আড্ডায় তর্কের জেরে এক বন্ধুর ছুরিকাঘাতে আরেক বন্ধু নিহত হয়েছে। নিহত যুবকের নাম জীবন হোসেন (২৪)। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারী পাড়ায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে। 

জীবন শহরের মোল্লাপাড়ার রজব আলীর ছেলে। তিনি একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন।

স্থানীয়রা জানায়, শহরের ব্যাপারী পাড়া এলাকায় একটি বাসার গলিতে বসে চার বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন জীবন হোসেনকে ফোন করে ডেকে আনে। তখন তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে একটি দোকানের সামনে যায় তারা। সেখানে তিন বন্ধু জীবনকে পিছমোড়া করে ধরে আরেক বন্ধু ছুরিকাঘাত করে তাকে। স্থানীয়রা জীবনকে রক্ষা করতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরে জীবনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
 
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.

ছোয়া ইসরাইল বলেন, হাসপাতালে আমরা জীবন নামের ছেলেটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার শরীরে একাধিক স্থানে ছুরির আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

শিল্পি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কয়েকজন ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে ধস্তাধস্তি হয়। জীবন একজনকে ফোন দিয়ে তাকে বাঁচাতে অনুরোধ করেন। এসময় তিন-চারজন মিলে জীবনকে ছুরিকাঘাত করে। 

নিহতের বড় ভাই রাসেল বলেন, মাঝে মধ্যে ব্যাপারী পাড়ায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত জীবন। হয়তো তাদের মধ্যে কোন বিরোধের জেরেই আমার ভাইকে ওরা হত্যা করেছে। তবে ভাই হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমি।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্ধুদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে এর বেশি বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা যায়নি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ র ক ঘ ত হত য বন ধ ত ব জ বনক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানিতে ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধারে ধীরগতি, প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ কিছু বিষয় উঠে এসেছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারু দলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) পদটি ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সায়মা সাঁতার দলের সদস্য ছিল না। তবু তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দিন আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেই হল দুটির প্রশিক্ষকেরা সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সাঁতার অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার অগোচরে হঠাৎ ডুবে যান সায়মা। বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাঁকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করেন প্রশিক্ষকেরা। ওপরে তুলে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।

চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডারেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা দিতে আট মিনিট সময় লেগেছে। একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অনেক বেশি চেষ্টা ছিল।

সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি।’

প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রশিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁর বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দুজন প্রশিক্ষক বসে নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাঁদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে। সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে।

শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন ও অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে ওই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা গত তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে