স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “পুলিশের কেউ মামলা বাণিজ্যে, দুর্নীতিতে জড়ালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৪ জনকে আমরা এটাচ করে রেখেছি। ইতোমধ্যে আমরা ৩০-৪০ জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। যদি আরো ৩০-৪০ জনকে বাড়ি পাঠাতে হয়, একটুও কুণ্ঠিত হব না। যদি কোনো রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়।”

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‌টিস্যু চাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১৫

এমপি আনারের কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি মিলল কুষ্টিয়ায়

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। এটা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটা যদি আমরা কোনো অবস্থায় কন্ট্রোলের ভেতরে আনতে পারতাম, তাহলে কিন্তু দেশ অনেক অনেক আগাইয়া যাইত। এজন্য আমি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আপনারা লোকজনকে সচেতন করেন। আপনারা যদি সত্য কথা লেখেন, তাহলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে।” 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।  আগে বলা হত, জিডি এবং মামলা পুলিশ নিতে চায় না। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে মামলার গ্রহণ প্রক্রিয়া অনলাইনে করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখন জিডি ঘরে বসেই করা যায়। ফলে মামলা করার জন্য এখন আর মানুষকে থানায় যেতে হবে না, তাই হয়রানি পোহাতে হবে না।” 

উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা বলেন রিমান্ডের নিয়ে নির্যাতনের কথা। এখন থেকে জিজ্ঞাসা করার জন্য আমরা কাঁচের মতো ঘর করে দিব।  অন্যরা দেখতে পারবে তার (আসামি) সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে কিনা।” 

৫ আগস্ট পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার তদন্ত  দ্রুত শেষ করা যায় কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আগে ১০-১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অসংখ্য মানুষের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতো। এবার হইছে কি? আপনারাই ১০-১৫ জনের নাম দিছেন, ২০০-২৫০ বেনামী লোক আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এজন্য মামলার তদন্ত দেরি হচ্ছে। এসব মামলায় যেমন দোষী লোকজন আছে মোটামুটি নির্দোষ অনেক মানুষ রয়েছে।”  

এসময় গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত কমিশনার রবিউল ইসলাম, গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট এজন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

সংক্রমণ রোধে এখনই পদক্ষেপ নিন

চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে বৈকি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করি।

সরকারের পক্ষ থেকে সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনপরিসরে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদের ছুটি থেকে ফেরা যাত্রীদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে হবে না; প্রতিটি জনপরিসরে এটি কার্যকর করতে হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ গত রোববার সকাল আটটা থেকে গতকাল সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত চারজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর চলতি মাসে এ পর্যন্ত ২৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। পুরো মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজন মারা যান। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে করোনাবিষয়ক কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এটা করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ারই নমুনা।

কিন্তু জনগণ সচেতন হলেই হবে না। করোনা পরীক্ষা ও টিকা সরবরাহের কাজটি করতে হবে সরকারকেই। জনস্বাস্থ্যবিদেরা করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কিটের মজুত থাকার কথা বললেও বাস্তবে তা নেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেখানে করোনা পরীক্ষার কিট নেই। রাজধানীর তিন বড় হাসপাতালের অবস্থা যখন এই, অন্যান্য হাসপাতালের চিত্র সহজেই অনুমেয়।

আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা যে কত দুর্বল, সেটা বিগত করোনা মহামারির সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে। করোনা পরীক্ষা থেকে চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এবারও যাতে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সরকারের আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। আর কাজটি একা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নয়; জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থা ও বিভাগকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের হাতে এখন ফাইজারের তৈরি ৩১ লাখ করোনার টিকা আছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট। এখন হাতে আছে আসলে ১৪ লাখ টিকা।

করোনার সম্ভাব্য বিস্তার রোধে অবিলম্বে পরীক্ষার সরঞ্জাম সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা, ভিন্ন কোনো জটিল রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো বটেই, এমনকি যেসব ব্যক্তির সর্বশেষ টিকা নেওয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাঁদেরও করোনার টিকা নেওয়া উচিত।

আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করোনার বিস্তার ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আর জনসচেতনতার কাজটি করতে হবে সর্বস্তরে, সব খানে। প্রচারমূলক কাজে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও।

সম্পর্কিত নিবন্ধ