Prothomalo:
2025-11-02@06:25:54 GMT

পরের ঝড়ে

Published: 12th, June 2025 GMT

ঘড়-ঘড়-ফুর্‌-ঘড় শব্দ হতে থাকে, তাই আন্টি ঠিক আরামে ঘুমাতে পারেন না। কানের ভেতর কেমন একটা যন্ত্রে যন্ত্রে ঘর্ষণের শব্দ বেজে উঠে প্রথমে প্রচণ্ড রাগ তৈরি করে, তারপর বিরক্তি। এত আওয়াজ কোত্থেকে আসছে? ঘড় ঘড় শব্দের চাপে ঘুমটা যখন ভাঙি ভাঙি করছে, তখন আন্টির মনে হতে থাকে, ভাড়াটে মেয়েটা বুঝি ভরদুপুরে ব্লেন্ডার চালু করেছে। আসলে হয়েছে কী, দুপুরে ভাত খেয়ে হাত ধুয়ে মুখ মুছে বারান্দায় এসে বেতের চেয়ারে বসতে না বসতেই ওনার ঘুম চলে এসেছিল—তন্দ্রা নয়, পুরোদস্তুর ঘুম—আর চেয়ারে প্রায় সিধা হয়ে বসে বসে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে ঘুমের মধ্যে প্রবল নাক ডাকতে শুরু করেছিলেন উনি। সাথে স্বপ্নও দেখছিলেন বুঝি অসংলগ্ন কিছু একটা। সেই সিধা বসে বসে নিজের নাক ডাকার আওয়াজ নিজের স্বরযন্ত্রের ভেতর থেকে নিজের কানে প্রবেশ করায় স্বপ্ন দেখার মাঝে যেই অ্যাবসার্ড ব্যাহতির ব্যাপারটা ঘটে, তাতে আন্টি কাকে যেন ‘হাই’ করে ধমকে জেগে ওঠেন। ঘুমটা ভেঙে আন্টির খুব লজ্জা লাগে। কারণ, উনি বুঝতে পারেন যে উনি নিজেই শব্দ করে নাক ডাকছিলেন।

নিজের নাক ডাকার শব্দে নিজে জেগে ওঠায় আন্টির চারপাশে এখন সবকিছু চুপচাপ মনে হয়। শুধু দূর থেকে কার বাড়ির যেন ঘরোয়া সহিংসতার ভোঁতা আওয়াজ ভেসে আসছে—জড় বস্তুর ওপর আঘাতের শব্দ, যেন ঘরের দরজায় লাগাতার ঘুষি আর লাথি মারছে কেউ; কিন্তু আসলে হয়তো কেউ মসলা পিষছে, বাটনা বাটছে—তাই আসলের মানুষগুলো গভীর রাত পেরিয়ে গভীর গভীর রাতেও যখন সেই বাড়ি থেকে ভেসে আসা মার খাওয়া মানুষের চিৎকার শুনবে, নির্বিকার থাকবে (থানা–পুলিশ তো করবেই না)। শেষ বিকেলের জাগতিক সব শব্দ নৈঃশব্দ্যের কাছাকাছি যেতে থাকে। ওই সব শব্দ নিজের নাক ডাকার শব্দের মতো নয়, শরীরযন্ত্রের বাইরে থেকে আসে, তাই আন্টির কাছে জগৎসংসার নিরলংকার লাগে। বারান্দার রেলিংয়ের ওই পাশে ভবঘুরের মতো দেখতে বিড়ালটা পর্যন্ত কোনো শব্দ না করে একটা নিচু মোড়ার মতো গুটিয়ে বসে আছে। বসে বসে আন্টিকে দেখছে। বিড়ালটার ঘাড়ের কাছে স্পষ্ট মার খাওয়ার দাগ। ক্ষত শুকিয়ে যাচ্ছে বিড়ালটার। তিনতলার বারান্দার রেলিংয়ের ওই পারে আধপোড়া বাড়িটা; দুপুরবেলা ওই লুট হয়ে যাওয়া বাড়িটা দেখতে অনেক কাছের মনে হয়। বিকেল পড়ে গিয়ে যখন সন্ধ্যা আসি আসি করে, তখন বাড়িটা দেখলে আন্টির মনে পড়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়া রক্তাক্ত শরীরগুলোর কথা, অজস্র লোক মিলে ওই বাড়িটায় হামলে পড়ার কথা, সেই অজস্র লোকের অ্যামিবা-শরীর নতুন করে বিভাজিত হয়ে আসা আরও আরও অজস্র লোকের চাটাই পেতে রাস্তা অবরোধ করে লুট হওয়া মালামাল নিয়ে মেলা বসানোর কথা।

ভেতরবাসায় সাদ্দামের মা শেফালি, আঙ্কেলকে বিছানা থেকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে বসাচ্ছে। আন্টি সাধারণত এ সময়টায় তদারকি করেন। কিন্তু আজ দুপুরের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আন্টির চেয়ার থেকে নড়তে বেজায় অবসাদ লাগছে। সাদ্দামের মা শেফালি, আন্টির মাথার পেছনে কয়েক গজ দূরেই, ‘খালু’ বলে আঙ্কেলকে ডাকে নরম স্বরে, পা টান টান করতে বলে, নিজের মনেই ‘হুঁ-উঁ’ বলে। কারণ, আঙ্কেলের হাত-পা হুইলচেয়ারে বিন্যস্ত করতে গিয়ে সাদ্দামের মা শিক্ষা পায় মানবশরীরের গঠন কেমন হয়ে থাকে; হাঁটু কতটুকু মেললে পিঠ কতটুকু কুঁজো করতেই হবে ইত্যাদি বোঝে শেফালি এবং মনের মধ্যে লেখে, তারপর আরও নানাবিধ অভ্যস্ত, মোলায়েম নির্দেশ দেয় আঙ্কেলকে। আন্টি আজ আর সেসবে মন দেন না, উনি এখন ফোনের ভেতরে ঢুকে গেছেন। ওসমান সেদিন এসে বাড়িতে নতুন রাউটার বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার কারণে বারান্দায় ওয়াই–ফাইয়ের সিগন্যাল ভালো পাওয়া যাচ্ছে; আগে ততটা ভালো ছিল না। এর আগে শাপলু অস্ট্রেলিয়া থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করলে কথা বলতে বলতে বারান্দায় এসে দাঁড়ানোমাত্র কথা কেটে যেত। অথচ ছেলেটা যখন বউকে লুকিয়ে সন্ধ্যারাতে মাকে ফোন করে (ওদের অস্ট্রেলিয়ায় তখন গভীর রাত), আন্টির খুব ভালো লাগে বারান্দায় আধো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে বারান্দার রেলিংয়ের ওই পারের অন্ধকার শহরের মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে। মা-ছেলের গোপন শলা বসেছে, এমন একটা নাটক মঞ্চস্থ করতে ভালো লাগে আন্টির। তাই অযথা সিসফিস-সিসফিস রকমের আওয়াজ করে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। কার্নিশের জোড়ার ধার ঘেঁষে পিঁপড়ার সারি হেঁটে যায় আর অন্ধকারে আন্টির পায়ের পাতায় উঠে গেলে আন্টি নিঃশব্দে পায়ে পিষে মেরে ফেলেন। অথচ আন্টি কার কাছ থেকে কথা লুকাতে চাইবেন? শাপলুর বউ না হয় তার মাকে দুই চোখে দেখতে পারে না, কিন্তু শাপলুর মা আন্টির কী প্রবলেম? আন্টির আছেন আঙ্কেল, যিনি স্মৃতিভ্রম থেকে মতিভ্রম দশায় এসে পড়েছেন। শাপলুর সঙ্গে আন্টির ফোনে ফোনে চলতে থাকা কথার মর্ম বোঝার ক্ষমতা আর নেই আঙ্কেলের। মর্ম তো অনেক জটিল মনোবৃত্তীয় বিষয়—আন্টি কে, শাপলু কে, ছেলেসন্তান ওনার কয়টা আছে, এসব স্মৃতিই আর আঙ্কেলের নেই। শাপলুর বউ আড়ালে আঙ্কেলকে ডাকে ভেজিটেবল। আন্টির শাপলুর বউকে নিষ্ঠুর মনে হয়।

আঙ্কেলকে হুইলচেয়ারে উঠিয়ে সাদ্দামের মা শেফালি ওনার পায়ের কাছে নকল বেতের মোড়ায় বসে। বসতে গিয়ে শেফালির এক পায়ের চপ্পল খুলে যায়। এক পায়ে চপ্পল পরা শেফালি নিচু হয়ে আঙ্কেলের পায়ে মোজা পরায়, মোজার ওপর ঘরের স্যান্ডেল পরিয়ে দেয়। ‘দেখি, এমন করেন দেখি; তেমন করেন দেখি’ রকমের কথা বলতে থাকে অবিরাম। রুটিন ব্যায়ামট্যায়াম শুরু হচ্ছে।

আন্টি মন দিয়ে ফোনে ভিডিও দেখেন। আঙ্কেল গতানুগতিক ‘গোঁ-গোঁ’ শব্দ করেন পেছন থেকে—হয়তো কিছু বলতে চান, কিন্তু ওই সব বুঝতে চাওয়ার সময় সবার ফুরিয়েছে বছরখানেক আগে। আন্টির ফোনের সব চ্যানেলে শুধু গত রাতের ঝড়ের খবর—কোথায় কোন উপকূল অঞ্চলে, কোন জলসংলগ্ন গ্রামে, কোন উপদ্রুত জেলায় কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কার দোষে হয়েছে, কোন দেশকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে—শুধু সেই সব। বেশিক্ষণ দেখতে বা শুনতে ইচ্ছা করে না আজ আন্টির। কয়েকটা ভিডিও টেনে টেনে দেখেন উনি; কয়েকটা দেখেন মোটে সাত বা পাঁচ সেকেন্ড বা বিশ সেকেন্ড। উচ্চকিত মিউজিক দিয়ে ইন্ট্রো বানানো ভিডিওগুলোর, নাটকীয় কিন্তু দুর্বল আর জড় স্বরপ্রক্ষেপণ ভিডিওর কথকদের। এসব ভালো লাগে না। ভালো করে কথা বলতে পারে না কেন কেউ আজকাল? আঙ্কেলের কষ্টবোধ্য গলার শব্দ অল্প পাল্টায়, নতুন স্বরধ্বনি শোনা যায় আবার পেছনে। সাদ্দামের মা শেফালি আঙ্কেলের সঙ্গে নিয়মিত কথোপকথন চালায় আন্টির মাথার পেছনে; শেফালি ‘হ্যাঁ’ বলে ‘হ’ বলে আরও নানান নিশ্চয়তাসূচক শব্দ বলে। তাতে আন্টির মনে হয়, এই বেলা আর পেছনের দিকে না তাকালেও চলবে। মাথার ওপরে বাল্বটা ফিউজ হয়ে গেল নাকি? শেফালি তো মনে হয়ে ভেতর দিকের সুইচ ফট্ করে চেপে বাল্বটা জ্বেলেই দিয়েছিল; জ্বলছে না কেন?

এটাও ভালোই।

‘সাদ্দামের মা, তোমার এই কাজ শেষ হইলে ওপরতলায় একটু উঁকি দিয়া আইসো তো’, ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ না তুলেই আন্টি বলেন, যদিও শেফালি জবাব দেয় না। ওপরতলায় ভাড়াটে মেয়েটা থাকে। অফিস শেষ হওয়ার পর পর বাড়ি ফেরে না সে এক দিনও; রাত করে ফেরে রোজ। প্রতি রাতে আন্টি জ্বলজ্বলে ফোন হাতে নিয়ে রাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে থাকেন অন্ধকারের জন্তুর মতো; অপেক্ষায় থাকেন কখন মেয়েটা ফেরে—মাঝরাতে রাগে চিড়বিড় করলে পরে শরীরটা একটু জুড়ায়। আঙ্কেলের হাবাগোবা ডাক, ছোট ছোট অসমাপ্ত বাক্যের চিৎকার, দিনমান গোঁ-গোঁ-গোঁ-গ্রা-গ্রা-গ্রা—এসব শেষে আন্টির শান্তি হয় শুধু গভীর রাত পেরিয়ে মেয়েটা ফিরবে, সেই রাগ পরিতর্পণে। মেয়েটাকে বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় শর্ত দেওয়া ছিল—আন্টিদের এক্সট্রা ডিপ ফ্রিজটা মেয়েটার ডাইনিংরুমেই রাখা থাকবে; যেকোনো সময় আন্টির কাজের মেয়েরা বা কেয়ারটেকাররা গিয়ে সেই ডিপ ফ্রিজ থেকে মাছ বা মাংস বা ফ্রোজেন রসমালাইয়ের বাটি বের করে নিতে পারবে। প্রথমে দরজায় দুবার টোকা দেবে; দরজা না খুললে চাবি দিয়ে দরজা খুলে কাজ সারবে। বাড়িতে কুটুম-টুটুম, মেহমান-জামাত বেড়াতে এলে বা বড় আয়োজন করে দাওয়াতিদের খেদমত করতে হলে বাপু মেয়েটার রান্নাঘরটাও ব্যবহার করতে দিতে হবে; আন্টির কাজের মেয়েরা সেখানে হাঁড়ি চড়াবে, বড় কাজের মেয়েটা ছোট কাজের মেয়েটার কাজ তদারকি করবে, রান্নাঘরের পেছনের চিলতে স্টোররুমে আন্টিদের পেঁয়াজ স্তূপ করে রাখা থাকবে। মেয়েটা এসব শর্তই মেনে নিয়েছিল—একা মেয়ে; না মানলে ওকে বাসা ভাড়া কে দেবে? মেয়েটা বাড়িতে না থাকলে আন্টি মাঝেমধ্যে স্পেয়ার চাবিটা হাতে নিয়ে চপ্পল ফট্টাত ফট্টাত করতে করতে ওপরতলায় গিয়ে দরজা খুলে ঢোকেন। মেঝেতে ধুলার আস্তর, ছি। আন্টি মেয়েটার শোবার ঘর-বৈঠকখানা-রান্নাঘর চক্কর কাটেন, লাগোয়া বাথরুমে কোন ব্র্যান্ডের লোশন আছে খেয়াল করে দেখেন, টেবিলের ওপরে রাখা ছোট ফটো-ফ্রেমে সাঁটা মেয়েটার বিগত মায়ের ছবি দেখেন—সিঁথি উপচে ঢালা সিঁদুর নাকের ওপরে পড়েছে প্রায়। আন্টি এই সবকিছু সাবধানে ও সুসভ্য মানুষের মতো দেখেন, হাত লাগান না কোনো কিছুতে।

কিন্তু মেয়েটা মনে হয় টের পেয়ে গেছে। সিঁড়িঘরে দেখা হলে আমাশয় রোগীর মতো নীরক্ত মুখে পাশ দিয়ে হেঁটে যায় সে; আগের মতো উচ্ছ্বাসে সালাম দেয় না—বিড়বিড় করতে করতে পাশ কেটে যায়; শাপশাপান্ত করল নাকি সালামের মতো কিছু একটা বলল, বোঝা যায় না। রাতে যখন ফেরে, বন্ধুটন্ধু নিয়ে ফেরে মাঝেমধ্যে। সেই রাতগুলোতে বাড়ির ছোট কাজের মেয়ে লতিফার সঙ্গে আন্টি প্রচণ্ড চিৎকার করেন, এই আশায় যে ওপরতলা পর্যন্ত ওনার চিৎকার পৌঁছাবে। বাসা ওনার, কিন্তু বাইরের কারা কারা এখানে আসে, কী–বা তাদের জন্ম ও বংশপরিচয়—ইশ্‌, কয়েকজন সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে বন্ধ দরজার এপার পর্যন্ত তাদের গায়ের সিগারেটের গন্ধ চলে আসে—এই রাগে আন্টি ‘ঘেন্না’ ‘ঘেন্না’ উচ্চারণ করতে থাকেন।

‘বুঝলা, সাদ্দামের মা? ওপরতলায় যাইও পরে। চাবিটা শেলফের উপ্রে আছে মনে হয়।’

‘খালাম্মা, আমি পারুম না। এমনে সে ট্যার যদি পাইয়া.

..লতিফারে যাইতে কন!’ শেফালি আঙ্কেলের নার্সই হবে শুধু, আন্টির ফুটফরমাশ খাটতে পারবে না।

*

‘Dhaka’s air quality is better than Helsinki today, after the last 12 hours of pouring rain.’

ঝড় শেষ হয়ে গতকাল থেকে শুরু হওয়া তুমুল বর্ষণও শেষ হয়েছে। সাদ্দামের মা শেফালি আঙ্কেলকে নোনতা বিস্কুট মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে এখন। অন্ধকারে বসে বসে আন্টি সমকালীন ঝড়গুলোর ভিডিও দেখতে থাকেন। একটা ঝড়ে কার যেন বাড়ির টিনের চাল হুড়মুড় করে উড়ে যাচ্ছে; বাড়ির মালিকের মাথার পেছনটা দেখা যাচ্ছে—লোকটার দুই হাত দিয়ে সেই মাথা পেছন থেকে চেপে ধরা আহাজারির ভঙ্গিতে। আরেকটা ঝড়ে কোন এক মেয়ের যেন পিঠের ওপর বিরাট এক ডাল ভেঙে পড়েছে, ভিডিওতে সেই মেয়ের হাত থেকে ছুটে যাওয়া বালতি গড়িয়ে পড়া দেখা যাচ্ছে এবং ভিডিওধারণকারী সেই মেয়েকে এবং সেই মেয়ের পিঠে পড়া ডালকে এবং আশপাশের সমবেত জনতাকে বাদ দিয়ে সেই গড়িয়ে পড়া বালতিকে ক্যামেরা দিয়ে ধরতে চাইছেন। এতে বালতিটা ক্ষণে ঝাপসা ক্ষণে স্পষ্ট হয়ে চলেছে এবং ক্যামেরার ঘেটি ক্রমাগত অ্যাডজাস্ট করতে থাকা আর ঘোরানোর গ্যাট গ্যাট শব্দ শোনা যাচ্ছে। আন্টি সেই ভিডিও–ও অফ করে দেন। ‘আহা, গ্রামের মানুষের কত কষ্ট’, এটা ভাবতেও তো দম নিতে হয়, নাকি না? এর জন্যও তো ভিডিও বন্ধ করার অবসর দরকার হয় আন্টির। না, আর গ্রামট্রামের ভিডিও দেখা যাবে না; ঢাকায় কী হয়েছে, জানা চাই, দেখা চাই—মানে অন্য ঢাকায়। আন্টিদের এই বাড়ি থেকে অনেক অনেক দূরের পাড়া ওই সব ঢাকার এলাকাগুলো।

ওই সব ঢাকার ভিডিও বেশ দেখছিলেন আন্টি। কোনো ট্র্যাজেডি নেই। শুধু জীবনের অমধ্যস্থতাকৃত তামাশা, দুঃখী আনন্দ আর তৎসংলগ্ন ক্রূরতা। ভিডিওতে এক ছেলে ভিডিও চিত্রগ্রাহক ব্যাকগ্রাউন্ডে বলে চলেছে, ‘আম্মুর সাথে বাজার থিকা ফিরতেছি, তাজমহল রোডের মেইন রোডে জ্যামে আটকায়া রইছি, হুট কইরা আম্মুর কান্ধে কী জানি পড়ছে! সবাই দেখি হুড়মুড় করতেছে, বাতাসে গাছ থিকা আম পড়তেছে। আম পড়তেছে, আম, গাইজ। সো গাইজ, চিল। ভয় পাবেন না। ঝড় খুব জোস একটা ব্যাপার, আজকে এইখানে দেখেন। আচ্ছা, গাইজ, দেখেন। দেখো। এরপর পোলাপান গাছের নিচে দাঁড়ায়া বাতাসের অপেক্ষা করতেছে আর কাড়াকাড়ি কইরা আম নিতেছে!’

আন্টির ছেলে শাপলুও মাঝেমধ্যে বলে ‘গাইজ’—আন্টিকে আঙ্কেলের সঙ্গে সমষ্টিগত বিশেষ্য দিয়ে একত্র করে চিহ্নিত করে। আঙ্কেলকে বলে ‘লাইক আ চাইল্ড’। আন্টির রাগ হয়; কাউকে ‘শিশু’ বলে ডাকলে শুধু তার অপরিণত অবস্থার প্রতি করুণা বা অনুকম্পা বোঝানো যায়; বিষের মতো ঘৃণা যে রকম হয়, সে রকম কিছু ঠিক আসে না সেই ডাকে। ওপরতলার ভাড়াটে মেয়েটাও এ রকম খণ্ডবোধক ইংরেজি শব্দ বলে। মিছিলে গিয়েছিল বুঝি মেয়েটা, তখন ভিডিও চিত্রগ্রাহকরা ওরও সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। মেয়েটা ভিডিওতে বলে এবং নিজের প্রোফাইলে লেখে লাইক লাইক, আয়্যাম লাইক, গাইজ-গাইজ-গাইজ। মেয়েটা পারেও বাবা চিৎকার করতে; তা–ও একদম মিছিলের সামনের সারিতে! বিচ্ছিরি। আন্টি ওই ভিডিও আবার খোঁজেন।

*

স্বপ্নে আন্টি সাপের মতো একটা সুচারু বক্ররেখায় গাছের মগডালে ওঠেননি; একটা বানরের মতো বিশৃঙ্খলভাবে এই ডালে সেই ডালে পা রেখে ঝুল খেয়ে তারপর উঠেছেন। প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। ঝড়ে আমগাছের সারা শরীর দুলছে। গাছের আগডাল-বাগডাল থেকে আম ছিঁড়ে ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ছে। গাছের নিচে শাপলু দাঁড়ানো, মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে সে, তাই আম কুড়াতে পারছে না। আন্টি গাছের ওপর থেকে চিৎকার করে বলছেন, ‘শাপলু, ওই যে, ওই যে! তোল না বাবু’, কিন্তু ছেলে মন দিয়ে খালি ভিডিওই করছে। আন্টি নিচে নেমে এসেছেন। গাছতলায় বিচিত্র রকমের মানুষ। সবার মুখ রং করা; মুখ রঙে ঢেকে মানুষগুলো নিজেদের হাতি-ঘোড়া-জেব্রা-চিতা পরিচয় জানান দিতে চাইছে। শাপলুটা গুড ফর নাথিং; আন্টি নিজেই চলচ্চিত্রের চঞ্চল মেয়েদের মতো আম কুড়ান। আন্টির গায়ে ওড়না নেই, মগডালে ফেলে এসেছেন। স্বপ্নে লজ্জাটজ্জা থাকে না। নিচু হয়ে আম কুড়াতে গিয়ে কার যেন খামচি খান বুকে। এত মানুষ! কে দিল খামচি? স্বপ্নে আন্টির আক্রান্ত শরীরটা একটা কম বয়সী মেয়ের শরীরের মতো অসাড় থাকে, কিন্তু একজন শেষ বয়সী মায়ের মন দিয়েই উনি সম্মানহানিটা অনুভব করেন। এ রকম ডিজোন্যান্সে পড়ে আন্টির আবার ঘুম ভেঙে যায়।

বাইরে মেঘের মতো কালো রাত। পাশের বিছানা থেকে আঙ্কেলের একটা হাত খাট পেরিয়ে ঝুলছে।

আন্টি বারান্দায় গিয়ে অকারণে কাঁদেন। মেহেদিরাঙা পাকা চুলে সর্দি লেপ্টে যায়। সেই কবেকার কথা—সাদ্দামের মা শেফালির আগে এই বাড়িতে কাজ করত সাদ্দামের খালা শিউলি। দুই কি তিনবার শিউলির পেট খসাতে হয়েছিল; অপরাধবোধে আঙ্কেল গয়না কিনে আনতেন, ঘরে এসি লাগাতেন, ওয়াশিং মেশিন আর ফ্রিজার কিনতেন। যা চলছিল, তা তবু ঘরের ভেতরই চলছিল তো; দু–একখানা চড়চাপড় যা খেয়েছেন আন্টি, ঘরের ভেতরই খেয়েছেন তো—এর চেয়ে কত খারাপও হতে পারত না কি? তবু আন্টি শেষবার আর পারেননি; শিউলিকে বিদায় করেছিলেন। তারও অনেক পরের এক রাতে, গরমকালের এক রাতে, স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার পরে, আঙ্কেল আন্টিকে শুয়ে শুয়ে লাথি মেরেছিলেন। ‘হারামজাদি, শিউলি, তুই বইলা দিবি? বইলা দিবি তুই?’ দামড়া পা–টা ছুড়ে অনর্গল ঘেউ ঘেউ করছিলেন আঙ্কেল। আসলে তত জোরেও পড়েনি লাথিটা। আর এবারই তো প্রথম নয়। তবু সেই রাতে কী যে হলো আন্টির! লাথি মারলেন, তা–ও সই—কিন্তু বউ মনে করে মারলেন না, কাজের মেয়ে শিউলি মনে করে মারলেন! কাজের মেয়ে, ছি! কাজের মেয়ে ভেবে লাথি মারার আগপর্যন্ত আঙ্কেলকে ক্ষমাই করে যেতে পারছিলেন আন্টি নিয়মিত। তা ক্ষমার স্মারকগুলো সব এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। গয়নাগুলো কিছু পেয়েছে ছেলের বউ, কিছু আছে লকারে; ওপরতলায় গেছে ডিপ ফ্রিজারটা। ছেলে-ছেলের বউ বিদেশ চলে গিয়ে ওপরতলা খালি হয়ে গেল, ভাড়াটে এল। ছেলে ভাড়াটে এল, মেয়ে ভাড়াটে এল, দম্পতি ভাড়াটে এল। কেউ টিকতে পারল না। ছেলের বউ বলে, ‘তোমার মা খাইষ্টা, দজ্জাল। ভয়ানক।’ ভাড়াটে মেয়েটাও বুঝি খারাপ খারাপ কথা ভাবে আন্টিকে নিয়ে। আন্টি অন্ধকারে বসে বসে চেয়ারের হাতল ছাড়া আঁকড়ে ধরার আর কিছু পান না। গভীর রাতে বেরেশতা ভাজার গন্ধ আসছে কোত্থেকে? খাঁটি ঘিয়ে ভাজা হচ্ছে তাও আবার। ঈদের দিনের গন্ধ এই ঝড়বৃষ্টিবিধৌত রাতের পরিষ্কার কালো বাতাসে। চাবি নিয়ে ওপরতলায় যাবেন নাকি এখন? রাত কি একটু বেশি হয়ে গেল?

*

ভাড়াটে মেয়েটা ডিপ ফ্রিজ খালি করে ফেলেছে—হে আল্লাহ! গভীর রাতে সে ঘটা করে কেজি তিনেক মাংস রান্না করছে। আন্টিদের গত কোরবানির মাংস অবলীলায় ফ্রিজ থেকে নামিয়ে বরফ-দশা ছাড়িয়ে গামলা ভরে মসলা মাখিয়ে উঁচু উঁচু করে রেখেছে মেয়েটা। ডাইনিং টেবিলের কাচের ওপর দুখানা গামলা, গামলার ধারে আর কাচের ওপর পশুরক্তের গোলাপি ফোঁটা। সব বাতি নিভিয়ে মেয়েটা জ্বালিয়ে রেখেছে শুধু বাহারি ল্যাম্পের দুর্বল হলুদ বাতি। এ মেয়েটা কি গরু-খাসি-উট-দুম্বা সব খায়? আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে সব মাংস কাঁচাই খেয়ে নেবে এই মেয়ে।

আন্টিকে ঢুকতে দেখে মেয়েটা একমুখ হাসি নিয়ে অ্যাশট্রেতে জ্বলন্ত সিগারেট গুঁজে দেয়। বাঁ হাত দিয়ে ফোন কানে চেপে রাখা মেয়েটার। মুখের হাসিটা হয়তো ফোনের ওই পারের ছেলেটার জন্যই ছিল: ‘দোস্তো, এখন ভাগি। আমার বাল বেরেশতা পুইড়া যাইতেছে চুলায়!’

কার অনুমতি নিয়ে মেয়ে এই ফ্রিজ খালি করল! আন্টি আহত হন। আমানতের খামখেয়ানত করেছে ভাড়াটে মেয়েটা, কেন? ‘আরে আন্টি! কিছু লাগবে ফ্রিজ থেকে? নিবেন কিছু? আসেন, আসেন প্লিজ। আমি একটু রান্না বসাইছি...’

মেয়েটা কেমনে যেন বোঝে, আন্টির কিছু একটা ঠিক নেই। আন্টি কিছু বোঝেন না—প্রথম কয়েক সেকেন্ড ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তারপর ঠিক করেন, বসবেন। মেয়েটার মুখোমুখি বসতে এগিয়ে যান। মেয়েটা কাপড় ঠিক করে না, অ্যাশট্রেটা সরায় না। ডাইনিংরুমে মসলা-মাখানো মাংসের ওপর মাছি বসে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ পল র ল র বউ র ওই প র ভ তর প রথম আওয় জ র ওপর ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ