প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছেন বাংলাদেশের লক্ষাধিক মুসলিম। কিন্তু এবারের হজে যাওয়ার চিত্রটা একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে না? শুধু কি একটু? প্রতিবছর আমরা হজযাত্রা এলেই দেখি নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ। কয়েক মাস আগে টাকাপয়সা সব জমা দিয়েও শেষ মুহূর্তে হজে যেতে না পেরে মানুষের কান্নাভেজা চোখ আমরা কত দেখেছি। এটিই যেন এ দেশের প্রতিবছরের হজযাত্রার ‘স্বাভাবিক’ দৃশ্য হয়ে উঠেছিল।

এবার সেই দৃশ্যে ছেদ পড়েছে। আমরা দেখলাম, চাইলেই সুব্যবস্থাপনা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা যায়। মানুষ কোনো হয়রানি, দুর্ভোগ ও প্রতারিত হওয়া ছাড়াই নির্বিঘ্নে হজ করতে যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি চেয়েছে বলেই এবারের চিত্রটা ভিন্ন হয়েছে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) কর্তৃক ১৯৮৭ সালে গৃহীত এক রেজল্যুশন অনুযায়ী, কোনো দেশের প্রতি ১০ লাখ মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে ১ হাজার ব্যক্তি হজে অংশ নিতে পারেন। এই রেজল্যুশনের ওপর ভিত্তি করেই সৌদি সরকার প্রতিটি দেশের হজযাত্রীদের কোটা নির্ধারণ করে থাকে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত কোটা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং অন্যরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য দুটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম।

আরেকটু প্রিমিয়াম হজ প্যাকেজ-২–এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১১ হাজার ৭০৭ টাকা কম। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪৪ টাকা কম। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের বিশেষ প্যাকেজ গ্রহণের সুযোগ আছে।

সাধারণ হজ প্যাকেজের ক্ষেত্রে হাজিদের জন্য পবিত্র কাবার বহির্চত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনব্যবস্থা ও মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা থাকে। বিশেষ প্যাকেজের ক্ষেত্রে আবাসনের এই দূরত্ব থাকে কাবার বহির্চত্বর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। বাকি সব সুবিধা প্রায় একই রকম।

চলতি বছর হজযাত্রায় বিগত বছরগুলো থেকে কেবল খরচই কমে আসেনি, বরং হজযাত্রীরা কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তির স্বীকার হননি। সমস্ত ধর্মীয় ভাবাবেগ ও জীবনের সঞ্চয় দিয়ে হজে যাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নভাঙা বুকে কাউকে হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ থেকে চোখের পানি ফেলতে হয়নি। বিগত প্রতিটি বছরই এজেন্সির প্রতারণার স্বীকার হয়ে বহু হজযাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে বহু হজযাত্রীর হজযাত্রা। এবারে নির্বিঘ্নে হজযাত্রা করতে পেরেছেন হাজিরা।

এবারে হজের খরচ কমে আসার অন্যতম প্রধান কারণ, এ বছর যাত্রীপ্রতি বিমানভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক মদদে হজের এজেন্সি ব্যবসায়ীদের যে অবৈধ সিন্ডিকেট, সেটাও অন্তর্বর্তী সরকার অনেকাংশে ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।

চলতি বছর হজযাত্রায় বিগত বছরগুলো থেকে কেবল খরচই কমে আসেনি, বরং হজযাত্রীরা কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তির স্বীকার হননি। সমস্ত ধর্মীয় ভাবাবেগ ও জীবনের সঞ্চয় দিয়ে হজে যাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নভাঙা বুকে কাউকে হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ থেকে চোখের পানি ফেলতে হয়নি। বিগত প্রতিটি বছরই এজেন্সির প্রতারণার স্বীকার হয়ে বহু হজযাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে বহু হজযাত্রীর হজযাত্রা। এবারে নির্বিঘ্নে হজযাত্রা করতে পেরেছেন হাজিরা।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে সম্মিলিত হজ গ্রুপ অপারেটর অর্থাৎ এজেন্সিগুলোর ব্যর্থতায় বাতিল হয়ে যায় ৫২ হাজার হজের কোটা, যা দেশটির মোট হজ কোটার এক–তৃতীয়াংশের মতো। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে সৌদি সরকার ১০ হাজার জনকে হজের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু ৪২ হাজার ভারতীয় হজযাত্রার সুযোগ থেকে বঞ্চিতই রয়ে যান। সে বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় বরং নতুন নজিরই স্থাপন করতে পেরেছে।

কেবল সুশৃংখল হজযাত্রা নয়, বরং জনগণের করের টাকায় হজে পাঠানোর যে রীতি ছিল, তা–ও বন্ধ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম হজ মৌসুমেই উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয় সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের বক্তব্যে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সরকারের এ সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

পতিত স্বৈরাচারের সময়ে ২০১৪ সাল থেকে সরকারি খরচে হজে পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে ১২৫ জন, ২০১৫ সালে ২৬৮ জন, ২০১৬ সালে ২৮৩ জন, ২০১৭ সালে ৩৩৪ জন, ২০১৮ সালে ৩৪০ জন, ২০১৯ সালে ৩১৪ জন, ২০২২ সালে ২৫৪ জন, ২০২৩ সর্বনিম্নসংখ্যক ২৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৭১ জনকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়। মাঝে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো হজযাত্রী হজে যেতে পারেননি। এ দুই বছর ছাড়া গত ৯ বছরে ২ হাজার ১২ জনকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়েছে।

তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সরকারঘনিষ্ঠ। গত বছরও যাঁদের সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বর্তমান বিচারপতি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি কর্মকর্তা। এতে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই অর্থনৈতিকভাবে অসমর্থ নন। বিগত বছরগুলোয় সরকারি খরচে হজে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ব্যয় করা হয়েছে জনগণের কোটি কোটি টাকা।

সরকারি অর্থায়নে এই হজের ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করা উচিত। সরকারকে অবশ্যই আরও মনোযোগী হতে হবে হজযাত্রীদের সেবায়। চিকিৎসক দল, প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল, কারিগরি সহায়তাকারী দলে যেসব সরকারি কর্মচারী হজে যান, তাঁদের ব্যাপারে অভিযোগ ছিল হাজিদের প্রয়োজনে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেই রীতিরও পরিবর্তন হবে বলে প্রত্যাশা করি। সিন্ডিকেটমুক্ত করে হজের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের যে নতুন যাত্রা এই সরকার শুরু করেছে, তা পরবর্তীতেও যেন অব্যাহত থাকে।

একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বা সরকারি–বেসরকারি কর্মচারী সারা জীবন চাকরি শেষে পেনশনের টাকায় অথবা একজন ছোট ব্যবসায়ী বা দোকানদার সারা জীবনের জমানো টাকায় হজ করার স্বপ্নপূরণে সরকার এভাবে এগিয়ে আসবে, সেটিই আমরা সব সময় চাই। সেখানে কোনো সিন্ডিকেট, অসাধু হজ এজেন্সি বা প্রতারক থাকবে না; মানুষের সেই কষ্টার্জিত টাকা হারানোর ভয় থাকবে না; দুর্ভোগ, ভোগান্তি, প্রতারিত হওয়ার অপমান থাকবে না—হাজিদের জন্য এমন মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা একটি কার্যকর ও স্থায়ী রূপ পাক, সেটিই কাম্য।

আরজু আহমাদ জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য

*মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র র র হজয ত র ব গত বছর ব সরক র সরক র র র র হজ র জন য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

হজে যেতে হাজিদের কান্না শোনা গেল না কেন এবার

প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছেন বাংলাদেশের লক্ষাধিক মুসলিম। কিন্তু এবারের হজে যাওয়ার চিত্রটা একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে না? শুধু কি একটু? প্রতিবছর আমরা হজযাত্রা এলেই দেখি নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ। কয়েক মাস আগে টাকাপয়সা সব জমা দিয়েও শেষ মুহূর্তে হজে যেতে না পেরে মানুষের কান্নাভেজা চোখ আমরা কত দেখেছি। এটিই যেন এ দেশের প্রতিবছরের হজযাত্রার ‘স্বাভাবিক’ দৃশ্য হয়ে উঠেছিল।

এবার সেই দৃশ্যে ছেদ পড়েছে। আমরা দেখলাম, চাইলেই সুব্যবস্থাপনা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করা যায়। মানুষ কোনো হয়রানি, দুর্ভোগ ও প্রতারিত হওয়া ছাড়াই নির্বিঘ্নে হজ করতে যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি চেয়েছে বলেই এবারের চিত্রটা ভিন্ন হয়েছে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) কর্তৃক ১৯৮৭ সালে গৃহীত এক রেজল্যুশন অনুযায়ী, কোনো দেশের প্রতি ১০ লাখ মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে ১ হাজার ব্যক্তি হজে অংশ নিতে পারেন। এই রেজল্যুশনের ওপর ভিত্তি করেই সৌদি সরকার প্রতিটি দেশের হজযাত্রীদের কোটা নির্ধারণ করে থাকে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত কোটা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং অন্যরা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের জন্য দুটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম।

আরেকটু প্রিমিয়াম হজ প্যাকেজ-২–এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১১ হাজার ৭০৭ টাকা কম। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা, যা বিগত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৪৪ টাকা কম। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের বিশেষ প্যাকেজ গ্রহণের সুযোগ আছে।

সাধারণ হজ প্যাকেজের ক্ষেত্রে হাজিদের জন্য পবিত্র কাবার বহির্চত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনব্যবস্থা ও মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা থাকে। বিশেষ প্যাকেজের ক্ষেত্রে আবাসনের এই দূরত্ব থাকে কাবার বহির্চত্বর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। বাকি সব সুবিধা প্রায় একই রকম।

চলতি বছর হজযাত্রায় বিগত বছরগুলো থেকে কেবল খরচই কমে আসেনি, বরং হজযাত্রীরা কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তির স্বীকার হননি। সমস্ত ধর্মীয় ভাবাবেগ ও জীবনের সঞ্চয় দিয়ে হজে যাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নভাঙা বুকে কাউকে হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ থেকে চোখের পানি ফেলতে হয়নি। বিগত প্রতিটি বছরই এজেন্সির প্রতারণার স্বীকার হয়ে বহু হজযাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে বহু হজযাত্রীর হজযাত্রা। এবারে নির্বিঘ্নে হজযাত্রা করতে পেরেছেন হাজিরা।

এবারে হজের খরচ কমে আসার অন্যতম প্রধান কারণ, এ বছর যাত্রীপ্রতি বিমানভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক মদদে হজের এজেন্সি ব্যবসায়ীদের যে অবৈধ সিন্ডিকেট, সেটাও অন্তর্বর্তী সরকার অনেকাংশে ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।

চলতি বছর হজযাত্রায় বিগত বছরগুলো থেকে কেবল খরচই কমে আসেনি, বরং হজযাত্রীরা কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তির স্বীকার হননি। সমস্ত ধর্মীয় ভাবাবেগ ও জীবনের সঞ্চয় দিয়ে হজে যাওয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নভাঙা বুকে কাউকে হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমাণ থেকে চোখের পানি ফেলতে হয়নি। বিগত প্রতিটি বছরই এজেন্সির প্রতারণার স্বীকার হয়ে বহু হজযাত্রীকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বাতিল হয়ে গেছে বহু হজযাত্রীর হজযাত্রা। এবারে নির্বিঘ্নে হজযাত্রা করতে পেরেছেন হাজিরা।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে সম্মিলিত হজ গ্রুপ অপারেটর অর্থাৎ এজেন্সিগুলোর ব্যর্থতায় বাতিল হয়ে যায় ৫২ হাজার হজের কোটা, যা দেশটির মোট হজ কোটার এক–তৃতীয়াংশের মতো। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে সৌদি সরকার ১০ হাজার জনকে হজের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু ৪২ হাজার ভারতীয় হজযাত্রার সুযোগ থেকে বঞ্চিতই রয়ে যান। সে বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় বরং নতুন নজিরই স্থাপন করতে পেরেছে।

কেবল সুশৃংখল হজযাত্রা নয়, বরং জনগণের করের টাকায় হজে পাঠানোর যে রীতি ছিল, তা–ও বন্ধ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম হজ মৌসুমেই উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয় সরকারি খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের বক্তব্যে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সরকারের এ সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

পতিত স্বৈরাচারের সময়ে ২০১৪ সাল থেকে সরকারি খরচে হজে পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে ১২৫ জন, ২০১৫ সালে ২৬৮ জন, ২০১৬ সালে ২৮৩ জন, ২০১৭ সালে ৩৩৪ জন, ২০১৮ সালে ৩৪০ জন, ২০১৯ সালে ৩১৪ জন, ২০২২ সালে ২৫৪ জন, ২০২৩ সর্বনিম্নসংখ্যক ২৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৭১ জনকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়। মাঝে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো হজযাত্রী হজে যেতে পারেননি। এ দুই বছর ছাড়া গত ৯ বছরে ২ হাজার ১২ জনকে সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়েছে।

তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সরকারঘনিষ্ঠ। গত বছরও যাঁদের সরকারি খরচে হজে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বর্তমান বিচারপতি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি কর্মকর্তা। এতে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাঁরা কেউই অর্থনৈতিকভাবে অসমর্থ নন। বিগত বছরগুলোয় সরকারি খরচে হজে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ব্যয় করা হয়েছে জনগণের কোটি কোটি টাকা।

সরকারি অর্থায়নে এই হজের ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করা উচিত। সরকারকে অবশ্যই আরও মনোযোগী হতে হবে হজযাত্রীদের সেবায়। চিকিৎসক দল, প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল, কারিগরি সহায়তাকারী দলে যেসব সরকারি কর্মচারী হজে যান, তাঁদের ব্যাপারে অভিযোগ ছিল হাজিদের প্রয়োজনে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেই রীতিরও পরিবর্তন হবে বলে প্রত্যাশা করি। সিন্ডিকেটমুক্ত করে হজের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের যে নতুন যাত্রা এই সরকার শুরু করেছে, তা পরবর্তীতেও যেন অব্যাহত থাকে।

একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বা সরকারি–বেসরকারি কর্মচারী সারা জীবন চাকরি শেষে পেনশনের টাকায় অথবা একজন ছোট ব্যবসায়ী বা দোকানদার সারা জীবনের জমানো টাকায় হজ করার স্বপ্নপূরণে সরকার এভাবে এগিয়ে আসবে, সেটিই আমরা সব সময় চাই। সেখানে কোনো সিন্ডিকেট, অসাধু হজ এজেন্সি বা প্রতারক থাকবে না; মানুষের সেই কষ্টার্জিত টাকা হারানোর ভয় থাকবে না; দুর্ভোগ, ভোগান্তি, প্রতারিত হওয়ার অপমান থাকবে না—হাজিদের জন্য এমন মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা একটি কার্যকর ও স্থায়ী রূপ পাক, সেটিই কাম্য।

আরজু আহমাদ জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ