ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ: সুপ্রিম কোর্ট
Published: 5th, June 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জানিয়েছেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলার আসল লক্ষ্য ছিল বিচারপতিদের স্বাধীনতাকে সংকটে ফেলা। রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা অক্ষমতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারে।
চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়বস্তু কী ছিল? এটি ছিল কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসকের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট প্রয়াস, যেখানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে কেড়ে নিয়ে সংসদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকেই হুমকির মুখে ফেলা হয়েছিল।
গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ রায়টি ঘোষণা করেন। ৫০ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায় আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষণসহ মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো।
রায়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘যদি কোনো বিচারক তাঁর বিচারিক দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের রোষানল কিংবা অসন্তোষের মুখোমুখি হন, তাহলে সংসদের সদস্যদের কলমের এক খোঁচায় তাঁকে অপসারণ করা সম্ভব, এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মেনে নেওয়া যায়? আমার গভীর বিবেচনায় এবং সহকর্মীদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে এর উত্তর, অত্যন্ত স্পষ্টভাবে, “না”।’
রায়ে আরও বলা হয়, বিচারপতিদের উচিত বিচারিক কাজে রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানো। কারণ, এমন মন্তব্য বিচারকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং তিনি তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে পারেন।
আদালত আরও বলেছেন, বিচারকদের উচিত রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ না করা; কারণ, এতে বিচারব্যবস্থার সুনাম ও স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রায়টিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
এই মামলায় রিটকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সাত সদস্যের আপিল বিভাগ ওই রায় বহাল রাখে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন দায়ের করে, যার নিষ্পত্তি হয় ২০২৪ সালের অক্টোবরে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ রপত দ র র স ব ধ নত ব চ রক
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে ৪ আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে রিট
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করার নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা ছাত্রলীগ নেতার রিট বাতিল
বাগেরহাট প্রেস ক্লাব ও অন্যান্যদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন রিট পিটিশন দাখিল করেন। এছাড়া চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট ১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল একই বিষয়ে পৃথক রিট পিটিশন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “আমরা রিট পিটিশন করেছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন এবং ১০ দিনের রুল জারি করেছেন। আশা করি, আদালতে ন্যায়বিচার পাব এবং বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল থাকবে।”
গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেয় তারা।
তবে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) নির্ধারণ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল