মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, কেউ বোমা মারলেও তিনি ভয় পাবেন না।

আজ মঙ্গলবার সকালে পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারপতিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার তরান্বিত করতে গত ৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। আজকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-২–এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পথ চলি। তার ওপর নির্ভর করে কাজ করি। কেউ বোমা মারলেও ভয় পাব না। কেউ গুলি করে মেরে ফেললে আমার সব গুনাহ নিয়ে যাবে। ফলে আমার ভয়ের কারণ নেই। আমি কবরের পাশে দাঁড়ানো, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভয়ের কিছু নেই। আমরা এই তরি বয়ে নিয়ে যাব।’

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, কিছু লোক গত ১৫ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। তারা নিষ্ঠুরভাবে শাসন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস করেনি। মানুষ নিজেদের কথা বলতে পারেনি। সেই ফ্যাসিস্টরা এখনো ফিরে আসার চেষ্টা করছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। তাঁদের অনেকে এখনো যথাযথ চিকিৎসা পাননি। বিচারকেরা চেষ্টা করছেন ছাত্র-জনতার দুর্ভোগ কমাতে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাঁদের নাম উল্লেখ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে তাঁরা কাজ করবেন। তাঁদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করা যায়। তাঁরা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলবেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিষয়গুলোও মেনে চলবেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

এ সময় ট্রাইব্যুনাল-২–এর সদস্য বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম চ ধ র ব চ রপত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন খামেনি

ইরানের ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন। মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত পাঁচজন ব্যক্তির মতে, খামেনি তার প্রধান সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হতে দেখেছেন, যা তার অভ্যন্তরীণ বৃত্তে বড় ধরনের শূন্য স্থান তৈরি করেছে এবং কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

খামেনির সাথে নিয়মিত বৈঠকে যোগদানকারী এই সূত্রগুলির মধ্যে এক জন তেহরানের প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিষয়ে ইরানের ভুল গণনার ঝুঁকিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী রেভুলিউশনারি গার্ডের সামগ্রিক কমান্ডার হোসেইন সালামি, এর মহাকাশ প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ যিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি রয়েছেন।

সূত্র অনুসারে, এই ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নেতার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের অংশ ছিলেন যাদের মধ্যে রক্ষী বাহিনীর কমান্ডার, ধর্মগুরু এবং রাজনীতিবিদরা ছিলেন। এই তিনজন ব্যক্তি প্রধান বিষয় নিয়ে নেতার সাথে বৈঠকে যোগ দিতেন এবং দুজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এসব বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।

এই দলটি খামেনির কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন। তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আদর্শের প্রতি অটল অনুগত ছিলেন।

ইরানের সরকার ব্যবস্থার অধীনে খামেনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ড, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখেন এবং সামরিক কমান্ডার ও বিচারকসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খামেনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, যদিও তিনি পরামর্শকে মূল্য দেন, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রায়শই তার পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য খোঁজেন।

ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের ইরান প্রোগ্রামের পরিচালক অ্যালেক্স ভাতাঙ্কা বলেন, “খামেনি সম্পর্কে আপনি দুটি কথা বলতে পারেন: তিনি অত্যন্ত একগুঁয়ে কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক। তিনি অত্যন্ত সতর্ক। এ কারণেই তিনি এতোদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন। খামেনি মৌলিক খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ করার জন্য বেশ ভালো অবস্থানে আছেন যা আসলে মৌলিকভাবে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়: শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা।”

ইসরায়েলি হামলা সেসব বিপ্লবী গার্ড কমান্ডারদের ধ্বংস করে দিয়েছে যাদেরকে খামেনি ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক কৌশল উভয়ের জন্যই তিনি এদের উপর নির্ভর করেছিলেন।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তে খামেনি এই অঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের হারানোর কারণে নিজেকে আরো নিঃসঙ্গ মনে করে থাকতে পারেন। কারণ ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ জোট ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইরানি নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন এবং ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে বিদ্রোহীরা উৎখাত করেন।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ