Prothomalo:
2025-06-05@11:36:15 GMT

পশ্চিমকে ভাগ করছে কারা

Published: 3rd, June 2025 GMT

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের দেশগুলোকে নিশানা করে যেভাবে বিষোদ্‌গার করলেন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই মাসে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট  জেলেনস্কিকে যেভাবে অপমান করলেন, তা দেখে ইউরোপীয়রা একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছেন। সেই কঠিন বাস্তবতা হলো ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো আর ইউরোপের পক্ষে নেই।

নিশ্চিতভাবেই ট্রাম্প আগের মতোই খিটখিটে স্বভাব ধরে রেখেছেন। তাঁর মধ্যে নীতিগত বিষয়ে উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতাও আগের মতো আছে। বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করার বিষয়ে তিনি বরাবরের মতোই রাখঢাক করেন না। তবে সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কারণ, পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছেন না। ট্রাম্পের মুখে পুতিনের সমালোচনা তাঁর (ট্রাম্পের) হতাশারই ইঙ্গিত দেয়।

একইভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছেন এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করছেন। সবকিছু মিলিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে ট্রান্স–আটলান্টিক অর্থাৎ ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে থাকা জোট এখন এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ বা দেশগুলোর নেতাদের দিকেই ট্রাম্পের আক্রমণ সীমাবদ্ধ নেই; বরং পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাঁর টার্গেটে পড়ে গেছে।

ট্রাম্প ইইউকে ঘৃণা করেন। কারণ, এটি একটি অতিরাষ্ট্রভিত্তিক (সুপারন্যাশনাল) উদারপন্থী প্রকল্প। এটি ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প মনে করেন, ইইউ ও ন্যাটো ইউরোপের দেশগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে যদি কেউ এই ট্রান্স–আটলান্টিক বিভাজনকে শুধু ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, তাহলে ভুল হবে। কারণ, এই বিভাজন আসলে আদর্শগত।

একদিকে রয়েছে ট্রাম্প ও তাঁর ইউরোপীয় মিত্রদের নেতৃত্বাধীন এক উগ্র, অ-উদারপন্থী প্রকল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পশ্চিমা বিশ্বের চালিকা শক্তি হয়ে ওঠা আঠারো শতকের আলোকিত যুগের আদর্শ বা উদার গণতন্ত্র রক্ষা করতে যারা বদ্ধপরিকর, তারা এই বিভাজনের অন্য দিকে রয়েছে।

ট্রাম্পের সরকার ও তাঁর সমর্থকেরা যেসব মতাদর্শ ছড়ান (যেমন জাতীয়তাবাদী জনতাবাদ বা সিলিকন ভ্যালির মতো স্বাধীন বাজারভিত্তিক রাজনীতি), সেগুলোর প্রভাব ইউরোপেও পড়েছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান, স্লোভাকিয়ার রবার্ট ফিতসো, ইতালির জর্জিয়া মেলোনির মতো নেতারা (যদিও মেলোনি ক্ষমতায় আসার পর একটু মেপে কথা বলছেন) এখন এ ধরনের উদারতাবিরোধী চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করছেন। তবে এটাও ঠিক যে রোমানিয়ার মানুষ সম্প্রতি কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী জর্জ সিমিয়নকে প্রত্যাখ্যান করে ইইউপন্থী উদার ঘরানার প্রার্থী নিকুশোর দানকে সমর্থন দিয়েছেন।

ইউরোপের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো অস্থির। পোল্যান্ডে ভোটাররা শিগগিরই কট্টর ডানপন্থী ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সমর্থিত একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন। রোমানিয়ার নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল ব্যাপক এবং এ বিষয়ে অনেক প্রমাণও রয়েছে।

ইউরোপের রাজনৈতিক বিভাজনের অন্য পাশে রয়েছেন সেসব নেতা, যাঁরা উদার গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে আছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (যাঁর দল সম্প্রতি বড় জয় পেয়ে টানা ১৪ বছরের কনজারভেটিভ শাসনের অবসান ঘটিয়েছে), পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এই ঘরানার নেতা। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের ঘনিষ্ঠ আদর্শিক সমতুল্য হচ্ছেন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান ও উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা। তবে কিনা মধ্যপন্থী রিপাবলিকানরা এখন রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় হারিয়েই গেছেন। আর উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর থেকে দিশেহারা, বিভক্ত এবং নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছেন।

যখন উদার গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা শিবির নিজেদের পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, তখন তাদের বিপরীতপন্থী অ–উদারপন্থী প্রতিপক্ষরা অনেক বেশি সংগঠিত হয়ে উঠছে। বহু বছর ধরে আটলান্টিকের দুই পারের কট্টর ডানপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকেরা অভিবাসন ও পশ্চিমা সমাজের কথিত নৈতিক পতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে ঘন ঘন আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তবে এ পর্যন্ত একটি আন্ত–আটলান্টিক ‘জনতাবাদী আন্তর্জাতিক’ জোট গড়ার প্রচেষ্টায় খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ, এসব গোষ্ঠীর ব্যবহারিক স্বার্থ একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

উদারপন্থী চিন্তাবিদেরা ততটা কৌশলগত লক্ষ্য ও সংহতি দেখাতে পারেননি, যতটা তাঁদের অ–উদারপন্থী প্রতিপক্ষরা দেখিয়েছেন। বহু দশক ধরে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক ও স্বাভাবিক ধারায় গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রনায়কেরা একে অপরের দেশে সফরে গিয়ে বারবার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এখন ট্রাম্প, ওরবানসহ চরম ডানপন্থী স্বৈরশাসকদের উত্থানে আগের মতো করে ভাবা যাচ্ছে না। যাঁরা উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁদের এখন আবার মূল নীতিগুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তরুণ ভোটারদের কীভাবে বোঝানো যায় যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন স্বৈরশাসকের মোহের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান; কীভাবে এমন অর্থনৈতিক নীতি তৈরি করা সম্ভব, যা শ্রমজীবীদের রক্ষা করবে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করবে না; অভিবাসন চাপ মোকাবিলায় উদারপন্থীরা কীভাবে সাড়া দেবে—এসব বিষয় সেই আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে।

এসব প্রশ্ন নিয়ে আটলান্টিকের দুই পারে খোলামেলা আলোচনা উদার আদর্শকে পুনর্জীবিত করতে পারে।

লরেন্স নার্ডন ইনস্টিটিউট ফ্রঁসেই দে রেলেশন ইন্টারন্যাশনালেসের আমেরিকা প্রোগ্রামের প্রধান

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আটল ন ট ক র জন ত ক ইউর প র ইউর প য় ড নপন থ ব ভ জন সমর থ আদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পদত্যাগ করেছেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

সংসদে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন-এরদেন লুভসান্নামসরাই পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) সংসদীয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। 

মঙ্গোলীয় সংবাদমাধ্যম আইকন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী ওয়ুন-এরদেন লুভসান্নামসরাই ৪৪টি ভোট পেয়েছেন, যা প্রয়োজনীয় ৬৪টি ভোটের চেয়ে অনেক কম।

দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ুন-এরদেনের বিরুদ্ধে রাজধানী উলানবাটরে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার ভোরে এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

রাইজিংবিডিতে সংবাদ: ঢাবির সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ১৬ নেতার পদত্যাগ

ভোটের আগে, ওয়ুন সতর্ক করে বলেছিলেন, “ভোটের ফলে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে এবং মঙ্গোলিয়ার নতুন গণতন্ত্রকে নাড়া দিতে পারে।”

তিনি বলেন, “যদি শাসনব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে আসতে না পারে, তাহলে এটি সংসদীয় শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা হারাতে পারে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থাকে পতনের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”

তিনি তার সততার পক্ষে কথা বলেন কিন্তু একটি ভুল স্বীকার করেছেন যে, “বড় প্রকল্পগুলোতে খুব বেশি সময় ব্যয় করা এবং সামাজিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে পর্যাপ্ত মনোযোগ না দেওয়া।”

ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর পার্লামেন্টে ওয়ুন-এরদেন বলেন, “মহামারি, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক চাপের সময় দেশের ও জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য ছিল এক গর্বের বিষয়।”

মঙ্গোলিয়ার সংসদীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ওয়ুন-এরদেন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, যা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

ওয়ুন-এরদেন চার বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গত বছর, নির্বাচনী সংস্কারের পর সংসদের আসন সংখ্যা ৭৬ থেকে বাড়িয়ে ১২৬ করা হয়েছিল। এর ফলে একটি জোট সরকার গঠিত হয়।

রাশিয়া ও চীনের মধ্যে স্থলবেষ্টিত মঙ্গোলিয়া তার দলীয়-রাষ্ট্র যুগের পরে আরো গণতান্ত্রিক হওয়ার জন্য লড়াই করে আসছে। 

দেশটির অনেক নাগরিক বিশ্বাস করেন, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা কয়লা খনি খাতের উল্লম্ফনের সুফল সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী ভোগ করছে। আর সাধারণ জনগণ হচ্ছে বঞ্চিত।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ওয়ুন-এরদেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে মঙ্গোলিয়ার দুর্নীতি আরো বেড়েছে। 

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভারত ও উদীয়মান এশিয়ান অর্থনীতির ডেপুটি ডিরেক্টর এবং সিনিয়র ফেলো এরিন মারফির মতে, “গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করা খুবই কঠিন, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন মঙ্গোলিয়াকে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোও মোকাবিলা করতে হবে, যা জনগণের হতাশার একটি প্রধান উৎস।”

তিনি বলেন, “আমাদের এখন দেখতে হবে পরবর্তীতে কী ঘটে এবং নতুন সরকার কীভাবে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করে।

মারফি বলেন, “যদিও মঙ্গোলিয়ায় গণতন্ত্র এখনো বিকশিত হয়নি, কিন্তু এটি শিকড় গাড়ছে।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গতা পায় না
  • আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পদত্যাগ করেছেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
  • পুশইনে পেখম খুলে যাচ্ছে ময়ূররূপী কাকের!