ঢাকাই চলচ্চিত্রের রাজপুত্র তিনি। সিনেমায় ২৬ বছরের ক্যারিয়ারের পার করছেন তিনি। আসন্ন ঈদে তার অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। অপরদিকে ছোট পর্দার বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থিতিতে মন জয় করে নেওয়া অভিনেত্রী নাবিলা। ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার পর ‘তুফান’ ছবিতেও ঝলক দেখিয়েছেন। এই ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেছিলেন শাকিব খানের বিপরীতে। ফলে দেশের শীর্ষ নায়কের সঙ্গে তার তৈরি হয়েছে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তুফানের পর আবারও একসঙ্গে দেখা যাবে তাদের, তবে এবার রূপালি পর্দায় নয়-টেলিভিশনের বিশেষ ঈদ আয়োজনে।
জানা গেছে, ‘তুফান’ ছবির সেটেই শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়েছিল নাবিলার। সেই প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা আজও রোমাঞ্চ ছড়ায় তার কণ্ঠে। নাবিলা বলেন, প্রথম দেখাতেই তাঁর মধ্যে এক অন্যরকম আভিজাত্য দেখেছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম, তিনি শুধু তারকাই নন, একজন পরিপূর্ণ শিল্পী। অথচ তাঁর আচরণে ছিল না কোনো অহংকার। খুব সাধারণ, সাদামাটা একজন মানুষ। তাঁর সঙ্গে গল্প করা যায়, হাসা যায়, ভাব বিনিময় করা যায়-যেন আমাদেরই একজন।”
অভিনেত্রী আরও যোগ করেন, আমার সঙ্গে প্রথম শুটিং ছিল সিনেমার শেষ দৃশ্যের। একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যদিও একটু অন্তর্মুখী মানুষ, তবে সহশিল্পী হিসেবে দারুণ সহযোগিতাপরায়ণ।”
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক বিশেষ আয়োজনে শাকিব খানকে দেখা যাবে অতিথি হিসেবে, আর সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকবেন নাবিলা। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর একসঙ্গে তোলা একটি ছবি নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে নাবিলা লিখেছেন, এটা আমার সহকর্মীর সঙ্গে একটি ছবি। আজ ঈদের একটি শোতে আমার অতিথি হয়েছেন মেগাস্টার শাকিব খান।”
ছবিটি প্রকাশের পরপরই শোবিজপ্রেমীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। এক ফ্রেমে দুই ভিন্ন ধারার জনপ্রিয় তারকা—দর্শকদের আগ্রহ যেন বাড়ছেই।
রোমাঞ্চ, শ্রদ্ধা ও বিনোদনের এক অনন্য মেলবন্ধন হয়ে উঠতে চলেছে এই ঈদ আয়োজন। শাকিব খান ও নাবিলাকে একসঙ্গে দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তাদের ভক্তরা। নিঃসন্দেহে এটি এবারের ঈদ বিনোদনের এক উজ্জ্বল সংযোজন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘এখন আমাদের কী হবে কার কাছে থাকব’
‘তোমরা যখন বড়ি খাইয়া মরবাই তখন আমাদেরও দুইটা বড়ি খাওয়াইয়া দিতা। একসঙ্গে মরে যাইতাম। এখন আমাদের কী হবে? আমরা কার কাছে থাকব, কোথায় থাকব?’
বাবা-মা একসঙ্গে আত্মহত্যা করার পর স্বজন ও প্রতিবেশীদের সামনে এসব কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসাচ্ছিল আট বছরের ছোট্ট জেরিন। জেরিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকার মৃত আল আমিন ও ঝরনা বেগম দম্পতির রেখে যাওয়া দ্বিতীয় সন্তান। অভাব-অনটন ও দাম্পত্য কলহের জেরে এ দম্পতি গত রোববার রাতে চালের পোকা মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
আবির ও জেরিন এখন একই ইউনিয়নের নোয়াপাড়ায় তাদের নানার বাড়িতে রয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জেরিনের দুই বছরের বড় শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই আবির এখনও মা-বাবা হারানোর বিষয়টি বুঝতে পারছে না। সে প্রায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটছে, খেলছে।
জেরিন ও আবিরের বড় খালা জেসমিন বেগম জানান, তার বোনের ছেলেটার (আবির) দুই হাত ও একপায়ের আঙুল নেই। ঠোঁটও কাটা। দুইবার গাছ থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তবে মেয়েটি সুস্থ। ছেলেটি নিজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বা খাবার খেতে পারে না। তার চিকিৎসাও দরকার। তারা দুই ভাইবোন চরলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শিশু দুটির মামা আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের পৈতৃক জমি বেশি নেই। কোনোমতে সংসার চলে। তাঁর পাঁচ বোনের মধ্যে ঝরনা ছিলেন চতুর্থ। সব বোনের বিয়ে হয়েছে। সাধ্যমতো বোনদের দেখাশোনা করেন তিনি। তাঁর বোন ও বোনের স্বামী মৃত্যুর আগে বিভিন্ন সংস্থায় দুই লক্ষাধিক টাকা ঋণ রেখে গেছেন। মৃত বোনের ছেলেমেয়ে এখন তাঁর সংসারে। কীভাবে সবকিছু তিনি সামাল দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে এতিম দুই সন্তানের প্রতি সহায়তা করার আহ্বান জানান।
আবির ও জেরিনের নানি আম্বিয়া বেগম কান্না চেপে বলেন, তাঁর বয়স হয়েছে। ছেলের সহায় সম্পত্তিও বেশি নেই। নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়বেন তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
জেরিন-আবিরের দূরসম্পর্কের নানা আহমেদ আলী বলেন, সবারই টানাপোড়েনের সংসার। তার ওপর নাতিটা (আবির) প্রতিবন্ধী। সব মিলিয়ে সামনে অন্ধকার দেখছেন তিনি। তবে আল্লাহ নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
দুপুর দেড়টার দিকে কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে কথা হয় জেরিন-আবিরের দাদি সামছুন্নাহারের সঙ্গে। তিনি কাঁদছিলেন। কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, আল্লাহ ছাড়া তাঁর নাতি-নাতনিকে দেখার কেউ রইল না। তিনিও সমাজের সবার কাছে তাদের জন্য সহায়তা কামনা করেন।
ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম মিলন বলেন, একসঙ্গে মা-বাবার আত্মহত্যা ছোট শিশুদের ওপর নেতিবচাক মানসিক চাপ তৈরি করেছে। শিশু দুটির প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। তিনি সরকারের প্রতি তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে ও স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি অধিক যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।
আশুগঞ্জের ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। শিশু দুটির পাশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন রয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিধি অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।