বন্ধুর সনদ নিয়ে ১০ বছর চাকরি, প্রতারণার মামলার পর জালিয়াতি ফাঁস
Published: 22nd, June 2025 GMT
বন্ধু টিপু সুলতানের নাম ধারণ করে তাঁর সনদের ফটোকপি দিয়ে ১০ বছর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আসছিলেন রাজিব আলম। নিজের ছবি ছাড়া জীবনবৃত্তান্তে নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, সনদ—সবই ব্যবহার করেছেন বন্ধুর। এভাবেই রাজধানীর একটি প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় গুদামের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন।
সম্প্রতি রাজিব আলমসহ তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকার মালামাল আত্মসাতের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ প্রকৃত টিপু সুলতানের বাড়িতে নোটিশ পাঠালে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
রাজিব আলমের বাবার নাম আলতাব হোসেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিফপুর গ্রামে। তিনি ২০১১ সালে উপজেলার চন্ডিপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও তেঁতুলিয়া-পীরগাছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কারিগরি বিএম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।
একই গ্রামে বাড়ি টিপু সুলতানের। বাবার নাম খয়বার আলী। টিপু সুলতান উপজেলার নওটিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি, শরীফাবাদ মহাবিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি ও রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। টিপু সুলতান সাত থেকে আট বছর ধরে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বর্তমানে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পলমল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় গুদামের এজিএম (স্টোর) মশিউর রহমান (আইডি নম্বর ৮৩৯৫) ও রাজিব আলম (কাগজে–কলমে টিপু সুলতান আইডি নম্বর ৮৩৯৫) সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। হিসাব নিরীক্ষণে ধরা পড়ে মশিউর ও রাজিবসহ কয়েকজনের যোগসাজশে অপরাধমূলক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে কোম্পানির কেন্দ্রীয় গুদামের এজিএম ফজলুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। পুলিশ ঠিকানা ধরে টিপু সুলতানের বাড়িতে নোটিশ নিয়ে গেলে বিস্তারিত জানতে পারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, আশুলিয়া থানা থেকে সম্প্রতি তাঁর বদলি হয়েছে। মামলার তদন্তভার তিনি অন্য একজন কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করবেন। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে।
এ বিষয়ে টিপু সুলতান বলেন, ‘রাজিব আমার সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করছে, সেটা আমার জানা ছিল না। মামলার পর আমার বাড়িতে পুলিশ গেলে জানতে পারি। বাঘা থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে একটি জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি নেয়নি। পরে চারঘাট সেনা ক্যাম্পে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে আইনি জটিলতা হয় কি না, সে বিষয়ে আশঙ্কা করছি।’
রাজিব আলমের বাবা আলতাব হোসেন বলেন, বিষয়টি তাঁরা মীমাংসা করে নেবেন। কারও কোনো সমস্যা হবে না।
মামলার বাদী কোম্পানির এজিএম ফজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। টিপু সুলতানের ভাই তাঁকে ফোন করে সব বলেছেন। তিনি রাজিব আলমের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি আদালতে জমা দিয়েছেন। নির্দোষ টিপু সুলতানের যাতে কিছু না হয়, ব্যাপারটি তিনি দেখবেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেছেন। নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেবেন। তাঁর মতামতের বাইরে কিছু হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ ব আলম কর মকর ত ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদলের কর্মী নিহত, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
পঞ্চগড়ে ছুরিকাঘাতে জাবেদ উমর (১৮) নামের ছাত্রদলের একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে শহরের সিনেমা হল মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নিহত জাবেদ উমর ওরফে জয় পঞ্চগড় পৌরসভার পুরাতন ক্যাম্প এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি পঞ্চগড় বাজারে একটি ফলের দোকানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি পঞ্চগড় পৌর ছাত্রদলের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনার জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রাতে শহরে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন।
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্বশত্রুতার জেরে ওই তরুণকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ ঘটনায় পঞ্চগড় পৌরসভার নতুনবস্তি-খালপাড়া এলাকার দুই তরুণ জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত আটটার পর পঞ্চগড় বাজারের সিনেমা হল মার্কেটে কয়েকজন তরুণ জটলা করে কথা-কাটাকাটি করছিলেন। একপর্যায়ে জাবেদ উমরের পেটে ছুরি মেরে পালিয়ে যান কয়েকজন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাপতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। তবে রংপুরে নেওয়ার পথেই জাবেদ উমরের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর লাশ নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ করেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শইমী ইমতিয়াজ গতকাল রাতে বলেন, ‘আমরা রাত পৌনে ৯টার দিকে খবর পাই, সিনেমা হল মার্কেট এলাকায় জয় (জাবেদ উমর) নামে একজন তরুণ ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। রংপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আল আমিন ও পারভেজ নামের দুজন তরুণের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
শইমী ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘মৃত্যুর পর ওই তরুণের লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। দ্রুততম সময়ে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।’