Samakal:
2025-11-02@01:09:09 GMT

সংঘাত মোড় নিতে পারে যেসব দিকে

Published: 14th, June 2025 GMT

সংঘাত মোড় নিতে পারে যেসব দিকে

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করে তুলতে ও তার সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করতে ইসরায়েল ‘যতদিন সময় লাগে’ (সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ) হামলা চালিয়ে যাবে। ইরান ইতোমধ্যেই ইসরায়েলে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। সীমিত হলেও প্রতিশোধমূলক হামলার সুযোগ আছে। এতে আরও রক্তপাতের শঙ্কা বাড়বে। হয়তো এটা অনেকটা অনিবার্য। উত্তেজনা হ্রাস বা এ যুদ্ধের অবসান খুব তাড়াতাড়ি হবে– এমনটা ভাবার সময় এখনও আসেনি। তথাপি কয়েকটি দিকে এ সংঘাত মোড় নিতে পারে। 

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে গতকাল শনিবার ওয়াশিংটনভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসির বিশ্লেষণে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। এতে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য কয়েকটি পথ নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথমত, ইরান ইসরায়েলের ওপর বেশ কয়েকটি উচ্চ দৃশ্যমান সামরিক হামলা চালিয়ে তার নিজস্ব জনগণের কাছে দাবি করবে, তারা ইসরায়েলিদের পাল্টা আঘাত ও রক্তাক্ত করেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে তারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সংক্ষেপে বললে, মুখ রক্ষার জন্য একটি অনিচ্ছুক আত্মসমর্পণ।

মূলত, ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযানের পর এ পথেই হেঁটেছিল। প্রকৃত পক্ষে, ইরানে ইসরায়েলের চলমান অভিযানের সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে। যেমন– সামরিক অবকাঠামোর ওপর বিধ্বংসী হামলা, অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ও নেতৃত্বের ওপর হামলা, যা ইসরায়েলের প্রতিপক্ষের পুঙ্খানুপুঙ্খ গোয়েন্দা অনুপ্রবেশের প্রমাণ দেয়। হিজবুল্লাহ, যার বিশাল রকেট অস্ত্রাগার ও হাজার হাজার অস্ত্রধারী যোদ্ধা ছিল, কার্যকর পাল্টা আক্রমণ শুরু না করেই মূলত ইসরায়েলের শর্তে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

২০২৪ সালের হিজবুল্লাহর মতোই ইরানের অবস্থা হতে পারে। তখন ইসরায়েলের ওপর তাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ হয়। ইসরায়েলের আক্রমণ ইরানের নেতৃত্বকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলতে পারে। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমন্বয় করা বা বাস্তব সময়ে মৌলিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও তেহরান ঘোষণা করেছে, তারা দ্রুত শীর্ষ কমান্ডারদের প্রতিস্থাপন করছে। চলমান সংঘাতের সময় এ নতুন নেতৃত্বের কার্যকারিতা অস্পষ্ট। ইসরায়েল সম্ভবত প্রতিস্থাপনকারীদেরও ওপর আঘাত করবে। অবশ্যই, ইরান আক্রমণের মুখে আত্মসমর্পণ করতে চায় না। তবে তারা ক্রমাগত আঘাত সহ্যের চেয়ে আরও এক দিন বেঁচে থাকা ও লড়াইয়ের চেষ্টা করতে পারে।

দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, যুদ্ধ থামানোর জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির পাশাপাশি ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কয়েকটি আঘাত হানতে পারে। এটা হতে পারে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ভেদ করা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বা অন্য কোনো উপায়ে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টাও থাকবে। নাতাঞ্জ ও অন্যান্য স্থানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু ইরান তুলনামূলকভাবে দ্রুত মেরামত করতে সক্ষম।

সাধারণত ইসরায়েল যখন কারও ওপর হামলা চালায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের স্বল্পমেয়াদি সমর্থন পায়। কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে এ দেশগুলো দ্রুত শত্রুতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল হয়তো ইউরোপীয়দের মতামতের প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তারা গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও পাত্তা দেয়নি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামত নিয়ে বেশি চিন্তিত। যদি তিনি নেতানিয়াহুর ওপর প্রকৃত চাপ দেন, তাহলে ইসরায়েল অভিযান কমিয়ে আনতে পারে।

তবে পরিস্থিতি ফলপ্রসূ কূটনীতির দিকে পরিচালিত হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি চুক্তিতে চাপ দিচ্ছে। ইরান আলোচনাকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছিল। দেশটির শীর্ষ নেতাদের স্পষ্ট সমর্থনও ছিল। তবু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। ট্রাম্প এরই মধ্যে ইরানকে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এ ধরনের আলোচনা তেহরানের জন্য একটি নির্দিষ্ট আবেদন রাখে। দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা হ্রাসের প্রতিশ্রুতি আকর্ষণীয়। তবে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক অভিযানের পর ইরান টেবিলে সহজে বসবে না। পাশাপাশি রাজনৈতিক সমাধানও কঠিন হবে। ট্রাম্প যে কোনো ছাড়ের ব্যাপারে তর্কাতর্কি করবেন এবং ইরানকে মনে হবে যেন তারা চাপের মুখে নতিস্বীকার করছে, যা বিষয়টিকে জটিল করে তুলবে।

আরও অন্ধকার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সম্ভবত এটার শঙ্কাই বেশি। ইসরায়েল-ইরান লড়াই আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হবে। ইসরায়েলের হামলার আগে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের হুমকি দিয়েছিল– এমন আক্রমণ হলে যুক্তরাষ্ট্র হামলায় যোগ দেওয়ার শঙ্কা বাড়বে। 

হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব কারণে আরও উস্কানি দিতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা হয়তো মনে করছেন, ইসরায়েল অর্ধেক কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে, বাকি কাজটুকু তাদের। ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে অনেক গভীর প্রবেশ করতে পারে– এমন বোমার ব্যবহার হতে পারে। অথবা ইসরায়েলের প্রাথমিক আক্রমণের পর যা অবশিষ্ট রয়েছে, সেটা তারা করতে পারে। 
আপাতত অসম্ভব মনে হলেও মার্কিন আরব মিত্ররা এ লড়াইয়ে জড়িত হতে পারে। জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যেই ১৩ জুন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংসের কথা জানিয়েছে।

চূড়ান্ত আশঙ্কা হলো, যুদ্ধ কখনও শেষ হবে না। অন্তত আনুষ্ঠানিক অর্থে নয়। যদিও ইসরায়েলিদের বিশাল হামলার ঢেউ এক পর্যায়ে থামতে পারে। তবে আগামী কয়েক মাস ধরে নিম্ন স্তরের সংঘাত অব্যাহত থাকতে পারে। ইসরায়েল ইরানের ওপর মাঝে মাঝে ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা চালাতে পারে, সেই সঙ্গে ইরানে হত্যাকাণ্ড ও নাশকতাও ঘটতে পারে। ইরান সময়ে সময়ে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাবে। এটি সম্পূর্ণ যুদ্ধ নয়, তবে শান্তিও নয়; একটি অস্বস্তিকর অবস্থা।

ক্রমাগত আক্রমণ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ইরান অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিশ্রুতি ও আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের বাইরে একটি গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে পারে– ইসরায়েলের হামলাকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। যদি ইসরায়েল তিনটি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংরক্ষণাগারে আঘাত না করে, তাহলে তেহরানের জন্য কাজটি কঠিন হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি একটি বৃহত্তর পারমাণবিক চুক্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। ইরান হয়তো স্বল্প মেয়াদে এটা মেনে নিতে পারে। তবে প্রতিশোধমূলক হামলা অব্যাহত থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র আহ ব ন জ ন য ক তর ষ ট র ন র জন য ন ইসর য ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ