Prothomalo:
2025-07-30@16:09:12 GMT

পশ্চিমকে ভাগ করছে কারা

Published: 3rd, June 2025 GMT

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের দেশগুলোকে নিশানা করে যেভাবে বিষোদ্‌গার করলেন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই মাসে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট  জেলেনস্কিকে যেভাবে অপমান করলেন, তা দেখে ইউরোপীয়রা একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছেন। সেই কঠিন বাস্তবতা হলো ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো আর ইউরোপের পক্ষে নেই।

নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্প আগের মতোই খিটখিটে স্বভাব ধরে রেখেছেন। তাঁর মধ্যে নীতিগত বিষয়ে উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতাও আগের মতো আছে। বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করার বিষয়ে তিনি বরাবরের মতোই রাখঢাক করেন না। তবে সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কারণ, পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছেন না। ট্রাম্পের মুখে পুতিনের সমালোচনা তাঁর (ট্রাম্পের) হতাশারই ইঙ্গিত দেয়।

একইভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছেন এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করছেন। সবকিছু মিলিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে ট্রান্স–আটলান্টিক অর্থাৎ ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে থাকা জোট এখন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ বা দেশগুলোর নেতাদের দিকেই ট্রাম্পের আক্রমণ সীমাবদ্ধ নেই; বরং পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাঁর টার্গেটে পড়ে গেছে।

ট্রাম্প ইইউকে ঘৃণা করেন। কারণ, এটি একটি অতিরাষ্ট্রভিত্তিক (সুপারন্যাশনাল) উদারপন্থী প্রকল্প। এটি ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প মনে করেন, ইইউ ও ন্যাটো ইউরোপের দেশগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে যদি কেউ এই ট্রান্স–আটলান্টিক বিভাজনকে শুধু ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, তাহলে ভুল হবে। কারণ, এই বিভাজন আসলে আদর্শগত।

একদিকে রয়েছে ট্রাম্প ও তাঁর ইউরোপীয় মিত্রদের নেতৃত্বাধীন এক উগ্র, অ-উদারপন্থী প্রকল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পশ্চিমা বিশ্বের চালিকা শক্তি হয়ে ওঠা আঠারো শতকের আলোকিত যুগের আদর্শ বা উদার গণতন্ত্র রক্ষা করতে যারা বদ্ধপরিকর, তারা এই বিভাজনের অন্য দিকে রয়েছে।

ট্রাম্পের সরকার ও তাঁর সমর্থকেরা যেসব মতাদর্শ ছড়ান (যেমন জাতীয়তাবাদী জনতাবাদ বা সিলিকন ভ্যালির মতো স্বাধীন বাজারভিত্তিক রাজনীতি), সেগুলোর প্রভাব ইউরোপেও পড়েছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান, স্লোভাকিয়ার রবার্ট ফিতসো, ইতালির জর্জিয়া মেলোনির মতো নেতারা (যদিও মেলোনি ক্ষমতায় আসার পর একটু মেপে কথা বলছেন) এখন এ ধরনের উদারতাবিরোধী চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করছেন। তবে এটাও ঠিক যে রোমানিয়ার মানুষ সম্প্রতি কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী জর্জ সিমিয়নকে প্রত্যাখ্যান করে ইইউপন্থী উদার ঘরানার প্রার্থী নিকুশোর দানকে সমর্থন দিয়েছেন।

ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো অস্থির। পোল্যান্ডে ভোটাররা শিগগিরই কট্টর ডানপন্থী ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সমর্থিত একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন। রোমানিয়ার নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল ব্যাপক এবং এ বিষয়ে অনেক প্রমাণও রয়েছে।

ইউরোপের রাজনৈতিক বিভাজনের অন্য পাশে রয়েছেন সেসব নেতা, যাঁরা উদার গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে আছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (যাঁর দল সম্প্রতি বড় জয় পেয়ে টানা ১৪ বছরের কনজারভেটিভ শাসনের অবসান ঘটিয়েছে), পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এই ঘরানার নেতা। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের ঘনিষ্ঠ আদর্শিক সমতুল্য হচ্ছেন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান ও উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা। তবে কিনা মধ্যপন্থী রিপাবলিকানরা এখন রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় হারিয়েই গেছেন। আর উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর থেকে দিশেহারা, বিভক্ত এবং নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছেন।

যখন উদার গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা শিবির নিজেদের পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, তখন তাদের বিপরীতপন্থী অ–উদারপন্থী প্রতিপক্ষরা অনেক বেশি সংগঠিত হয়ে উঠছে। বহু বছর ধরে আটলান্টিকের দুই পারের কট্টর ডানপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকেরা অভিবাসন ও পশ্চিমা সমাজের কথিত নৈতিক পতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে ঘন ঘন আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তবে এ পর্যন্ত একটি আন্ত–আটলান্টিক ‘জনতাবাদী আন্তর্জাতিক’ জোট গড়ার প্রচেষ্টায় খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ, এসব গোষ্ঠীর ব্যবহারিক স্বার্থ একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

উদারপন্থী চিন্তাবিদেরা ততটা কৌশলগত লক্ষ্য ও সংহতি দেখাতে পারেননি, যতটা তাঁদের অ–উদারপন্থী প্রতিপক্ষরা দেখিয়েছেন। বহু দশক ধরে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক ও স্বাভাবিক ধারায় গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রনায়কেরা একে অপরের দেশে সফরে গিয়ে বারবার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এখন ট্রাম্প, ওরবানসহ চরম ডানপন্থী স্বৈরশাসকদের উত্থানে আগের মতো করে ভাবা যাচ্ছে না। যাঁরা উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁদের এখন আবার মূল নীতিগুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তরুণ ভোটারদের কীভাবে বোঝানো যায় যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন স্বৈরশাসকের মোহের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান; কীভাবে এমন অর্থনৈতিক নীতি তৈরি করা সম্ভব, যা শ্রমজীবীদের রক্ষা করবে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করবে না; অভিবাসন চাপ মোকাবিলায় উদারপন্থীরা কীভাবে সাড়া দেবে—এসব বিষয় সেই আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে।

এসব প্রশ্ন নিয়ে আটলান্টিকের দুই পারে খোলামেলা আলোচনা উদার আদর্শকে পুনর্জীবিত করতে পারে।

লরেন্স নার্ডন ইনস্টিটিউট ফ্রঁসেই দে রেলেশন ইন্টারন্যাশনালেসের আমেরিকা প্রোগ্রামের প্রধান

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আটল ন ট ক র জন ত ক ইউর প র ইউর প য় ড নপন থ ব ভ জন সমর থ আদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে

দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

২০২৪ সালের ২৭ অগাস্ট শাহবাগ থানায় দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। 

গত ২৪ জুলাই সকালে ঢাকার ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক এ প্রধান বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।  

সম্প্রতি তার গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি দাবি করেছে, ‘বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর’ তিনি।

খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২০১১ সালের ১৭ মে বয়স অনুযায়ী অবসর গ্রহণ করেন। বিচারপতি হিসেবে তার সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত রায় ছিল সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। ওই রায়ের পর দেশে আর কোনো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়নি।

বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১১ সালে এই রায় ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থি। এরপর থেকে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই সরকারে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, এই রায়ের মধ্য দিয়েই দেশে একতরফা নির্বাচন ও গণতন্ত্রহীনতার ভিত্তি তৈরি হয়।

২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে তিনি আইন সংস্কার সংক্রান্ত নানা প্রস্তাব ও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময় আইনি সেমিনার, বক্তৃতা এবং পরামর্শমূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী ও মহলগুলো তাকে ‘সংবিধান রক্ষার সাহসী রূপকার’ হিসেবে অভিহিত করলেও, বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মতে তিনি ‘বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণের পথপ্রদর্শক’। 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বলেছে, ‘তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে তিনি দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন।’

ঢাকা/কেএন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে
  • বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব‍্যবস্থা না হলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে: এবি পার্টি
  • মানুষ ঠিকমতো ইভিএম বোঝে না, পিআর বুঝবে কী করে: মির্জা ফখরুল
  • স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় নাগরিকেরা কোথায়