিসল্যাব তাদের অনুসন্ধানে দেখেছে, চলতি বছরের এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ এ ধরনের ৫৫টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। প্রতিটি পেজের সর্বশেষ ২০টি পোস্ট পর্যালোচনা করে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম দেখা হয়। এতে দেখা যায়, ৯০ শতাংশ পেজ আগে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে পোস্ট করেনি।

যেভাবে ছড়ায় এ স্লোগান

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চাই’ স্লোগানটি ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক নেতা সারজিস আলম গত ২৯ মার্চ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।’

সারজিসের এই পোস্ট পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনার জন্ম দেয় এবং বিষয়টি ভাইরাল হয়। 
ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিছু ফেসবুক পেজ এই আলোচনার সুযোগ নিতে নিজেদের পেজে একই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে।

ঢাকাভিত্তিক রেস্তোরাঁ ‘দ্য টেস্টি অ্যাপ্রোনের’ ফেসবুক পেজে ১৩ ও ১৪ মে প্রচারিত দুটি বিজ্ঞাপনের একটির বার্তা ছিল, ‘আপনি যদি চান ড. ইউনূস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক, তাহলে ডান পাশে লাইক অপশনে ক্লিক করুন’। বিজ্ঞাপনের নিচে ডান পাশে একটি ‘লাইক’ বাটন দেখা যায়। যদিও ১৮ মে পর্যন্ত তাদের সর্বশেষ ২০টি পোস্টের কোনোটিতেই রাজনৈতিক বিষয় নেই।

ডিসমিসল্যাব জানায়, ৪৭টি পেজের মধ্যে ৩০টি অর্থাৎ প্রায় ৬৪ শতাংশই খাবার, প্রসাধনী, পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা বা মৌসুমি ফলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আটটি ছিল ব্যক্তিগত বা ভ্লগ ধরনের পেজ। আর দুটি নিজেদের মিডিয়া আউটলেট হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। বাকি পেজগুলো ‘পাবলিক ফিগার’ ও ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ হিসেবে তালিকাভুক্ত।

প্রধান উপদেষ্টাকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে পোস্ট দেওয়া ‘ন্যাচারাল হেলথ বিডি’, ‘আমবাজার’, ‘মায়ের দোয়া অ্যাগ্রো’ নামের পেজগুলোর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এমনকি তারা আগে কোনো রাজনৈতিক প্রচারও চালায়নি।

ডিসমিসল্যাব বলছে, এই ৪৭টি ফেসবুক পেজের গড় লাইক ৩৫ হাজারের বেশি; অনুসারী ৩৭ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে ২৪টি পেজ পরিচালিত হয় বাংলাদেশ থেকে, একটি ইতালি থেকে এবং একটি পেজ যৌথভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হয়।

ডিসমিসল্যাব এসব পেজের ছয়জন অ্যাডমিনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের চারজন বলেছেন, বিজ্ঞাপনগুলো নিজেরা তৈরি করেননি, বিজ্ঞাপন সংস্থাকে প্রচারণার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। 

একজন জানান, তিনি নিজেই বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন লাইক ও ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। আরেকজন বলেন, একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু তিনি আগে জানতেন না। 

তিনি বলেন, তারা ফলোয়ার বাড়াতে বলেছিলেন, কিন্তু বিজ্ঞাপন কী হবে তা ওই প্রতিষ্ঠানই সিদ্ধান্ত নেয়।

‘ইয়াতি ডিজিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম ফারুক ডিসমিসল্যাবকে বলেন, এ ধরনের বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পেজের ফলোয়ার বাড়ানো। পেজের গ্রহণযোগ্যতা বিচার করা হয় ফলোয়ার সংখ্যা দিয়ে। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর উচিত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করা।

মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নীতিমালা ও নজরদারির ঘাটতি

মেটার নীতিমালা অনুযায়ী, রাজনৈতিক, নির্বাচনসংক্রান্ত বা সামাজিক ইস্যুভিত্তিক বিজ্ঞাপনগুলোতে ডিসক্লেইমার (স্বচ্ছতার ঘোষণা) থাকা আবশ্যক। যেখানে বিজ্ঞাপনদাতার পরিচয় এবং তার পরিচয় যাচাই সম্পন্ন হয়েছে তা উল্লেখ করতে হয়। এই বিজ্ঞাপনগুলো মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে দেখা যায় বিজ্ঞাপনটি কোথায় এবং কার কাছে প্রদর্শিত হয়েছে, কতদিন ধরে চলেছে এবং কত অর্থ ব্যয় হয়েছে। এসব শর্ত পূরণ না করলে বিজ্ঞাপনটি প্রচার অযোগ্য বিবেচিত হয় এবং সরিয়ে ফেলার কথা।

‘ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চাই’—এ ধরনের স্লোগানসহ যে বিজ্ঞাপনগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মেটার সংজ্ঞা অনুযায়ী রাজনৈতিক আধেয় (কনটেন্ট) হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা। কিন্তু ডিসমিসল্যাবের পর্যালোচনা করা ৫৫টি বিজ্ঞাপনের একটিতেও মেটার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ডিসক্লেইমার ছিল না। এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে ৪৩টি পর্যালোচনার সময় পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। আর ডিসক্লেইমার না থাকায় ১২টি বিজ্ঞাপন মেটা সরিয়ে দেয়।

ডিসমিসল্যাব বলছে, বাংলায় লেখা বিজ্ঞাপন, বিশেষ করে যেগুলো সরাসরি রাজনৈতিক পেজ থেকে নয় বরং ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক পেজ থেকে আসে, সেগুলো শনাক্ত করার ক্ষেত্রে মেটার এখনো বড় ঘাটতি রয়ে গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ সব ক ফ সব ক প জ র জন ত ক ক ষমত য় ফল য় র ধরন র র একট ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

হাতিয়ার মেঘনায় রড-সিমেন্ট বোঝাই ট্রলার ডুবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীতে এমভি ফাহিম নামের একটি মালামাল বোঝাই ট্রলার ডুবে গেছে। এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।  

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের ভূমিহীন বাজারের পূর্ব দক্ষিণে চর মহিউদ্দিন মার্কেট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির এ ঘটনা ঘটে। এসময় ট্রলারের কেউ নিখোঁজ হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

ভুক্তভোগী তমরদ্দি বাজারের ব্যবসায়ী মো. নাজমুল আলম বলেন, ‘‘বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে রড, সিমেন্ট ও মুদি সামগ্রী নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ হয়ে এমভি ফাহিম নামের একটি মাল বোঝাই ট্রলার হাতিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ট্রলারের মালিক পক্ষ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লোভ করে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে ট্রলারটি ছেড়ে আসে। যাত্রা পথে ট্রলারটি উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের ভূমিহীন বাজারের পূর্ব দক্ষিণে চর মহিউদ্দিন মার্কেট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে পৌঁছলে বাতাসের তোড়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ২৮ টন রড, সিমেন্ট ও মুদিসহ প্রায় ৪ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ডুবে যায়। তাৎক্ষণিক ট্রলারে থাকা লোকজনকে স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার করে। এতে মালামাল ডুবে অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছে।’’ 

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’     

 

ঢাকা/সুজন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ