বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আরও ৬৯ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ঠেলে দেওয়া প্রত্যেককে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে বিজিবি। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
গত সোমবার গভীর রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। সকালে তাদের আটক করেন ওই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। পরে ঘাগড়া বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা আটকদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। একই সময় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের রতনীবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া হয় ১৭ জনকে। তাদের আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। পুলিশ ও বিজিবি জানায়, ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে কাজ করতেন। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সূর্যপুর সীমান্ত ও ধোবাউড়ার মুন্সিপাড়া সীমান্ত দিয়ে ২২ জনকে গতকাল ভোরে ঠেলে পাঠানো হয়। বিজিবি জানায়, তারা অনেক বছর ধরে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সায়ন এলাকায় কাজ করতেন। একই ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৩ জনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এই ১৩ জন দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে বসবাস করছিলেন। বিজিবি তাদের পুলিশের সহায়তায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয় আটজনকে। তাদের আটক করেন ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এর মধ্যে চার নারী ও চারজন পুরুষ। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি। আটকদের ভোলাহাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম রেলস্টেশন থেকে দুই ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান মিলেছে। গত সোমবার রাতে স্থানীয় লোকজন তাদের শনাক্ত করে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ওই দুই ভারতীয় রেলস্টেশনে অবস্থান করেছিলেন।
জানা গেছে, তাদের একজন ৭৪ বছর বয়সী ইউসুফ আলী দেশটির আসাম রাজ্যের দরং জেলার চেপাজা থানার বাসিন্দা। অন্যজন ৬৫ বছরের শামসুল হকের বাড়ি ওই রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলার বিজনী থানায়। ইউসুফ আলী জানান, আট দিন আগে আরও লোকজনের সঙ্গে তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, দুই ভারতীয়র ব্যাপারে পাটগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারকে জানিয়েছি। তারা রেলস্টেশনে পুলিশের নজরদারিতে আছে।
৯ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর
ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৯ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। সোমবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার কলারোয়ার ভাদিয়ালী সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ছয়জনকে হস্তান্তর করা হয়। বিজিবি তাদের কলারোয়া থানায় হস্তান্তর করেছে।
এ ছাড়া নেত্রকোনা সীমান্তে তিন বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল সকালে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিজয়পুর সীমান্তের ১১৫২/এমপি পিলারের কাছে শূন্যরেখায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করে বিএসএফ।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর)
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশের ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষানির্ভর তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রিজ কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামের (এসআইসিআইপি) আওতায়। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
আজ সোমবার রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে এসআইসিআইপি ও পিকেএসএফের প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী তরুণেরা ১২টি খাতের প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে থাকা-খাওয়ার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণেরা। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারীদের আত্মকর্মসংস্থান বা মজুরিভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। এটি একই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। প্রকল্পের আওতায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত কোর্স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা সহজেই কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ১২ হাজার ছাড়াও আরও ৮ হাজার ৫০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ২ হাজার এতিম ও দুস্থ তরুণকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বক্তব্য দেন।