মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস দিয়ে মুক্তি দেওয়া এবং রাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
আজ বুধবার রাত পৌনে ৮টায় ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে গিয়ে সমবেত হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এ সময় তারা ‘রাজাকারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘আল বদরের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘রাবিতে হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘আমার সোনার বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের আপিল বিভাগ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার এটিএম আজহারকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আমরা এই রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তাদেরই বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সাহায্যে আল বদরের ভূমিকায় তৎকালীন ছাত্রসংঘের রংপুর বিভাগের সভাপতি এটিএম আজহার সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তিনি কোনোভাবেই নিরপরাধ একজন ব্যক্তি নন। একজন চিহ্নিত আল বদর। তার রায়ের প্রতিবাদে গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের নামে শিবিরের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এ সময় এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট হামলাকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, ‘চব্বিশের পতিত স্বৈরাচারী সরকার যেভাবে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে দেশ পরিচালনা করেছিল এবং বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যত্থানের পরেও দেখা যাচ্ছে, একটি মহল একই নীতিতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নির্লজ্জ রায় দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা এই দেশ দেখতে চাই না। গতকাল যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করে যারা একই নীতিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে; তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আরেকটি মানুষের ওপরে যদি তারা এ ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি প্রয়োগ করে তাহলে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ থেকে এর প্রতিবাদ শুরু হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম নবত ব র ধ ম নবত ব র ধ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।