ইন্দিরা গান্ধী কি শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়েছিলেন
Published: 10th, June 2025 GMT
১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর ভারত এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করে। এ সময়ে নাগরিক অধিকার স্থগিত করা হয় এবং বিরোধী রাজনীতিকদের একে একে গ্রেপ্তার করা হয়।
সে সময় দৃশ্যমান দমন-পীড়নের আড়ালে কংগ্রেস সরকার নীরবে নতুনভাবে রাষ্ট্রচিন্তা শুরু করেছিল। ভারতকে তারা এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে কল্পনা করে, যেখানে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য ও জবাবদিহির ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণনির্ভর একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার ওপর ভর করে গঠিত হবে। ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন তাঁর নতুন বইয়ে সেই রূপান্তরের আড়ালের গল্প তুলে ধরেছেন।
‘ইন্দিরা গান্ধী অ্যান্ড দ্য ইয়ার্স দ্যাট ট্রান্সফর্মড ইন্ডিয়া’ বইয়ে অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন বিশ্লেষণ করেছেন, জরুরি অবস্থার সময় কীভাবে ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ আমলা ও দলীয় অনুগামীরা একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত কাঠামোর পক্ষে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেন। এই কাঠামোয় নির্বাহী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে, ‘প্রতিবন্ধক’ বিচারব্যবস্থাকে পাশ কাটানো যাবে এবং সংসদ কেবল আনুগত্যের প্রতীকী একটি মঞ্চে রূপ নেবে।
বাস্তবে শার্ল দ্য গলের ফ্রান্স থেকে আংশিক অনুপ্রাণিত এই রাষ্ট্রপতিশাসিত কাঠামোর প্রস্তাব ছিল—সংসদীয় গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে অগ্রসর হওয়ার স্পষ্ট প্রয়াস। যদিও শেষ পর্যন্ত এটা পূর্ণ বাস্তবতায় রূপ নেয়নি।
যদিও তখনো রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয়নি, তবু এ শাসনব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ছাপ ঠিকই দেখা যাচ্ছিল। অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সরকার, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ঘাটতি। দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা এ নিয়ে সতর্ক করে লিখেছিল, ‘মাত্র এক ধাক্কায় এই সংশোধনী সাংবিধানিক ভারসাম্যকে সংসদের দিকে ভারী করে দেয়।’অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন লিখেছেন, এ সবকিছুর শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক বি কে নেহরু এক চিঠিতে জরুরি অবস্থাকে ‘জনসমর্থনভিত্তিক সাহস ও শক্তির এক অনন্য প্রদর্শন’ বলে উল্লেখ করেন। সেই চিঠিতে তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে পরামর্শ দেন, এ সুযোগ যেন কাজে লাগানো হয়।
নেহরু লিখেছিলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। এ ব্যবস্থায় সরকার সব সময় এমন একটি নির্বাচিত সংসদের ওপর নির্ভরশীল, যাঁরা জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর সিদ্ধান্তকে থামিয়ে দেয়।
অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন লিখেছেন, নেহরু মনে করতেন, ভারতের এমন এক রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন, যিনি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং সংসদীয় নির্ভরতা থেকে মুক্ত থেকে জাতীয় স্বার্থে ‘কঠিন, অপ্রিয় ও অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত’ নিতে পারবেন।
বি কে নেহরু যে রূপরেখার কথা বলেছিলেন, তা ছিল ফ্রান্সে শার্ল দ্য গলের শাসনব্যবস্থার মতো, যেখানে রাষ্ট্রপতি সব ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন। নেহরুর কল্পনায় ছিল সাত বছর মেয়াদি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার, সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, সীমিত ক্ষমতার বিচারব্যবস্থা এবং কঠোর মানহানি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম। এমনকি তিনি মৌলিক অধিকার, যেমন সমতার অধিকার কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগও বাতিল করার প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক রাঘবনের মতে, ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার দিকে ঝোঁক দেখা যেত। বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের পর রাজনীতিতে অস্থিরতা ও দুর্বল জোটগুলোর কারণে এই প্রবণতা বেড়ে যায়। তখনই রব ওঠে, ভারতের জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বেশি উপযুক্ত হতে পারে। তবে যখন এই ধারণাগুলো রাজনৈতিক চিন্তায় পরিণত হয়, তখন বিষয়টি আরও চরম আকার ধারণ করে।এই কূটনীতিক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, ‘আপনার কাছে যখন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তখন সংবিধানে বড় পরিবর্তন করুন।’ এই ধারণা ইন্দিরা গান্ধীর সচিব পি এন ধর খুব উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন। পরে ইন্দিরা গান্ধী কূটনীতিক নেহরুকে দলের নেতাদের সঙ্গে এসব ধারণা নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেন। তবে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, যেন কেউ ভাবতে না পারে যে এসব তাঁর অনুমোদিত।
অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, এসব প্রস্তাব সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জগজীবন রাম ও স্মরণ সিংহ আগ্রহের সঙ্গে নিয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, ‘এসব নির্বাচনের বাজে আলাপ বাদ দিন। আমাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলব, আমাদের বোন ইন্দিরা গান্ধীকে আজীবন রাষ্ট্রপতি বানিয়ে দিন, আর অন্যকিছু করার দরকার নেই।’
ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত শ স ত ব যবস থ যবস থ র ইন দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘উৎসব’-এ আমরা কয়েকজন শুধু যোদ্ধা হিসেবে ছিলাম: অপি করিম
দেশীয় শোবিজের সু-অভিনেত্রীদের একজন অপি করিম। সর্বশেষ যৌথ প্রযোজনার ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাকে। দুই বছর পর নতুন সিনেমায় নিয়ে হাজির হয়েছেন এই অভিনেত্রী। সিনেমার নাম ‘উৎসব’। তানিম নূর পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে এবার ঈদে।
অপি করিম বলেন, ‘একটা সময় শিক্ষকতার কারণে অভিনয়ে কম সময় দিয়েছি। এখন শিক্ষকতা ফুল টাইম করছি না। আমার নিজস্ব একটা ফার্ম আছে সেখানে সময় দেই। ফলে অভিনয়ে বেশি সময় দিতে পারছি। একেক সময় আপনার জীবন বা মনই বলে দেবে কোনটা আপনার করা বেশি জরুরী। সেই জায়গা থেকে এখন অভিনয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টার করছি।’
শুধু অপি করিম নন, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, জয়া আহসানও আছেন ‘উৎসব’ ছবিতে। আরও আছেন তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, আজাদ আবুল কালামের মতো অভিনেতারাও। অপি করিম বেশ আনন্দিত এমন একটি ছবির মধ্যদিয়ে ফিরতে পেরে।
মঙ্গলবার সিনেমার প্রচারে গিয়ে অপি করিম বললেন, ‘‘উৎসব’ সিনেমাতে নির্মাতা তানিম নূর যেভাবে দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ করতে চাচ্ছিলেন সেটা করতে পেরেছেন। এখানে আমরা কয়েকজন শুধু যোদ্ধা বা সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলাম। এখানে জাহিদ ভাইয়ের কথা না বললেই না। কারণ, আমার মনে হয়, সিনেমার গল্পে তিনি ৯০ দশক থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে এসেছেন। বলতে গেলে তিনি আমাদের কানেকশন হাফ।”
নিজের অভিনয় প্রসঙ্গে অপি করিম বলেন, ‘এবার ঈদে যে কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন জনরার। তবে বিভিন্ন প্রজন্মের দর্শক আমাদের সিনেমাটি পছন্দ করছেন। আমি এমনিতেই কাজ কম করি। সেই জায়গা থেকে নিজেকে নিয়ে কিছুটা সংসয়েও ছিলাম। দির্ঘদিন অভিনয়ে না থাকায় মনে হয়েছে; দর্শক আমাকে ভুলে গেলো না তো? সিনেমা মুক্তির পর সেটা কেটে গেছে। কারণ, দর্শক আমাকে মনে রেখেছে। আমার জায়গা সেখানেই আছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। একটা কাজ যখন দর্শকের ভালো লাগে তখন আরও কাজ করার আগ্রহ জাগে।’
অপি করিম বলেন, ‘সিনেমা অনেক ধরণ আছে। একেকজন মানুষের একেক রকম সিনেমা পছন্দ। শুধু সিনেমা নয়, দেশের নাটক, ওটিটি কন্টেন্টসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। আমি চাই দর্শক ভালো কন্টেন্টগুলো দেখুক। কারণ, আমরা অনেক কষ্ট করে কাজ করি। দর্শক যদি সেগুলো দেখেন তাহলেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।’