চট্টগ্রামের হালদা নদীর ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে এসব রেণু বিক্রি শুরু হয় বলে সংগ্রাহকরা জানিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের যৌথসভায় প্রতি কেজি রেণুর দাম দেড় লাখ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
 
প্রথম দফায় অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকার রেণু বিক্রির আশা করছেন ডিম সংগ্রাহকরা। তারা জানিয়েছেন, এবার ডিম ছাড়ার মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে আছে। যে কারণে রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছই ডিম ছেড়েছে বেশি। বর্তমানে রেণু ফোটানোর অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। যদিও তারা ভিন্ন কারণে রেণু বিক্রি নিয়ে শঙ্কিত। সংগ্রাহকদের ভাষ্য, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে রেণু উৎপাদন কেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা তলিয়ে গেছে। তাই ক্রেতারা কীভাবে আসবেন এই নিয়ে তারা চিন্তায় আছেন। 

ফটিকছড়ির কামাল সওদাগরসহ কয়েকজন ডিম সংগ্রাহক জানিয়েছেন, গত ২৯ মে বেলা ১১টার দিকে হালদা নদীতে মা-মাছ দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে। একই রাতে নদীর অংকুরিঘোনা থেকে কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত ছায়ারচর পর্যন্ত অন্তত ১৪টি জায়গায় ডিম ছাড়তে থাকে মা-মাছ। আনুমানিক সাড়ে পাঁচশত সংগ্রহকারী কয়েকশত নৌকায় নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন।

এসব ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ শনিবার থেকে শুরু করেন সংগ্রাহকরা। সরকারি চারটি ও বেসরকারি ১২টি হ্যাচারিসহ ৬০টি মাটির কুয়ায় রেণু উৎপাদন চলছে। প্রথম দফায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার রেণু বিক্রির প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কয়েকজন রেণু উৎপাদনকারীর অভিযোগ, একটি অসাধু চক্র কৃত্রিম রেণু বিক্রির অপচেষ্টা করছে। তারা হালদা নদীর ঐতিহ্য ও সুনাম নষ্ট করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

ফটিকছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

আজিজুল ইসলাম জানান, হালদা নদীর ফটিকছড়ি-হাটহাজারী অংশ থেকে ৮ হাজার ৩৪৯ বালতি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কেজি। ৪০ বালতি ডিম থেকে এক কেজি রেণু উৎপাদিত হয়। 

হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া সমকালকে বলেন, হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে সম্ভাব্য রেণু উৎপাদন ও বাজারমূল্য নির্ধারণে মঙ্গলবার যৌথ সভা হয়েছে। এতে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় প্রতি কেজি রেণুর দাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকার বাইরেও

ঈদুল আজহার ছুটির আমেজ কাটতে না কাটতেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকায় এখনো ঈদের কিছুটা রেশ থাকলেও বরিশাল বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬১ জনই বরিশাল বিভাগের। অর্থাৎ, দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় ৯০ শতাংশই এখন এই একটি অঞ্চলে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং ভয়াবহ এক প্রবণতার ইঙ্গিত। ডেঙ্গু আর শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, বরং ছড়িয়ে পড়ছে মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকায়-যেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা অবকাঠামো, নেই সচেতনতা।

আরো পড়ুন:

বরিশাল বিভাগে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

বরগুনায় ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ মৃত্যু 

বরিশাল বিভাগের গ্রামাঞ্চল এখন হটস্পট
ডেঙ্গুর এই বিস্তার শুধু বরিশাল শহরেই নয়, বরং তার বাইরের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকেই রোগী আসছে বেশি। ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা। সব জেলাতেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে থাকা রোগী রুপা (২১)। গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জ। তার মা সালমা বেগম বলেন, “জ্বর হইছিল তিন দিন আগে। ভাবছিলাম সাধারণ জ্বর। দিন দিন খারাপ হইতেছিল। হাসপাতালে আইসা শুনলাম ডেঙ্গু।”

এই হাসপাতালেই প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজীব পাল বলেন, “বেড সংকট, ওষুধের ঘাটতি, নার্স ও চিকিৎসকের ঘাটতি সব মিলিয়ে আমরা চরম চাপে আছি।”

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১১ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ৫ হাজার ৩১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৮৩২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।

গত বছর এই সময় আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও বছর শেষে মারা যান ৫৭৫ জন। ২০২৩ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭০৫ জন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু বছর।

কেন বরিশালে ডেঙ্গু
বিশ্লেষকরা বলছেন, বরিশালে ডেঙ্গুর বিস্তার আকস্মিক নয়। কয়েকটি কারণ স্পষ্ট:
১. আবহাওয়াজনিত কারণ ও জলাবদ্ধতা।
বর্ষা এ বছর আগেভাগেই এসেছে বরিশালে। মে মাস থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বহু এলাকায় জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা।

২. খোলা পানির আধার ও সামাজিক অভ্যাস:
বরিশালের গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেক বাড়িতে খোলা ড্রাম, পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদি রাখা হয় যেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।

৩. সচেতনতা ও মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব:
ঢাকার মতো ওয়ার্ডভিত্তিক সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বরিশালে নেই। কীটনাশক ছিটানো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার, বা সিটি করপোরেশন পর্যায়ের উদ্যোগ এখানে অনুপস্থিত।

চিকিৎসা খাতের হিমশিম দশা
বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাফিউল ইসলাম বলেন, “আমাদের কিট প্রতিদিনই শেষ হয়ে যাচ্ছে। রোগীর ভিড় এত বেশি, কাউকে কাউকে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে।”

বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালগুলোতে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেককে মেঝেতে কিংবা বারান্দায় রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও স্যালাইন ঝোলানো হচ্ছে জানালার খাঁজে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. আহাদুল কবির বলেন, “বরিশালের পরিস্থিতি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। আমরা সেখানে অতিরিক্ত কিট পাঠিয়েছি। আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ দলও সেখানে কাজ শুরু করেছে। শুধু চিকিৎসা নয়, মশা নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “বরিশালের অভিজ্ঞতা বলছে, ডেঙ্গু এখন আর শহরের ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রামে-গঞ্জে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এখনই গ্রাম পর্যায়ে পানি জমা রোধ, কীটনাশক ছিটানো, ও সচেতনতামূলক প্রচার জোরদার না করলে সামনে বড় বিপদ আসবে।”

কিট নেই বহু এলাকায়
বরিশাল সদর উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেকে এখনো জানেই না ডেঙ্গু কী। তারা সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসা নিতে দেরি করে, তখন অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এমনকি অনেক জায়গায় ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটও নেই। বরিশালের গ্রামীণ জনপদে ডেঙ্গুর বিস্তার দেখিয়ে দিয়েছে। শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক উদ্যোগে এই রোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়।”

স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি, জনসচেতনতা, কীটনাশক কার্যক্রম সবকিছুই এখন চাই সারা দেশের, বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের জন্য।

ঢাকা/এএএম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ