আমাদের একার নয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও দায়িত্ব আছে: মৎস্য উপদেষ্টা
Published: 19th, June 2025 GMT
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “ইলিশ আমাদেরকে সারা বিশ্বের কাছে একটা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। ইলিশ রক্ষা শুধু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একার দায়িত্ব নয়; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে।”
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মৎস্য অধিদপ্তর আয়োজিত সিরডাপ মিলনায়তনে "জাটকা ও ইলিশ সংরক্ষণ বাস্তবায়ন ২০২৪-২৫ এর মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
ইলিশের দাম নিয়ে জনসাধারণের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “ইলিশের দাম বেশি বলেই আমাদের বিরক্ত হওয়া উচিত নয়। যখন কিছু ভালো হয়, তখন এর দাম একটু বেশি হয়। ভালো জিনিস দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নয়-মাঝে মাঝে উপভোগ করা হয়। ইলিশ আমাদের জাতির গর্ব এবং এটি রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।”
আরো পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের দাবি
‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড গঠনে সহযোগিতা করবে সুইডেন’
ইলিশের দাম নিয়ে তিনি বলেন, “এ মাছের দাম ২০০০ টাকা কেজি হওয়া ঠিক হবে না। এই জাতীয় সম্পদকে সারা বিশ্বে মাত্র ১১টা দেশে পাওয়া যায়। তবে পদ্মা মেঘনার ইলিশের যে স্বাদ-এমন স্বাদ পৃথিবীর কোথাও নাই। অর্থাৎ এক এক অঞ্চলের ইলিশ এক এক স্বাদের হয়ে থাকে।”
তিনি আরো বলেন,“বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বিশেষ মূল্য নির্ধারণ করে ইলিশ বিক্রি করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে বাজারে এর একটা প্রভাব পড়বে। অহেতুক যেনো ইলিশের দাম বাড়ানো না হয় সেজন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার এবং আড়তদারদের সাথেও আলোচনা করব।”
কর্মশালায় বক্তারা উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালে শুরু হওয়া ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রজননকালে মৌসুমী নিষেধাজ্ঞা, জেলেদের বিকল্প জীবিকা নির্বাহের জন্য সহায়তা এবং ব্যাপক সচেতনতামূলক উদ্যোগের ফলে জাটকা মাছ ধরা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং ইলিশ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.
স্বাগত বক্তৃতা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আহসান হাসিব খান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বুদ্ধিতার পাঁচ আইন: সবার জন্য কঠিন আয়না
মানব সভ্যতার প্রতিটি বাঁকে আমরা বুদ্ধি, জ্ঞান আর উদ্ভাবনের সাফল্য দেখেছি; কিন্তু সাফল্যের ঠিক ছায়ায় থেকেছে এক অব্যক্ত শক্তি-নির্বুদ্ধিতা।
ইতালির অর্থনীতি-ইতিহাসবিদ কার্লো এম. চিপোলা ১৯৭০-এর দশকে এক ব্যঙ্গাত্মক কিন্তু তীক্ষ্ণ প্রবন্ধে এই শক্তিকে ‘পাঁচটি মৌলিক আইন’ এ ব্যাখ্যা করেছিলেন।। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে অধ্যাপনা করতেন; প্রবন্ধটি প্রথমে সীমিত পরিসরে ছাপা হয়েছিল, পরে “Allegro ma non troppo” গ্রন্থে সংযোজিত হয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে। চিপোলার উদ্দেশ্য ছিল একটাই-নির্বুদ্ধিতার ক্ষতি শনাক্ত করা, বোঝা এবং সম্ভব হলে প্রতিরোধ করা।
প্রথম আইন বলছ,-আমরা সব সময়ই নির্বোধ মানুষের সংখ্যা কম ধরে নিই। এ অনুমানের ভুলটা ধরা পড়ে ঠিক সেখানেই, যেখানে নিয়মিত কাজ হঠাৎ অকারণে থেমে যায়: কখনো নগর পরিবহনের রুট বদলিয়ে দিয়ে যাত্রীর সময় ও খরচ বাড়িয়ে তোলা, কখনো পরীক্ষার ক্যালেন্ডার বারবার পাল্টে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের পরিকল্পনাকে ভেঙে দেওয়া, কখনোইবা জনসেবায় নতুন ডিজিটাল সিস্টেম চালু করে আগাম প্রস্তুতি ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিষেবা অচল রাখা।
আমরা ভাবি, এমনটা আর হবে না; তবু আবার ঘটে। যাদের গতকাল যুক্তিবাদী লেগেছিল, তারাই আজ অপারগতায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় যে নাগরিকের সময়, অর্থ, শক্তি-সবই নষ্ট হয়। কারও বিশেষ ক্ষতিবোধই যেন সিদ্ধান্তের পূর্বশর্ত নয়-আর সেখানেই প্রথম আইনের নির্মম সত্যটি ধরা দেয়: আমরা যে ‘সংখ্যা’ কল্পনা করি, বাস্তবে নির্বোধ আচরণের প্রকোপ তা ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় আইন বলছে,কেউ নির্বোধ হবেন কি না, তা তাঁর অন্য কোনো বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে না। পদ, ডিগ্রি, আয়, শহর-মফস্বল, সরকারি-বেসরকারি-কিছুই নয়। একটি হাসপাতালে আপনি দেখবেন, সামনের সারির কর্মী ভুল করতে পারেন; আবার একইভাবে পরিকল্পনা টেবিলে বসেও কেউ সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর খুঁজতে ব্যর্থ হন। সবার মধ্যেই নির্দিষ্ট অনুপাতে নির্বোধ আচরণ দেখা যায়; করপোরেট বোর্ডরুমেও যেমন, স্থানীয় সমবায় সমিতিতেও তেমন। আমি নিজেও কি এর বাইরে? শিক্ষা-প্রশিক্ষণ অবশ্যই দরকার; কিন্তু কেবল ‘যোগ্যতার সনদ’ নির্বুদ্ধিতাকে আপনাআপনি সরিয়ে দেয় না। এই ‘সমবণ্টন’-এর বাস্তবতা বুঝলে বোঝা যায় কেন একই ধরনের ভুল কখনো প্রযুক্তি স্টার্টআপে, কখনো ক্রয়নীতিতে, কখনো খেলাধুলার সংগঠন চালনায় ঘুরে ঘুরে ফিরে আসে।
তৃতীয় আইনে মানুষকে চার ভাগে ভাবতে বলা হয়-বুদ্ধিমান, দস্যু, অসহায় ও নির্বোধ। বুদ্ধিমান সেই, যার কাজ দু’পক্ষেরই লাভ বাড়ায়; দস্যু নিজের লাভ করে অন্যের ক্ষতিতে; অসহায় নিজের ক্ষতিতে অন্যকে লাভ দেয়; আর নির্বোধ সেই, যে অন্যের ক্ষতি ঘটায়, অথচ নিজেও কোনো লাভ পায় না-বরং অনেক সময় ক্ষতিই বাড়িয়ে ফেলে। এই লেন্সে আমাদের দৈনন্দিন জীবনটা পরিষ্কার হয়।
ধরুন সড়কে সাময়িক উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হলো; পথচারী, চালক, দোকানি-সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কাজটি ত্বরান্বিত হলো না, ব্যয় বেড়েই চলল, ঠিকাদার-প্রশাসন দু’পক্ষেরই মাথাব্যথা বাড়ল-এখানে কারও প্রকৃত লাভ নেই, কিন্তু সবার ক্ষতি বাড়ছে। একইভাবে, বাজারে দাম ‘স্থির’ রাখার উদ্দেশ্যে আকস্মিক বিধিনিষেধ জারি করে জোগান ব্যাহত করা-ভোক্তার ভোগান্তি, বিক্রেতার লোকসান, রাজস্বের ধাক্কা-সব মিলিয়ে এই আচরণ বুদ্ধিমানের, দস্যুর বা অসহায়ের ফ্রেমে পড়ে না; এখানেই তৃতীয় আইনের ‘নির্বোধ’ আচরণের ক্ল্যাসিক উদাহরণ ধরা পড়ে।
চতুর্থ আইন সতর্ক করে, অ-নির্বোধরা, (অর্থাৎ বুদ্ধিমান, দস্যু বা অসহায়) প্রায়ই নির্বুদ্ধিতার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাকে হালকাভাবে নেন। মনে করেন, ‘ওকে একটু কাজে লাগিয়ে নিলে হবে’, ‘ওর সিদ্ধান্ত আমি সামলে নেব’—এই আত্মতুষ্টি থেকেই বিপদ।
বাস্তবে দেখা যায়, ‘সহজে সামলে নেওয়া যাবে’ ভেবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, সে ঠিক অপ্রত্যাশিত জায়গায় ভুলটি করে বসে-প্রকল্পের মাঝপথে নীতিমালা পাল্টায়, ডেটা ব্যাকআপ ছাড়া সিস্টেম আপডেট দেন, মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি ছাড়া নির্দেশনা জারি করেন। ফলে জটিলতা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়, যেখানে আগের সব ভরসা ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিবার-পরিচালনা থেকে অফিস, স্টার্টআপ থেকে রাজনীতি—সবখানেই এই ভুল অনুমান ঘটে; ‘নির্বোধকে নিয়ন্ত্রণ’ করা যাবে-কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণ নয়, উল্টো তার আচরণই খেলার নিয়ম বদলে দেয়।
পঞ্চম আইনের সারকথা, নির্বোধ মানুষই সবচেয়ে বিপজ্জনক, দস্যুর চেয়েও। কেননা দস্যু অন্তত নিজের লাভের জন্য ক্ষতি করে। সমাজের মোট আয়তনে এটি প্রায় শূন্য ফল যোগ করার মতো। একজনের প্লাস, অন্যজনের মাইনাস। কিন্তু নির্বোধের ক্ষেত্রে ‘প্লাস’ নেই, সবারই ‘মাইনাস’। বাস্তবে এই ‘সামষ্টিক মাইনাস’ দেখা যায় নানা খাতে পরীক্ষামূলক চালু না করেই বড়সড় আইটি সিস্টেম লাইভ করে সার্ভিস বন্ধ রাখা, প্রকল্প নকশায় ব্যবহারকারীর মতামত না নিয়েই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এমন স্থাপনা দাঁড় করানো, যা পরে ‘কম ব্যবহার’ বা ‘অপপ্রয়োগ’এর দগদগে উদাহরণ হয়।
খেলাধুলার সংগঠনে টুর্নামেন্ট ক্যালেন্ডার এমনভাবে সাজানো যে খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, সমর্থক, সবাই ক্লান্ত, স্পনসর-সম্প্রচারক অখুশি, অথচ কোনো টেকসই ব্র্যান্ড-ভ্যালু তৈরি হলো না; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মাঠপর্যায়ের সক্ষমতা না দেখে কাগুজে পরিকল্পনার পাহাড়-সব মিলিয়ে ক্ষতির ওপর ক্ষতি। দস্যুতা সমাজকে স্থবির করতে পারে; নির্বুদ্ধিতা সমাজকে অসহায় করে।
শিক্ষাক্ষেত্রে যখন পাঠ্যবিষয়, পরীক্ষা, ভর্তি-সবই ঘনঘন বদলায়, তখন ছাত্র-অভিভাবক-শিক্ষক-কেউই নিজের সময় ও মানসিক শক্তি পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করতে পারে না। স্বাস্থ্যখাতে, ওষুধ সরবরাহ শৃঙ্খল, মানবসম্পদ পদায়ন, আইটি-ডেটা ইন্টারঅপারেবিলিটি-এসব জায়গায় ছোট একটি ভুল, কেমন করে সিস্টেম-ওয়াইড ঝামেলায় পরিণত হয়, আমরা দেখেছি।এবার খাতভিত্তিক কিছু চশমা পরে দেখি। অর্থনীতিতে নির্বুদ্ধিতা দেখা যায় যখন নীতির ধারাবাহিকতা ও পূর্বাভাস যোগ্যতা ছাড়া সিদ্ধান্তে লাফ দেওয়া হয়-আয়কর-শুল্কে ঘনঘন ছোট পরিবর্তন, অথচ ব্যবসার পরিকল্পনা চক্র বছরজুড়ে; মুদ্রানীতিতে বার্তা অস্পষ্ট রাখায় বাজারে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া; সরকারি ক্রয়ে সর্বনিম্ন দরদাতার পেছনে ‘সর্বনিম্ন মান’ চলে আসা।
শিক্ষাক্ষেত্রে যখন পাঠ্যবিষয়, পরীক্ষা, ভর্তি-সবই ঘনঘন বদলায়, তখন ছাত্র-অভিভাবক-শিক্ষক-কেউই নিজের সময় ও মানসিক শক্তি পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করতে পারে না। স্বাস্থ্যখাতে, ওষুধ সরবরাহ শৃঙ্খল, মানবসম্পদ পদায়ন, আইটি-ডেটা ইন্টারঅপারেবিলিটি-এসব জায়গায় ছোট একটি ভুল, কেমন করে সিস্টেম-ওয়াইড ঝামেলায় পরিণত হয়, আমরা দেখেছি।
অবকাঠামোয়, নতুন সেতু, সড়ক বা টার্মিনাল খুলে দিয়ে সংযোগ সড়ক বা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রস্তুত না রাখা-লাভের বদলে সময়-জ্বালানি-স্নায়ু-সব জায়গায় ক্ষতি। প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবায়, ইউজার-টেস্ট ছাড়া বাধ্যতামূলক ই-ফর্ম করে ‘লাইনে দাঁড়ানোর’ কষ্টকে কেবল অনলাইনে স্থানান্তর করাও নির্বুদ্ধিতারই এক আধুনিক রূপ। খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতে, দীর্ঘমেয়াদি ট্যালেন্ট পাইপলাইন গড়ার বদলে কেবল তাৎক্ষণিক ফলের পেছনে দৌড়ে বছর শেষে শূন্য হাতে ফেরা-সব ক্ষেত্রেই সূত্রটি একই: সবার ক্ষতি, কারও স্থায়ী লাভ নয়।
চিপোলা দেখিয়েছিলেন, নির্বোধদের ‘হার’ সমাজে প্রায় স্থির থেকে যায়; পার্থক্যটা হয়-বাকিরা তাদের কতটা ‘স্পেস’ দেয়। যখন সমাজ ভালো করে, তখন বুদ্ধিমানরা (যারা দু’পক্ষেরই মঙ্গল বাড়ায়) বেশি সক্রিয় থাকে; অসহায় ও দস্যুর মধ্যেও ‘বুদ্ধির ছোঁয়া’ থাকে-ফলে কাজের নিট ফল ইতিবাচক হয়। আর যখন পিছিয়ে যায়, তখন দস্যুতার সঙ্গে নির্বুদ্ধিতার মিশ্রণ বাড়ে; অসহায়দের অংশও ফুলে ওঠে-ফলে নির্বুদ্ধি আচরণের সম্মিলিত প্রভাব ঘনীভূত হয়। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় আমরা দুই দিকই দেখেছি যখন ধারাবাহিক নীতি, বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন, মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি ছিল, তখন উন্নতি এসেছে; যখন তাড়াহুড়ো, ঘোষণামুখীতা, ‘চলেই যাবে’টাইপ মানসিকতা বড় হয়েছে, তখন খরচ বেড়েছে-অর্থেও, আস্থাতেও।
এখন প্রশ্ন-পরিত্রাণের রাস্তা কী? প্রথমত, ‘নিজের মনে সংখ্যা কম ধরা’—এই প্রবণতাকে নীতিগতভাবে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। যেকোনো বড় সিদ্ধান্তের আগে ছোট পরিসরে পাইলট, ব্যবহারকারী-পরীক্ষা, প্রিমর্টেম (আগেই ‘কী কী ভুল হতে পারে’ ধরে নেওয়া)—এসবকে বাধ্যতামূলক করা যায়।
দ্বিতীয়ত, ‘আমি সামলে নেব’—এই আত্মতুষ্টি ত্যাগ করে দায়িত্বের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নয়, প্রক্রিয়াকেই মূল হিসেবে বিবেচনা করা। চেকলিস্ট, রেড-টিম রিভিউ, পাবলিক ড্যাশবোর্ডে স্বচ্ছ অগ্রগতি-এসবই নির্বুদ্ধ আচরণকে আড়াল হতে দেয় না।
তৃতীয়ত, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বা প্রযুক্তি—সবখানেই নমনীয়তা ও শেখার সংস্কৃতি তৈরি করা, ভুল হলে দ্রুত সংশোধন, আর ফল না মিললে সাহস করে থামানো।
চতুর্থত, ব্যক্তিগত স্তরে-অফিস, পরিবার, দল-যেখানে-যেখানে ‘সবার ক্ষতি, কারও লাভ নয়’ এমন সংকেত দেখা যাবে তাকে ‘নির্বুদ্ধিতা’ হিসেবে বিবেচনা করে সময়মতো প্রতিরোধ গড়তে হবে।
চিপোলার আইন হাস্যরসের মোড়কে লেখা হলেও বার্তাটা নির্মম। নির্বুদ্ধিতাকে হালকা করে দেখলে খরচটা কেবল কিছু ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ নয়; খরচটা জমে জমে আস্থা, উৎপাদনশীলতা, জনকল্যাণ-সবখানে নেতিবাচক ছাপ ফেলে। পরিবারের বাজেট ভাঙে, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সরে যায়, রাষ্ট্রের উন্নয়নের গিয়ার আটকে যায়। তাই নীতিনির্ধারক থেকে নাগরিক—সবাই যদি মনে রাখি ‘নির্বোধ আচরণের প্রকৃত মূল্য সবার ক্ষতি, কারও স্থায়ী লাভ নয়’, তবেই ৫৪ বছরের শেখা পাঠ থেকে আমরা পরের ৫৪ বছরকে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্তের দিকে ঘোরাতে পারব।
চিপোলা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র- এই তিন স্তরেই এই আয়নাটা সামনে ধরেছিলেন যাতে আমরা একটু থেমে প্রশ্ন করি: যা করছি, তাতে কি দু’পক্ষের লাভ বাড়ছে, নাকি সবার ক্ষতি হচ্ছে? উত্তরটি স্পষ্ট হলে পথটাও স্পষ্ট হয়।
রিজওয়ান-উল-আলম সহযোগী অধ্যাপক,
মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়