ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পাঁচ হাজারের বেশি বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো বিএসএফ সদস্যদের শরীরে লাগানো থাকবে। এর মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ, পুশ ব্যাকের দৃশ্যে রেকর্ড করা যাবে। কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর অপরাধীদের আক্রমণের ঘটনাও রেকর্ড করা যাবে।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সূত্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু নির্বাচিত সীমান্ত চৌকিতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও বসানো হচ্ছে। এই ডিভাইসগুলোতে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান নেওয়া যাবে। এই তথ্যগুলো পরে ‘ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে’ প্রদান করা হবে।

গত বছর ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ফ্রন্টে বিএসএফের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দুটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ‘ব্যাপক পর্যালোচনা’ করার পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফ সদর দপ্তরের এই দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

আরো পড়ুন:

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘোষণা অভিনেতার স্ত্রীর

ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৬ জনের প্রাণহানি

সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিএসএফ জওয়ানদের কাছে দুটি ব্যাচে প্রায় পাঁচ হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো নাইট-ভিশন সক্ষম এবং প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টার ফুটেজ ধারণ করতে পারে।

তারা বলেন, বিএসএফ বাহিনী যখন অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করে অথবা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়, তখন তথ্য ও প্রমাণ রেকর্ড করতে এই ক্যামেরাগুলো সহায়ক হবে। এর ফলে মানব পাচার এবং অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদক, গবাদি পশু এবং জাল ভারতীয় মুদ্রা (এফআইসিএন) পাচারের মতো সীমান্তবর্তী অপরাধ বন্ধ করা যাবে।

সূত্র জানিয়েছে, উভয় দেশের অপরাধীরা বিএসএফ সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলেও রেকর্ডিংগুলো প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। বিএসএফের দাবি বাংলাদেশ এবং তাদের বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দ্বিপাক্ষিক ফোরামে বারবার দাবি করে আসছে যে ভারতীয় পক্ষ তাদের নাগরিকদের অস্বাভাবিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং অন্যায্যভাবে হত্যা করছে, অন্যদিকে বিএসএফ সর্বদা বলে আসছে যে তারা সৈন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ উপায় হিসাবে অ-প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতী গুলি চালায়।

এই ঘটনাগুলো এখন এই দেহ ক্যামেরাগুলো দ্বারা রেকর্ড করা হবে এবং তদন্তের প্রয়োজনে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে, বলে আশাবাদী বিএসএফ। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় অনুমোদিত প্রস্তাব হিসেবে সীমান্ত পারাপারের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্বাচিত এবং ‘দুর্বল’ বিএসএফ বিওপিতে বায়োমেট্রিক্স ডেটা রেকর্ডিং মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে, যা ভারতীয় ফ্রন্টে বিএসএফ কর্তৃক ধরা পড়া অবৈধ বাংলাদেশিদের আঙুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান ধারণ করবে।

বিএসএফ জানিয়েছে, অনুপ্রবেশকারী এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করতে এই বায়োমেট্রিক তথ্য এফআরও-এর সঙ্গে ভাগ করা হবে।

পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রাজ্যকে তাদের অধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের পরীক্ষা করে তাদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিএসএফ এই সীমান্ত থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী ১ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ বাহিনী ৩ হাজার ৫৩৬ জনেরও বেশি পুরুষ ও নারীকে ধরেছে অথবা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

গত বছরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান ছিল ২ হাজার ৪২৫ জন (আগত) এবং ১ হাজার ৪৯ জন (বহির্গামী)।

তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দুষ্কৃতীদের দ্বারা বিএসএফ সদস্যদের ওপর ৭৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এই সীমান্তে ৩৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ড কর ব এসএফ স অব ধ ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
  • ১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
  • বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
  • বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য ৫ হাজার বডিক্যাম পাচ্ছে বিএসএফ
  • নজরদারি করা অ্যাপের বিরুদ্ধে এক মাস পর ব্যবস্থা নিল গুগল
  • সাইবর্গ দেখা যাবে যুদ্ধক্ষেত্রে