বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ
Published: 28th, July 2025 GMT
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পাঁচ হাজারের বেশি বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো বিএসএফ সদস্যদের শরীরে লাগানো থাকবে। এর মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ, পুশ ব্যাকের দৃশ্যে রেকর্ড করা যাবে। কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর অপরাধীদের আক্রমণের ঘটনাও রেকর্ড করা যাবে।
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সূত্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু নির্বাচিত সীমান্ত চৌকিতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও বসানো হচ্ছে। এই ডিভাইসগুলোতে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান নেওয়া যাবে। এই তথ্যগুলো পরে ‘ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে’ প্রদান করা হবে।
গত বছর ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ফ্রন্টে বিএসএফের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দুটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ‘ব্যাপক পর্যালোচনা’ করার পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফ সদর দপ্তরের এই দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
আরো পড়ুন:
বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘোষণা অভিনেতার স্ত্রীর
ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৬ জনের প্রাণহানি
সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিএসএফ জওয়ানদের কাছে দুটি ব্যাচে প্রায় পাঁচ হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো নাইট-ভিশন সক্ষম এবং প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টার ফুটেজ ধারণ করতে পারে।
তারা বলেন, বিএসএফ বাহিনী যখন অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করে অথবা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়, তখন তথ্য ও প্রমাণ রেকর্ড করতে এই ক্যামেরাগুলো সহায়ক হবে। এর ফলে মানব পাচার এবং অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদক, গবাদি পশু এবং জাল ভারতীয় মুদ্রা (এফআইসিএন) পাচারের মতো সীমান্তবর্তী অপরাধ বন্ধ করা যাবে।
সূত্র জানিয়েছে, উভয় দেশের অপরাধীরা বিএসএফ সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলেও রেকর্ডিংগুলো প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। বিএসএফের দাবি বাংলাদেশ এবং তাদের বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দ্বিপাক্ষিক ফোরামে বারবার দাবি করে আসছে যে ভারতীয় পক্ষ তাদের নাগরিকদের অস্বাভাবিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং অন্যায্যভাবে হত্যা করছে, অন্যদিকে বিএসএফ সর্বদা বলে আসছে যে তারা সৈন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ উপায় হিসাবে অ-প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতী গুলি চালায়।
এই ঘটনাগুলো এখন এই দেহ ক্যামেরাগুলো দ্বারা রেকর্ড করা হবে এবং তদন্তের প্রয়োজনে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে, বলে আশাবাদী বিএসএফ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় অনুমোদিত প্রস্তাব হিসেবে সীমান্ত পারাপারের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্বাচিত এবং ‘দুর্বল’ বিএসএফ বিওপিতে বায়োমেট্রিক্স ডেটা রেকর্ডিং মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে, যা ভারতীয় ফ্রন্টে বিএসএফ কর্তৃক ধরা পড়া অবৈধ বাংলাদেশিদের আঙুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান ধারণ করবে।
বিএসএফ জানিয়েছে, অনুপ্রবেশকারী এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করতে এই বায়োমেট্রিক তথ্য এফআরও-এর সঙ্গে ভাগ করা হবে।
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রাজ্যকে তাদের অধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের পরীক্ষা করে তাদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিএসএফ এই সীমান্ত থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী ১ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ বাহিনী ৩ হাজার ৫৩৬ জনেরও বেশি পুরুষ ও নারীকে ধরেছে অথবা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।
গত বছরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান ছিল ২ হাজার ৪২৫ জন (আগত) এবং ১ হাজার ৪৯ জন (বহির্গামী)।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দুষ্কৃতীদের দ্বারা বিএসএফ সদস্যদের ওপর ৭৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এই সীমান্তে ৩৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ড কর ব এসএফ স অব ধ ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক
জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।
একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।
সুচরিতা/শাহেদ