ছবি: সংগৃহীত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আন্তর্জাতিক আইন তারা অগ্রাহ্য করতে পারে না

সীমান্ত দিয়ে ৯৭৫ জনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে দেওয়া) করেছে। বাংলাদেশ চার দফা কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানালেও ভারত সরকার সেটা আমলে নেয়নি। এটা দুই দেশের সীমান্ত প্রটোকল ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন শুরু করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ৪ মে থেকে শুরু করে গত ২৪ দিনে দেশের ১৭টি জেলা দিয়ে ৯৭৫ জনকে পুশ ইন করেছে। এর বাইরে সুন্দরবন দিয়ে আরও ৭৮ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে।

ভারতের এই পদক্ষেপ ১৯৭৫ সালের যৌথ সীমান্ত নির্দেশিকা, ২০১১ সালের সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনার চুক্তিগুলোর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির নতুন কৌশল হিসেবে ‘পুশ ইন’ শুরু করা হয়েছে। পুশ ইন ইস্যুতে ৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠিতে পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সীমান্ত পর্যায়ে সমন্বয় জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।  

কূটনৈতিক চ্যানেল ছাড়াও পুশ ইন নিয়ে বিজিবিও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজিবি জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুশ ইন করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলাদেশে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ইউএনএইচসিআরের কার্ডধারী কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছে। আবার যারা ভারতীয় রোহিঙ্গা, তাদেরও পুশ ইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৭ মে বলেছেন, বাংলাদেশি কেউ যদি অবৈধভাবে ভারতে থেকে থাকেন, তবে ভারত যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠায়। আর বাংলাদেশে যদি অবৈধ ভারতীয় নাগরিক থেকে থাকেন, তাঁদেরও যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে।

এভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশের মানুষকে ঠেলে পাঠানো যায় না। যদি কেউ বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হন, তাঁকে ফেরত পাঠানোর কূটনৈতিক ব্যবস্থা আছে। আমরা আশা করব, ভারত সেটা অনুসরণ করবে। সীমান্তে এভাবে লোক ঠেলে দেওয়ার বিপদ অনেক। ভারতের সীমান্তে লোক ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে এখানে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠার পাশাপাশি সীমান্তে একধরনের উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ঠেলে দেওয়া মানুষকে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ঘটেছে।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থাকবে। কিন্তু সেটা সমাধান করতে হবে কূটনৈতিকভাবে। পুশ ইন বন্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক চিঠিই যথেষ্ট নয়। দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান না হলে সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতারও প্রয়োজন হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববেন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন আশা করি। যেকোনো মূল্যে অবিলম্বে পুশ ইন বন্ধ করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেনী সীমান্ত দিয়ে আরো ১৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • খাগড়াছড়ি সীমান্তে আবারও ১৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • ফেনী সীমান্তে ১৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির ১৩ দিন পর মৃত্যু
  • তিন জেলায় ৬৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আরও ২২ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • ঝিনাইদহ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির মৃত্যু
  • ফের হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২২ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
  • মৌলভীবাজার সীমান্তে ১০ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ, জিজ্ঞাসাবাদে জানালেন হরিয়ানায় ছিলেন
  • আন্তর্জাতিক আইন তারা অগ্রাহ্য করতে পারে না