গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোর মধ্যে থেকে কৃষি খাতে কোনো গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা ও গভীর দুর্নীতির কারণে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর হয় না। বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ফসলের লাভজনক দাম কৃষককে সংগ্রাম করেই আদায় করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি খাতে কৃষিতে বাস্তব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন। ‘কৃষি খাতের সরকারি বাজেট বরাদ্দ ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি’ শিরোনামে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি।

সেমিনারের শুরুতেই কৃষি খাতে বিনিয়োগে বাড়ানোর বিষয়ে সংগঠনের বক্তব্য নিয়ে একটি ধারণাপত্র উত্থাপন করেন কৃষক মজুর সংহতির যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক। তিনি বলেন, গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোর মধ্যে থেকে কৃষি খাতে কোনো গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা ও গভীর দুর্নীতির কারণে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর হয় না।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘বাজেটের কাঠামো গতানুগতিক ও নিস্পৃহ। এই বাস্তবতায় কৃষকের পক্ষে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায় না। রাষ্ট্রের কাঠামো যখন কৃষকের কথা শোনে না, তখন লড়াই করেই নিজেদের হিস্যা আদায় করতে হয়।’ তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কৃষিবান্ধব অর্থনীতির জন্য একটি সাহসী ও টেকসই উদ্যোগ নেবে। কৃষক যেন প্রকৃত উপকারভোগী হন, বিএনপি সে লক্ষ্যেই কাজ করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ অপরিহার্য। তবে সেই বিনিয়োগ এমন হতে হবে, যা একদিকে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে, অন্যদিকে মাটি, পানি, প্রাণ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে।

বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ফসলের লাভজনক দাম কৃষককে সংগ্রাম করেই আদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেন কৃষক মজুর সংহতির সভাপতি দেওয়ান আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতে কৃষিতে বাস্তব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় কৃষক জোটের সাধারণ সম্পাদক আশেক ই ইলাহি, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, কৃষক মজুর সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন ফারাজি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত ন গত ক ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী

জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।

একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।

এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ