গীতিকবিতায় মাহমুদ মানজুরের হ্যাটট্রিক
Published: 6th, June 2025 GMT
এক মাসে তিনটি শ্রেষ্ঠ গীতিকবির স্বীকৃতি পেয়েছেন মাহমুদ মানজুর। পেশায় বিনোদন সাংবাদিক হলেও দুই দশক ধরে তিনি সিনেমা, নাটক ও স্বাধীন মাধ্যমে গান রচনা করে আসছেন। নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছেন গীতিকবিদের নিয়ে দেশের একমাত্র সংগঠন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ-এর সঙ্গে।
দুই দশকের গান-ক্যারিয়ারে আগেও স্বীকৃতি পেয়েছেন এই গীতিকবি। তবে এবারের অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা। কারণ, এবার তিনি মে মাসে স্বীকৃতির হ্যাটট্রিক করেছেন। অর্থাৎ এক মাসের ভেতরেই তিনি তিনটি শ্রেষ্ঠ গীতিকবির সম্মাননা পেয়েছেন আলাদা তিনটি সংগঠন থেকে।
এরমধ্যে ২৩ মে সন্ধ্যায় গীতিকবিতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা ‘লাবণ্য অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অর্জন করেছেন মাহমুদ মানজুর। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচার মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি তার হাতে তুলে দেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আলিমুল্লাহ খোকন।
এরপর ২৬ মে রাতে রাজধানীর চার তারকা হোটেল স্কাই সিটিতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ‘এক্সিলেন্স ইন সাকসেস অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ আসরে শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পদক অর্জন করেছেন মাহমুদ মানজুর। তার এই স্বীকৃতি মিলেছে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের নির্মাণে ‘বিদিশা’ নাটকের ‘আলো আলো করছো’ গানের জন্য। গানটি গেয়েছেন রেশমি মির্জা সুর করেছেন শাহরিয়ার মার্সেল।
মে মাসের একেবারে শেষ সন্ধ্যায় (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তন থেকে মাহমুদ মানজুর আরও একটি শ্রেষ্ঠ গীতিকবির স্বীকৃতি ঘরে তুলে হ্যাটট্রিক করেন। টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) আয়োজিত ‘ট্র্যাব আইকনিক অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’-এ তিনি এই স্বীকৃতি পেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচীর গাওয়া এবং জয় শাহরিয়ারের সুর করা ‘কেমন আছ তুমি’ গানের জন্য।
একমাসে হ্যাটট্রিক অর্জন প্রসঙ্গে মাহমুদ মানজুর বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বিষয়টি আমার কাছে বরাবরই অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। এই অস্বস্তির কারণে জীবনের প্রথমভাগে অসংখ্য স্বীকৃতি আমি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করিনি। তবে সেই বোধ ক্রমশ কেটে যাচ্ছে। এখন স্বীকৃতি গ্রহণ করতে ভালোই লাগে। মনে হয়, এটা আমার প্রাপ্য। ফলে যেটা আমি পাই, সেটিকে সাদরে গ্রহণ করতে তো বাধা নেই। আর মূল কথা হচ্ছে স্বীকৃতি নেওয়া মানে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা নিয়ে ঘরে ফেরা। সেটাই করতে চাই।’
প্রসঙ্গত, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে চলেছেন সাংবাদিক ও গীতিকবি মাহমুদ মানজুর। এ পর্যন্ত তিনি দেড় শতাধিক গান লিখেছেন নাটক, সিনেমা ও স্বাধীন মাধ্যমে। পেয়েছেন কালচারাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) থেকে শ্রেষ্ঠ গীতিকবির সম্মাননা। জুরি সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ-এর সদস্য বাছাই প্রক্রিয়ায়।
অন্যদিকে সাংবাদিকতায়ও মাহমুদ মানজুরের অর্জন রয়েছে উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিকতার প্রথমাংশে ২০০৭ সালে তিনি পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক হিসেবে ‘বিসিআরএ-২০০৭’ পদক। ২০০১ সাল থেকে কাজ করেছেন যথাক্রমে সাপ্তাহিক পূর্ণিমা, দৈনিক যুগান্তর, পাক্ষিক তারকালোক, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক মানবজমিন-এ। ২০১৫ সাল থেকে আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশের অন্যতম অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন-এ। এরমধ্যে মাহমুদ মানজুর দুইবার সরাসরি কাভার করেছেন ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা চলচ্চিত্র উৎসব ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-২০২৩ ও ২০২৪’। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে মাহমুদ মানজুর কাভার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব ‘সান ড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-২০২৫’।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুদের জন্য কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্প
কাতার চ্যারিটি (কিউসি) বাংলাদেশে তাদের অগ্রগামী কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্প চালু করেছে, যা পড়তে অসুবিধার সম্মুখীন শিশুদের কোরআন তিলাওয়াত, হিফজ এবং এর অর্থ বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ প্রকল্প কিউসির বৃহত্তর আল-ফুরকান কোরআনিক সাক্ষরতা প্রোগ্রামের অংশ, যা কেবল কোরআন শিক্ষার ওপরই কেন্দ্রীভূত নয়; বরং এর সুবিধাভোগীদের নৈতিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নের ওপরও জোর দেয়।
কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্পটি বাংলাদেশের সেই শিশুদের লক্ষ করে যারা পড়তে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি তাদের কোরআন তিলাওয়াত ও হিফজ এবং কোরআনের অর্থ বোঝার মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশেও সহায়তা করে।
ড. মোহাম্মদ আমিন হাফেজ ওমর, কিউসির বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেছেন, ‘এ উদ্যোগ কেবল একটি সাক্ষরতা প্রচারণা নয়, এটি একটি রূপান্তরকারী যাত্রা। পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া শুধু শব্দ ও নিয়ম শেখানো নয়, এটি এমন ব্যক্তি গড়ে তোলা, যারা মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও উদ্দেশ্যে সমৃদ্ধ। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের ঐশী বাণীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে এবং জীবনে নতুন পরিচয়, মর্যাদা ও দিকনির্দেশনার দ্বার উন্মোচন করতে সাহায্য করি।’
আরও পড়ুনযে দানে ত্যাগের অনুভূতি হয়, সেটিই প্রকৃত দান১১ ডিসেম্বর ২০২৪প্রকল্পটি কিউসির দুটি ফ্ল্যাগশিপ সামাজিক কল্যাণ কেন্দ্র—মারকাজ মুহাম্মদ বিন আজাজ আল-কুবাইসি সেন্টার এবং শাখা সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে ৬০০ জনের বেশি স্পনসর করা শিশু অংশগ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত এবং অংশগ্রহণমূলক, যেখানে কোরআন তিলাওয়াত, নাট্য প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
কোরআন শিক্ষক মনজুরুল হক শিক্ষণপদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক আরবি ভাষা দিয়ে শুরু করি। শিক্ষার্থীদের অক্ষর ও শব্দ চিনতে সাহায্য করি। তারপর ধীরে ধীরে কোরআনের আয়াত ও তাদের অর্থের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আমাদের লক্ষ্য কেবল কোরআন পড়ে যাওয়া নয়; বরং গভীরভাবে বোঝা এবং কোরআনের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ ঘটানো।’ এ পদ্ধতি শিশুদের জন্য শিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশে ১৯৮৮ সাল থেকে তাদের জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যখন দেশটি প্রলয়ংকরী বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ঢাকায় তাদের কার্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিউসি বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল সরবরাহ ও জীবিকা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৪ সালে কিউসি ২ হাজার ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা ৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৭ জনকে উপকৃত করেছে (গালফ টাইমস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। এ ছাড়া কিউসি বাংলাদেশে ৫ হাজার ৮২ শিক্ষার্থীকে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, যা তাদের উজ্জ্বল ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
আরও পড়ুনযে দানে ত্যাগের অনুভূতি হয়, সেটিই প্রকৃত দান১১ ডিসেম্বর ২০২৪কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্পটি কিউসির শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের একটি অংশ। এটি ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ২০টি কোরআন মুখস্থকরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা দুই হাজার শিক্ষার্থীকে উপকৃত করবে। এ ছাড়া কিউসি গত পাঁচ বছরে ৫০টি স্কুল নির্মাণ করেছে, যা ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে উপকৃত করেছে এবং ৩ হাজার ৩১২ জন এতিম শিশুকে স্পনসর করছে।
কিউসি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এনজিও, যা ১৯৯২ সাল থেকে ৫০টির বেশি দেশে ১৭৮ মিলিয়নের বেশি মানুষকে সহায়তা করেছে। এটি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করে (কাতার চ্যারিটি ওয়েবসাইট, ২০২৫)।
কাতার চ্যারিটির কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্প শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও জীবনের উদ্দেশ্য জাগ্রত করে। প্রকল্পটির সাফল্য শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও কিউসির দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে স্পষ্ট। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এ উদ্যোগ একটি আশার আলো, যা শিক্ষা ও ইমানের মাধ্যমে তাদের জীবনকে রূপান্তরিত করছে।
সূত্র: কাতার ট্রিবিউন
আরও পড়ুনকোরআনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ‘কোরআন জার্নালিং’২২ জুলাই ২০২৫