সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে
Published: 30th, May 2025 GMT
জাতীয় বাজেট হলো সরকারের এক বছরের আর্থিক পরিকল্পনা। আগামী ২ জুন সোমবার অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। সমৃদ্ধির এবারের আয়োজন সাজানো হয়েছে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। মূলত এসব কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা আনতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ বাড়ানো হবে, তবে বিদ্যমান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মসূচি বাতিল হতে পারে।
বর্তমানে যেখানে ১৪০টি কর্মসূচি আছে, সেখানে নতুন ব্যবস্থায় ১০০টির নিচে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে ৩৮টি কর্মসূচিকে ‘দরিদ্রবান্ধব’ হিসেবে ধরা হবে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর পরামর্শ অনুযায়ী করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই ৩৮টি কর্মসূচির সহায়তা মূলত অতিদরিদ্রের জন্য নির্ধারিত থাকবে।
মূলত নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। রাজনৈতিক সরকারগুলো বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্য সামঞ্জস্যহীন অনেক কর্মসূচি এর আওতায় নিয়ে আসে। সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। এমন ২১টি কর্মসূচিকে গরিব মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্স। এসব কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৭২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা; যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ৫৩ শতাংশ।
সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) সঙ্গে এ কর্মসূচিগুলোর মিলও নেই। তাই সামঞ্জস্যহীন কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করে টাস্কফোর্স। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। শুধু টাস্কফোর্সই নয়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতিবিদরা বহুদিন থেকে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে। এ পরামর্শের আলোকে এ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে সরকার।
অর্থ বিভাগ বলছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অসুপাতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল। বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০০টির নিচে কর্মসূচিতে সরকার প্রায় ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে, যা মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্য কর্মসূচিগুলোও আগামী বাজেটেও অন্য খাতে বহাল রাখা হবে। সেগুলো একসঙ্গে যোগ করলে এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দ দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
কিছু কর্মসূচিতে ভাতা ও উপকারভোগী বাড়ছে
নগদ সহায়তা কিছু কর্মসূচির অধীনে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে মাসিক ভাতা মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। অতিদরিদ্রদের জন্য ৩৮টি প্রকল্পে সরকার আগামী বাজেটে প্রায় ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।
এ কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ভাতার দিক থেকে সবচেয়ে বড় পরিসর বয়স্কভাতা কর্মসূচি, যা ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে চালু হয়েছিল দরিদ্র এবং আয়ক্ষমতা হারানো বৃদ্ধদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এই কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হবে। ২০২৩ সালে এই ভাতা ছিল ৬০০ টাকা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও যা বাড়ানো হয়নি। পরবর্তী বাজেটে বয়স্কভাতা কর্মসূচিতে নতুন করে ১ লাখ উপকারভোগী যুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ ১ হাজার।
বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ নারীদের মাসিক ভাতা আগামী বাজেটে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হবে এবং নতুন ১ লাখ ২৫ হাজার নারী এতে যুক্ত হবেন। বর্তমানে উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হবে। এ ছাড়া ২ লাখ নতুন উপকারভোগী যুক্ত হবেন। অন্যদিকে বেদে, হিজড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা মাসে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা করে ভাতা পেতে পারেন। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিতে মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এই কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ১৭ লাখ ৭১ হাজারে উন্নীত হতে পারে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে সরকার ৫৫ লাখ পরিবারকে স্বল্প মূল্যে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যেখানে ১০ লাখ টন চাল বিতরণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার টন চাল বরাদ্দ ছিল। পরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছর পরিবারগুলো ৫ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস ধরে ৩০ কেজি চাল স্বল্পমূল্যে কিনতে পারবে।
অতিদারিদ্র্যপীড়িতদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে উপকারভোগীরা বছরে সর্বোচ্চ ৪০ দিন দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি পান। আগামী বাজেটে দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকায় উন্নীত করা হতে পারে এবং উপকারভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ১৮ হাজার থেকে বেড়ে ৬ লাখে পৌঁছাতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দর দ র বর দ দ ৫০ ট ক স রক ষ র জন য র আওত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেট কী এবং কীভাবে দেওয়া হয়
আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এবারের বাজেট বিভিন্ন কারণে ব্যতিক্রম। বাজেট উপস্থাপন ও পাস হয় জাতীয় সংসদে। এখন সংসদ নেই। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত রাজনৈতিক সরকারের পতন হওয়ায় দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ কারণে এবারের বাজেট সংসদে উপস্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাজেট বক্তব্য ঘোষণা করবেন। সংসদ না থাকায় এবার রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট পাস হবে।
সংসদ থাকলে বাজেটে বরাদ্দের অংশটি ব্যয় নির্দিষ্টকরণ বিল হিসেবে সংসদে উপস্থাপিত হয়। যখন এই বিল পাস হয় তখন তা আইনে পরিণত হয়। অন্যদিকে সরকারের কর আহরণ সম্পর্কিত প্রস্তাব অর্থবিল আকারে সংসদে উপস্থাপিত হয়, যা সংসদে আলোচনার পর অর্থ আইন হিসেবে পাস হয়।
এবার সংসদ না থাকায় দুই ক্ষেত্রেই অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবের পর মতামত দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে। মতামত নেওয়ার পর জুন মাসের শেষ দিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবের প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে। এরপর চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি হবে।
বাজেটের বিভিন্ন পরিসংখ্যান সম্পর্কে অনেকের জানার আগ্রহ থাকে। কর নিয়ে আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। বাজেটের পদক্ষেপের কারণে কোন পণ্যের দাম বাড়বে কিংবা কোন পণ্যের দাম কমবে– এমন খবর জানার জন্য অপেক্ষায় থাকেন অনেকে। যিনি আয়কর করদাতা তাঁর চিন্তা থাকে আগামীতে তাঁর আরও বেশি কর দিতে হবে কিনা।
বাজেট মূলত একটি অর্থবছরে সরকারের আয় এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তি যেমন আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা করেন এবং বিভিন্ন খাত নির্দিষ্ট করেন, রাষ্ট্র ঠিক একইভাবে করে। ব্যক্তির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ঋণ করেন। সরকারও তাই করে। আবার পরবর্তী সময়ে আয় থেকে ঋণ পরিশোধ করে। সরকারকে আয় করতে হয় জনগণের কাছ থেকে। আবার ব্যয়ও করতে হয় জনগণের কল্যাণে। অন্যদিকে ঋণ করে দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। বিদেশি সরকার ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও সরকার ঋণ করে।
বাজেট কেন দিতে হয়
দেশের সংবিধানেই বাজেট দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৮৭ অনুচ্ছেদে উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার যেসব কাজে অর্থ ব্যয় করবে এবং যেসব উৎস থেকে আয় বা প্রাপ্তি ঘটবে, তার কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বাজেটকে বলা হয়েছে বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে ওই বিবৃতিকে ‘বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বাজেটের ক্ষেত্রে বছর বলতে অর্থবছর। অর্থবছরের শুরু ১ জুলাই এবং শেষ পরের বছরের ৩০ জুন। বাজেট প্রণয়নের আইনি কাঠামো দিতে ২০০৯ সালে কার্যকর হয় বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন।
যেভাবে তৈরি হয়
অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট তৈরি করে থাকে। এ জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে। মার্চ মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এবং মতামত নিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং পরের অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনের প্রথম সংস্করণ
চূড়ান্ত করে। এর আগে জানুয়ারি মাসে প্রতিটি মন্ত্রণালয় পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটের জন্য নিজেদের ব্যয় পরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জুন মাসে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশের সময় সরকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দলিল প্রকাশ করে।
মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো
বাংলাদেশে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর মেয়াদ তিন বছর। এতে তিন বছরের ব্যয় পরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ থাকে এবং পরবর্তী দুই অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ থাকে। প্রক্ষেপণ পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন হয়। মধ্যমেয়াদে সরকারের কৌশলগত অগ্রাধিকার এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি’ নামে একটি বাজেট দলিলে থাকে। এই দলিলে অর্থ মন্ত্রণালয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মধ্যমেয়াদি দৃশ্যকল্প উপস্থাপন করে। রাজস্ব আদায়ের দৃশ্যপট এবং আহরণ কৌশল জানায়। এ ছাড়া সরকারি ব্যয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তুলে ধরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি সম্পর্কে সরকারের বিবৃতি থাকে।
বাজেট প্রাক্কলন
বাজেট প্রাক্কলন হলো একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন। বাজেটের দুটি অংশ থাকে। একটি হলো পরিচালন এবং অন্যটি হলো উন্নয়ন। উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি।
বাংলাদেশের বাজেটে সব সময় ঘাটতি থাকে। কারণ সরকারের যে পরিমাণ আয় হয়, তা দিয়ে ব্যয়ের চাহিদা পূরণ হয় না। এ কারণে ঋণ গ্রহণেরও প্রাক্কলন করে সরকার। উদাহরণস্বরূপ– কোনো একটি অর্থবছরে যদি সরকার ৮ লাখ টাকা ব্যয় এবং ৫ লাখ টাকা আয়ের প্রাক্কলন করে, তাহলে যে ৩ লাখ টাকা ঘাটতি থাকবে, তা সরকার ঋণের মাধ্যমে পূরণের পরিকল্পনা জানায়। সরকার অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি অর্থায়ন থেকে ঘাটতি মেটায়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের বড় অংশ হলো সঞ্চয়পত্র। সরকারের সঞ্চয়পত্রে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে। সরকার তাদের মুনাফা দেয়।
সম্পূরক বাজেট
কোনো অর্থবছরে যদি কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে নতুন বাজেটের সঙ্গে আগের বাজেটের সম্পূরক ব্যয় বিবৃতি আকারে উপস্থাপন করতে হয়। বরাদ্দের চেয়ে ব্যয় কম হলে তার জন্য সংসদের অনুমোদন লাগে না। বেশি হলে অনুমোদন লাগে। যদিও জুন মাসের প্রথম দিকে যখন বাজেট পেশ করা হয়, তখন অর্থবছর শেষ হয় না। তবে মে মাস পর্যন্ত ব্যয়ের গতিধারা দেখে বোঝা যায়, কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য বরাদ্দের বেশি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। প্রকৃত খরচ এর সঙ্গে হেরফের হতে পারে। পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট পাসের সময় চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়।
বাজেট বক্তব্য
অর্থমন্ত্রী কিংবা অর্থ উপদেষ্টা বাজেটের বিষয়ে একটি বক্তব্য দেন, যাকে বাজেট বক্তৃতা বলে। বাজেট বক্তৃতার দুটি অংশ। প্রথম অংশে দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা থাকে। বিগত এক বছরে সরকারের অর্থনৈতিক কর্ম সম্পাদনের বিবরণ, সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচির বর্ণনা থাকে। দ্বিতীয় অংশে থাকে কর-সংক্রান্ত পদক্ষেপ; যা অর্থবিল আকারে উপস্থাপিত হয়।