Samakal:
2025-06-18@01:13:39 GMT

বিয়ের আগে থাকুন চাপমুক্ত

Published: 17th, June 2025 GMT

বিয়ের আগে থাকুন চাপমুক্ত

বিয়ে মানেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা। বিয়ের পর শুধু জীবনের পরিবর্তন হয় না, সঙ্গে যোগ হয় নানারকম দায়িত্ব। বিয়ের দিনটা নিয়েই সবার মাতামাতি থাকে। তার পরের জীবনে মানিয়ে নিতে হয় পাত্র-পাত্রীকেই। এ কারণে বিয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত পাত্র এবং পাত্রী উভয়েরই বিয়ে মানে নতুন জীবন নিয়ে থাকে চাপা উত্তেজনা। তাদের কাছে শুধু বিয়ের দিনটাই নয়, তার পরের জীবনটা নিয়েও থাকে অনেক ধরনের চিন্তা, উদ্বেগ। বারবার মনে হতে থাকে বিয়ে নিয়ে তারা যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়িত হবে কিনা। উভয়ের ক্ষেত্রে নতুন পরিবার এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া নিয়েও থাকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিয়ের আগে থেকে যদি নিজেকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে টেনশন অনেকটা কমে যাবে। 
যারা বিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করছেন তারা নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে প্রাক্‌-বিবাহ কাউন্সেলিং করতে পারেন। চাইলে কিছু ঘরোয়া উপায়ও বেছে নিতে পারেন নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে। 
শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি হলো মানসিক প্রফুল্লতা। তাই সবসময় মন ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। মুখে হাসি, পর্যাপ্ত ঘুম আর অযথা নেতিবাচক চিন্তা না করা– এ তিনটিই আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখবে। 
মন ভালো রাখতে যা করবেন
সংগীত: সংগীত হলো সবচেয়ে ভালো ওষুধ। যখনই আপনি অতিরিক্ত মানসিক চাপ বোধ করবেন, তখন হালকা কোনো সংগীত বা গান শোনার চেষ্টা করুন। রাতে ঘুমানোর আগে কিংবা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার পথে হালকা গান শুনতে পারেন। মনে রাখবেন, ধীর মধুর সংগীত মনের চঞ্চলতা কমিয়ে তাকে শান্ত করে। শরীরের মধ্যে জমে থাকা টেনশন কম করে। 
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: যে কোনো পরিস্থিতিতে টেনশন কমাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সবসময় কার্যকর। শরীরের পেশিগুলোকে উত্তেজনামুক্ত করতে সারাদিনে যে কোনো সময়েই এ ব্যায়াম করা যায়। 
মেডিটেশন: মনের মধ্যে আসতে থাকা সব ধরনের বাজে চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি হচ্ছে মেডিটেশন করা। এ কৌশল মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। সারাদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট মেডিটেশন করতে পারলে উপকার পাবেন। 
শরীরচর্চা: শারীরিক শ্রম মানসিক চাপ কমাতে অনেক সাহায্য করে। শ্রমের কারণে শরীরে এনডরফিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যেটি শরীরকে রিলাক্স রাখতে সাহায্য করে।
জীবন উপভোগ করুন: বর্তমানকে উপভোগ করার নামই রিলাক্স করা। ভবিষ্যতে কী হবে এবং অতীতে কী হয়ে গেছে, সেসব চিন্তা করে বর্তমানের মুহূর্তকে নষ্ট করবেন না। যাদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা, যাদের ঘিরে জীবনের এতদিনের স্মৃতি তাদের সঙ্গে সময় কাটান। পরিবারের সবাই মিলে বাইরে খেতে যান, বসার ঘরে একসঙ্গে চায়ের আড্ডা দিন। একসঙ্গে বসে বিয়ের পরিকল্পনা করুন, দায়িত্ব ভাগ করে নিন সবাই মিলে। দেখবেন দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে যাবে। 
নিজের জন্য সময়: পরিবারে কিংবা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় কাজের চাপ বাড়ে। তাই বলে নিজের জন্য সময় বের করতে ভুলবেন না। নিজের শখের কোনো কাজ যেমন– বই পড়া, লেখালেখি, ছবি আঁকা ইত্যাদি করতে পারেন। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটান। 
মেলামেশা বাড়ান: অফিসে হোক বা অফিসের বাইরে কাজের ফাঁকে একটু-আধটু আড্ডা দিন, গল্প করুন। এটি মুড বুস্টার হিসেবে দারুণ কার্যকর। এর বাইরেও সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রটা বাড়ান। 
ইতিবাচক মনোভাব জরুরি
আপনার চিন্তাভাবনার মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতাকে স্থান দেবেন না। ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। শুরুতে নেতিবাচক ভাবনা এলেও, মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনুন। দেখবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
ক্লান্তি কাটাতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। এতে শরীর-মন দুই ভালো থাকবে। বেশি রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাটিং করা বা উত্তেজনাপূর্ণ কোনো ভিডিও দেখে ঘুম নষ্ট করবেন না। বিয়ের পর জীবনসঙ্গীর সঙ্গে স্বপ্ন সফল করতে হলে বিয়ের আগে পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে নিজেকে স্ট্রেস-ফ্রি রাখুন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর য প ত করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’