‘বন্দুকের মুখে আমাকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়’
Published: 5th, June 2025 GMT
সোনা বানুর গা এখনো শিউরে ওঠে। গত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, তা ভাবতেই তাঁর হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাসিন্দা সোনা বানুর বয়স ৫৮ বছর। গত ২৫ মে তাঁকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ডেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনিসহ মোট ১৪ জনকে ঠেলে (পুশ ইন) পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে কেন পাঠানো হলো, সে সম্পর্কে সোনা বানুকে কিছুই জানানো হয়নি। কিন্তু এই ভীতিকর পরিস্থিতি তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। আসামে সারা জীবন ধরেই তাঁকে এমন অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সোনা বানুকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তিনি একজন ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ নন।
ঘটনা নিয়ে সোনা বানু বলছিলেন, ‘তারা আমাকে বন্দুকের মুখে ঠেলে পাঠিয়েছে। একটি মাঠের মাঝখানে হাঁটুসমান পানিতে টানা দু’দিন আমাকে পানি ও খাবার ছাড়াই কাটাতে হয়েছে। সেখানে ছিল মশা আর জোঁকের উপদ্রব।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী শূন্যরেখায় এভাবে দু’দিন কাটানোর পর তাঁকে বাংলাদেশের অংশে একটি পুরোনো কারাগারে নেওয়া হয়।
এই কারাগারে সোনা বানুসহ অন্যরা দু’দিন কাটানোর পর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আবার তাঁদের সীমান্তে নিয়ে যান। সেখানে ভারতীয় কর্মকর্তারা তাঁদের গ্রহণ করেন এবং বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তবে তিনি একটি বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন, আর তা হলো–তাঁর সঙ্গে যাদের আবার ভারতে ফেরত নেওয়া হয়েছে, সেই দলে তাঁর সঙ্গে প্রথমে যাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল–তাঁরা রয়েছেন কীনা।
এটা পরিস্কার নয় যে সোনা বানুকে কেন হঠাৎ বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে, আবার কেনইবা তাঁকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা ঘটনাপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ‘অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত বিদেশিদের ধরপাকড় করেছেন আসামের কর্মকর্তারা এবং তাঁদের সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠিয়েছেন। বিবিসি অন্তত এমন ছয়টি ঘটনা জানতে পেরেছে, যেখানে লোকজন বলেছেন যে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাঁদের সীমান্তবর্তী শহরে নিয়ে ‘সীমানা পার’ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আসাম পুলিশ ও রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল বিবিসি। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ থেকে আসা সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান, ভারতে এখন নতুন কিছু নয়। দুই দেশের সীমন্ত এলাকার আয়তন ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার (২,৫৪৫ মাইল)। ফলে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া তুলনামূলক সহজ কাজ। যদিও অনেক সংবেদনশীল সীমান্ত রয়েছে, যেখানে কড়াকড়ি পাহারা আছে।
বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এমন আইনজীবীরা বলছেন, কাউকে হঠাৎ বাড়ি থেকে ধরে এনে যথাযাথ প্রক্রিয়া ছাড়াই অন্য দেশে ঠেলে পাঠানোটা দুর্লভ ঘটনা। অথচ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই প্রবণতা বেড়েছে।
ঠিক কত সংখ্যক লোককে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু বলেনি। তবে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ সূত্রগুলো দাবি করেছে, ভারত শুধু মে মাসেই অন্তত ১২ শতাধিত লোককে ‘অবৈধভাবে ঠেলে’ পাঠিয়েছে। শুধু আসাম থেকে নয়, অন্যান্য রাজ্য থেকেও পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তারা বলেছেন, এর মধ্যে ১০০ লোককে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ভারত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের ঘটনা রোধে তাঁরা সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ‘অবৈধ অভিবাসী’সহ অন্য রাজ্যগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও সাম্প্রতিক অভিযান আসামে পরিস্থিতি জটিল ও উত্তেজনাকর করে তুলেছে। স্থানীয় রাজনীতিতে নাগরিক ও জাতিগত পরিচয়ের ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় তিন শ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে আসামের। কাজের সন্ধানে অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে এই রাজ্যে অভিবাসন বেড়েছে। বিষয়টি আসামের লোকজনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাঁদের অনেকই আশঙ্কা করছেন, এর ফলে এখানকার জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ঘটছে এবং স্থানীয়দের হাত থেকে সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রে ও আসামে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বারবার অবৈধ অভিবাসীদের সমস্যাটি সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে আসছে। এ জন্য তারা রাজ্যের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই তালিতায় তাঁরাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন, যারা প্রমাণ করতে পারবেন যে তাঁরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে এখানে এসেছেন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।
এনআরসি তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ যাওয়ায় এটি বারবার যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের যথার্থ কাগজাদি হাজির করে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত একটা বিশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে আসামের প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা বাদ পড়ে যায়। তাঁদের অনেককে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে রাখা হয়েছে। আর অন্যরা এই তালিকা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সোনা বানু জানিয়েছেন, তাঁর আবেদনটি এখনো সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে সীমানা ছাড়া করতে বাধ্য করেছে। তাঁর মতো আসামের আরও অন্তত ছয়জনের সন্ধান পেয়েছে বিবিসি, যাঁদের সবার গল্পই এক। তাঁরা সবাই মুসলিম। তাঁরা জানিয়েছেন, যে সময়টায় সোনা বানুর ঘটনাটি ঘটেছে, ঠিক একই সময়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। অথচ তাঁদের প্রত্যেকেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে। তাঁরা কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতে বসবাস করছেন।
আর যাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে চারজন আবার বাড়িতে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এখনো তাঁরা জানেন না, তাঁদের কেন ধরে নেওয়া হয়েছিল।
আসামের মোট জনগোষ্ঠী তিন কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে এক–তৃতীয়াংশ মুসলিম। তাঁদের মধ্যে এমন অনেক অভিবাসী রয়েছেন, যারা ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে বসতি গেড়েছেন।
আসামের বারপেতা এলাকার বাসিন্দা মালেকা খাতুন (৬৭) এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন। সেখানে একটি পরিবার তাঁকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। মালেকা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘এখানে আমার কেউ নেই।’ তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, তিনি ফেরত যেতে পারবেন কীনা, আর পারলেও কখন। এনআরসি ইস্যুতে তিনি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ও রাজ্যের হাইকোর্টে হেরে গেছেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে আপিলও করেননি।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ শুরুর কয়েক দিন পর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘আমরা তাঁদেরই ফেরত পাঠাচ্ছি যারা কীনা বিদেশি হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন আবার আদালতে আবেদনও করেননি।’ তিনি এও দাবি করেছেন, যাদের বিষয়টি এখনো আদালতে নিষ্পত্তি হয়নি, তাঁদের কোনো ‘সমস্যা’ হচ্ছে না।
তবে আসামের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে কাজ করা এই আইনজীবী বলেছেন, ‘যা কিছু হচ্ছে, তা হলো আদালতের আদেশের স্বেচ্ছাচার ও ইচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যা।’
‘জোর করে ও অবৈধভাবে পুশব্যাক নীতি’ বন্ধে হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি ছাত্র সংগঠনের করা আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। কিন্তু তাঁদের এ বিষয়ে প্রথমে আসামের হাইকোর্টে যেতে বলা হয়েছে।
বারপেতা থেকে ১৬৭ কিলোমিটার দূরে মরিগাঁও এলাকার বাসিন্দা রিতা খাতুন। তাঁর স্বামী খায়রুল ইসলাম (৫১) একজন স্কুলশিক্ষক। সোনা বানুকে যখন বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়, সেই গ্রুপে খায়রুল ইসলামও ছিলেন। ২০১৬ সালে তাঁকে বিদেশি বলে ঘোষণা দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর দুই বছর তিনি একটি ডিটেনশেন সেন্টারেও ছিলেন। সোনা বানুর মতো তাঁর আবেদনটিও সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে।
পাশের টেবিল একগাদা কাগজপত্র দেখিয়ে রিতা খাতুন বলছিলেন, ‘প্রতিটি কাগজপত্রে প্রমাণিত যে আমার স্বামী একজন ভারতীয় নাগরিক।’ স্বামীর স্কুলের ও জমির কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর (খায়রুল ইসলাম) নাগরিকত্ব প্রমাণে এগুলো পর্যাপ্ত নয়।’ তিনি বলেন, তাঁর স্বামী, শ্বশুর, দাদাশ্বশুর সবাই ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু গত ২৩ মে পুলিশ এসে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর সীমান্তের শূণ্যরেখায় বাংলাদেশি একজন সাংবাদিকের করা ভিডিও দেখে তাঁরা তাঁর স্বামীকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তাঁরা তখনই কেবল জানতে পেরেছেন, তাঁর স্বামী কোথায় আছেন।
সোনা বানুর মতো খায়রুল ইসলামকেও ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবার থেকে তাঁর ফেরত আসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও এ বিষয়ে পুলিশ ‘কিছুই জানে’ না বলে বিবিসির কাছে দাবি করেছে।
আরেক ভুক্তভোগী আবদুল লতিফ। যে রাতে খায়রুল ইসলামকে তুলে নেওয়া হয়, সেই একই রাতে তাঁকেও তুলে নেওয়া হয়। আবদুল লতিফের মেয়ে সানজিমা বেগম জানান, একটি ভুল পরিচয়ের কারণে তাঁর বাবাকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তিনি বলেন, তাঁর বাবার ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তাঁদের কাছে রয়েছে।
সানজিমা বেগম বলেন, ‘আমার বাবার নাম আবদুল লতিফ। আমার দাদার নাম আবদুল সুবহান। কিন্তু ফরেনার ট্রাইব্যুনাল থেকে এক বছর আগে যে নোটিশ আসে, সেখানে উল্লেখ রয়েছে–আবদুল লতিফ, বাবার নাম শুকুর আলী। কিন্তু তিনি (শুকুর আলী) আমার দাদা নন। এমনকি আমি তাঁকে চিনিও না।’
আবদুল লতিফের পরিবার জানতে পেরেছে যে তিনি বর্তমানে আসামে ফেরত এসেছেন। কিন্তু এখনো বাড়িতে পৌঁছাননি।
যখন এই লোকগুলো আবার বাড়িতে ফেরত আসছেন, তখন তাঁদের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করছে–আবার হঠাৎ তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। যেমনটা সানজিমা বেগম বলছিলেন, ‘আমরা খেলনার বস্তু নই। তাঁরা (ভুক্তভোগী) মানুষ। তাঁদের নিয়ে আপনি যা খুশি তা করতে পারেন না।’ সূত্র: বিবিসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন কর মকর ত র ক গজপত র র পর ব র বলছ ল ন আইনজ ব বল ছ ন আস ম র কর ছ ন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মিনহাজ মান্নান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
এ রায়ের ফলে ওই মামলা থেকে মিনহাজ মান্নান অব্যাহতি পেলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মঈন ফিরোজী।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ওই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নান ইমনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পলাতক অপর চার আসামি হলেন সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী সামিউল ইসলাম খান ওরফে স্যাম ওরফে জুলকার নাইন, আশিক ইমরান ও ওয়াহিদুন নবী।
দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান নারাজি আবেদন দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে মিনহাজ মান্নান একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মিনহাজ মান্নানের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে মিনহাজ মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ মে মামলাটি করা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এতে কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ইসলামকে আসামি করা হয় এবং আটজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন১০ মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর০৪ মার্চ ২০২১এ মামলায় কারাবন্দী মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের সময় ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির ছিলেন দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান। তাঁরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। সেদিন কার্টুনিস্ট কিশোর আদালতে হাজির না থাকায় তাঁর জামিন বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুনআজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত লেখক মুশতাক২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১