‘সড়কপথে গাড়ি নড়ে না, তীব্র যানজট। তাই ট্রেনেই টিকিট কেটেছি। তবে ট্রেনেও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়াতেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লেন যাত্রীরা। দরজা দিয়ে ঢুকতে না পেরে অনেকে উঠে পড়লেন ছাদে। এই অবস্থায় কোনো মতে পরিবার নিয়ে ট্রেনের মধ্যে উঠলেও নিজের আসনে যেতে আধা ঘণ্টা সময় লাগে।’ জানালা দিয়ে এসব কথা বলছিলেন তেঁতুলিয়ার মুরাদ হোসেন। তবে ট্রেনের এই অবস্থা শুধু পঞ্চগড়গামী এই ট্রেনেই নয়, উত্তরের সব ট্রেনই ছাড়ে যাত্রী বোঝায় করে। 

ঈদযাত্রার শেষদিন শুক্রবার এমন চিত্র দেখা যায় কমলাপুরে। যে যেভাবে পারছেন, ট্রেনে উঠে পড়ছেন। আগাম টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা ট্রেনের ভেতরে দাঁড়িয়ে ও ছাদে যাচ্ছেন।

সকালে রংপুর যাওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছেন কুড়িগ্রামের সুমন মিয়া। সমকালকে তিনি বলেন, ‘বাসে গেলে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারব কিনা জানি না। টিভিতে দেখেছি যারা বৃহস্পতিবার যাত্রা শুরু করেছেন তাদের অনেকেই এখনও পৌছায় নাই। তাই টিকিট না থাকলেও স্টেশনে আসছি। স্ট্যান্ড টিকিটও পাই নাই। রংপুর এক্সপ্রেসের কোনোমতে উঠে যাবো।

পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ছাড়ার সময় সকাল ১০টা হলেও দেড় ঘণ্টা আগেই প্ল্যাটফর্মে আসে ট্রেনটি। দু-একটি বাদে বেশিরভাগ ট্রেনই ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে। সব ট্রেন যাত্রীতে পূর্ণ।

একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী আশরাফুল আলম বলেন, ‘এই ট্রেন প্রতিদিন লেট করে ছাড়ে। কিন্তু এবার ভালোই মনে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন চলে এসেছে।’

অন্যদিকে কক্সবাজারের পথে চলাচল করা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৯টার মধ্যেও ট্রেনটি কমলাপুরে দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসার পথে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এ কারণে ট্রেনটি ছাড়াও সময় দেওয়া হয় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। ট্রেনটির প্রায় আট-নয়শ’ যাত্রী ছিলেন কমলাপুরে অপেক্ষায়।

হুমায়ুন কবির নামে এক যাত্রী বলেন, আমরা ভোর পৌনে ৬টায় এসেছি। এরপর থেকে অপেক্ষায় আছি। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ওই ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। এখন বাজে ৯টা। আমরা প্রায় ১ হাজার মানুষ অপেক্ষায় আছি। ট্রেন কখন আসবে সেটা বলার মতো কেউ নেই।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৯টা ১০মিনিটে ছাড়ার থাকলেও ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্তও সেটি কমলাপুরেই ছিল। কাউনিয়ার যাত্রী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, সকাল পৌনে ১০টায় বলেন, আমরা ৮টার দিকে স্টেশনে চলে এসেছি। কিন্তু ট্রেন এসেছে দেরিতে। তবে এবার অন্য বছরের মতো খুব বেশি দেরি করছে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র কমল প র ট র নট

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ