ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: হিমালয়ান পিংক সল্ট ব্যবসায়ীদের কী হবে
Published: 10th, June 2025 GMT
ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরের ব্যবসায়ী বিপান কুমার তিন দশক ধরে পাকিস্তান থেকে হিমালয়ান পিংক সল্ট এনে ভারতে বিক্রি করেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সর্বশেষ সংঘাতের পর চরম বিপদে পড়েছেন তিনি।
কারণ, ওই সংঘাতের পর নয়াদিল্লি পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে—এমনকি তৃতীয় দেশ হয়েও পাকিস্তানি পণ্য আমদানি করা যাবে না।
এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গুলি করে ২৬ পর্যটককে হত্যার পর সংঘাতে জড়ায় দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের অভিযোগ, ইসলামাবাদ সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়—পাকিস্তান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সর্বশেষ সংঘাতে দুই দেশেই বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।
বিপান কুমারের বয়স ৫০ বছর। তিনি পাঞ্জাবের অমৃতসরে বসবাস করেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তাঁর ব্যবসা রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেছে।
অথচ বিপান সাধারণত প্রতি তিন মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টন পিংক সল্ট বিক্রি করতেন।
বিপান বলেন, ‘লাভের পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে বিক্রির কারণে ব্যবসাটা টিকে ছিল। এখন নিষেধাজ্ঞার ফলে পিংক সল্টের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জানি না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
বিপান কুমারের বয়স ৫০ বছর। তিনি পাঞ্জাবের অমৃতসরে বসবাস করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তাঁর ব্যবসা রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।হালকা গোলাপি রঙের খনিজ লবণ ‘পিংক সল্ট’ নামে পরিচিত। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই লবণে লৌহের মতো খনিজ উপাদান থাকে, রান্না ছাড়াও ঘর সাজানোর বাতি এবং সৌন্দর্য চর্চায় ব্যাপকভাবে পিংক সল্টের ব্যবহার হয়।
পিংক সল্টের দ্বিতীয় বৃহৎ খনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট পাওয়া যায় কানাডার অন্টারিওর সিফটো সল্ট খনি থেকে। পাকিস্তানের খেওড়া লবণ খনিটি লাহোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে।
এই খনি থেকে অপ্রক্রিয়াজাত লবণ ভারতে যায় এবং সেখানে লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। ভারতে সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট আমদানি হয় পাকিস্তান থেকে।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশ একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। চার দিন ধরে সীমান্তে এবং আকাশপথে লড়াইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
যুদ্ধ উত্তেজনা হ্রাস পেলেও এর জেরে যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। ভারতের লবণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় তাঁদের ব্যবসায় বিঘ্ন ঘটেছে, বাজারে লবণের দামও বাড়তে শুরু করেছে।
মাত্র এক মাস হলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, এর মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। যাঁদের কাছে লবণের মজুত আছে, তাঁরা এখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন।...গুরভীন সিং, ভারতের অমৃতসরের লবণ ব্যবসায়ী
অমৃতসরের লবণ ব্যবসায়ী গুরভীন সিং বলেন, মাত্র এক মাস হলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, এর মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। যাঁদের কাছে লবণের মজুত আছে, তাঁরা এখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন।
লবণ আমদানি করতে না পেরে ভারতীয় আমদানিকারকেরা হায় হায় করলেও পাকিস্তানি রপ্তানিকারকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁরা বলেছেন, পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা তাঁদের রপ্তানির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানের লবণ নিজেদের নামে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন।
পিংক সল্টের দ্বিতীয় বৃহৎ খনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। সবচেয়ে বেশি পিংক সল্ট পাওয়া যায় কানাডার অন্টারিওর সিফটো সল্ট মাইন থেকে। পাকিস্তানের খেওড়া লবণ খনিটি লাহোর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে।আরও পড়ুনহামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা২৯ এপ্রিল ২০২৫করাচিভিত্তিক আরএম সল্টের কর্মকর্তা ফৈজান পাঞ্জওয়ানি বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আমাদের ব্যবসা আরও বিস্তারে সহায়তা করবে। এর ফলে ভারতের সঙ্গে যে প্রতিযোগিতা, সেটা আর থাকছে না।’
পাকিস্তানের লবণের বড় বাজার ভারত—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই বলে মত এই কর্মকর্তার। তবে পাকিস্তান থেকে ভারতে অপ্রক্রিয়াজাত লবণ রপ্তানি হয়।
নিঃসন্দেহে, ভারত একটি বড় বাজার এবং সেখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা লবণ অপ্রক্রিয়াজাত অবস্থায় নয়, বরং মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করতে চাই। বিশ্বব্যাপী আগে থেকেই আমাদের লবণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।...ফৈজান পাঞ্জওয়ানি, করাচিভিত্তিক আরএম সল্টের কর্মকর্তাফৈজান বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ভারত একটি বড় বাজার এবং এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা লবণ অপ্রক্রিয়াজাত অবস্থায় নয়, বরং মূল্য সংযোজন করে রপ্তানি করতে চাই। বিশ্বব্যাপী আগে থেকেই আমাদের লবণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
২০১৯ সালে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে গেছে। পুলওয়ামায় ওই হামলায় ৪০ সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুনপেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো২৮ এপ্রিল ২০২৫ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে—একই সময়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করেছে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য।
২০২৪ সালে ভারত প্রায় ৬৪২ মেট্রিক টন পিংক সল্ট আমদানি করেছে। ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন—উচ্চ শুল্কের কারণে ২০১৯ সাল থেকে ভারতে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি অনেক কমে গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় জ ত র ব যবস ব যবস য় অবস থ লবণ র র লবণ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ব্যস্ত দলাদলিতে গণসংযোগে জামায়াত
চট্টগ্রাম নগরীর চারটি আসনে গত ফেব্রুয়ারিতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। এর পর থেকে প্রার্থীরা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে ভোটার টানার চেষ্টা করছেন তারা। বিপরীতে বিএনপির দৃশ্যমান কোনো প্রস্তুতি নেই। নেতাকর্মীরা কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। ফলে কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হাইকমান্ডকে বিপাকে পড়তে হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৬টি আসন। এর মধ্যে মহানগরের আসন হলো চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে ডা. আবু নাছের, চট্টগ্রাম-৯-এ ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১০-এ অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে শফিউল আলমকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। অন্যদিকে চার আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে বিএনপির। শুধু চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। এখানে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দলে তেমন কোনো নেতা নেই। আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১০ আসনেও নির্বাচন করতে চাইছেন। এ জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকে ছেলে ইসরাফিল খসরুকে মাঠে নামিয়েছেন তিনি। এ আসনে নির্বাচন করতেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
সূত্র জানায়, মনোনয়ন পেলে ইসরাফিলকে চট্টগ্রাম-১১ ছেড়ে দিয়ে আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১০ আসনে নির্বাচন করবেন। অবশ্য নোমানের এ আসনে সরব তাঁর বড় ছেলে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নোমান তূর্য। মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করার মতো প্রস্তুতি রয়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছেন ইসরাফিল খসরু ও তূর্য।
নগরীর নেতাকর্মী দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। অন্যরা বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের অনুসারী। এর বাইরেও ছোট-বড় একাধিক গ্রুপ সক্রিয়।
গত ৩ জুন মহানগর বিএনপির আওতাধীন ৩৫টি ওয়ার্ডে নতুন আহ্বায়ক কমিটি (আংশিক) অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব কমিটি নিয়ে বিভক্তি ব্যাপক। প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ করছেন বঞ্চিতরা। গত ১২ জুন ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৫ নম্বর মোহরা ও ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এরশাদ উল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘৩৫ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটি ৩১ সদস্যের হবে। আবার থানা কমিটিও হবে। ফলে এখনই কাউকে বঞ্চিত বলা যাবে না। বিএনপির মতো বড় দলে চাইলেও সবাইকে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা সম্ভব নয়। তবে কমিটি নিয়ে ঝামেলার প্রভাব নির্বাচন প্রস্তুতিতে পড়বে না।’
চট্টগ্রাম-৯ আসনে সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। এখানে মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ডা. শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে হেরে যান। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করেও পরাজিত হন। তবে আদালতের রায়ে বর্তমানে মেয়রের চেয়ারে আছেন ডা. শাহাদাত। সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন কিনা তা স্পষ্ট করেননি।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। আগেও তারা এখান থেকে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় দুই নেতার দুটি বলয় রয়েছে। দলীয় প্রায় সব কর্মকাণ্ড অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে করে আসছেন তারা।
এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘কোন আসনে কে প্রার্থী হবেন, তা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে। আমি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করছি। মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করার মতো প্রস্তুতি রেখেছি।’
আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আসনটিতে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি না করলে আমিই জয় পেতাম। এলাকার সাধারণ মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। আমিও বিপদে-আপদে তাদের পাশে রয়েছি।’