মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে একটি বিদ্যালয় যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন।
গত শনিবার ঈদের দিন দুপুরে উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের ভাড়াঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনসহ একটি ওয়াশব্লক যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। ২০২২ সাল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি নদীভাঙনের মুখে পড়লেও ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকার।
বাঁচামারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ওয়াজেদ আলী জানান, গত কয়েক বছর ধরেই বিদ্যালয়টি যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নামমাত্র বালুর বস্তা ফেলেছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যেই স্থানীয়দের বাধার মুখে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ে একটি ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হয়। পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যায়নি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল পাশা জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল। শুক্রবার বিদ্যালয়ের একটি অংশ নদীতে ধসে পড়ে যায়। ঈদের দিন দুপুরে পুরো ভবনটি নদীতে চলে যায়। বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ার আগেই বেঞ্চ, টেবিল ও আসবাবপত্র রক্ষা করা গেছে। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে থাকার কারণে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ২ জন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষার্থী নেই। বিদ্যালয়ে মাত্র ৩ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিআরডি) দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার এনামুল সালেহীনের ভাষ্য, বিদ্যালয়টি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল তখন যমুনা নদী অনেক দূরে ছিল। কিন্তু বিদ্যালয় নির্মাণ শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে বিদ্যালয়ের কাছে চলে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিবছর ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হয়। এবার দ্রুত ভাঙনের কারণে বিদ্যালয় ভবনটির নিলাম ডাকার আগেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
নদীতে বিলীন হওয়ার আগে বিদ্যালয়টি নিলামে বিক্রি করা হলে সরকারি কোষাগারে কিছু টাকা জমা হতো। কেন বিলীনের আগেই বিদ্যালয়টির নিলাম করা হলো না– এমন প্রশ্নের জবাবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিয়ান নুরেন বলেন, দুই-তিন মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু দ্রুত ভাঙনের িকারণে নিলাম হওয়ার আগেই বিদ্যালয়টি নদীতে ভেসে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ১৯৯৬ সালে যমুনা নদীর পাড়ে চর জেগে ওঠে। চরের দুই পাড়েই যমুনা নদী। ১৯৯৮ সালের দিকে ওই চরে জনবসতি গড়ে ওঠে। এ ধরনের চরে কোনো স্থাপনা করতে হলে কারিগরি সমীক্ষার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে মতামত নেওয়া উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ২০২২ সাল থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষায় প্রতিবছর বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হয়। বিদ্যালয়ের পাশে নদীতে পর্যাপ্ত বালুর বস্তা ছিল। কিন্তু এবার ভাঙন শুরু হয় অন্য দিক দিয়ে। এতে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ হয়ে মাঝখানে বালু সরে গিয়ে এক দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ই ব দ য লয়ট ব ল র বস ত ব ল ন হয় র আগ ই হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে