গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোয় থেকে কৃষি খাতে গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়
Published: 22nd, June 2025 GMT
গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোর মধ্যে থেকে কৃষি খাতে কোনো গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা ও গভীর দুর্নীতির কারণে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর হয় না। বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ফসলের লাভজনক দাম কৃষককে সংগ্রাম করেই আদায় করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি খাতে কৃষিতে বাস্তব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন। ‘কৃষি খাতের সরকারি বাজেট বরাদ্দ ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি’ শিরোনামে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতি।
সেমিনারের শুরুতেই কৃষি খাতে বিনিয়োগে বাড়ানোর বিষয়ে সংগঠনের বক্তব্য নিয়ে একটি ধারণাপত্র উত্থাপন করেন কৃষক মজুর সংহতির যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক। তিনি বলেন, গতানুগতিক বাজেট–কাঠামোর মধ্যে থেকে কৃষি খাতে কোনো গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা ও গভীর দুর্নীতির কারণে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যকর হয় না।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘বাজেটের কাঠামো গতানুগতিক ও নিস্পৃহ। এই বাস্তবতায় কৃষকের পক্ষে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায় না। রাষ্ট্রের কাঠামো যখন কৃষকের কথা শোনে না, তখন লড়াই করেই নিজেদের হিস্যা আদায় করতে হয়।’ তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কৃষিবান্ধব অর্থনীতির জন্য একটি সাহসী ও টেকসই উদ্যোগ নেবে। কৃষক যেন প্রকৃত উপকারভোগী হন, বিএনপি সে লক্ষ্যেই কাজ করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ অপরিহার্য। তবে সেই বিনিয়োগ এমন হতে হবে, যা একদিকে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করে, অন্যদিকে মাটি, পানি, প্রাণ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে।
বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ফসলের লাভজনক দাম কৃষককে সংগ্রাম করেই আদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেন কৃষক মজুর সংহতির সভাপতি দেওয়ান আবদুর রশীদ। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতে কৃষিতে বাস্তব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় কৃষক জোটের সাধারণ সম্পাদক আশেক ই ইলাহি, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, কৃষক মজুর সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন ফারাজি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তামাক চাষ ছেড়ে পেঁপেতে বাজিমাত
তামাক চাষ ছেড়ে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে প্রথমবারেই দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার কৃষক জামিরুল ইসলাম।
মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন এবং দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন তিনি। এরইমধ্যে তিনি পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। জমি থেকেই কাঁচা পেঁপে পাইকারী ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বেশ খুশি তিনি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। ছোট-বড়-মাঝারি এবং ফুলও ধরেছে। এক একটি গাছ থেকে এ মৌসুমে প্রায় এক মণ করে পেঁপে সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করেন জামিরুল ইসলাম।
ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন জামিরুল ইসলাম। ধান চাষের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করেন তিনি। তামাকে পরিশ্রম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে চায়ের দোকান খুলেছেন। কৃষি পেশা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্য সবজি চাষের উপরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সহায়তায় পেঁপের চাষ করেছেন। তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জামিরুল ইসলাম বলেন, “আপনারা গাছে পেঁপে দেখছেন, কিন্তু আমি দেখছি টাকা। আমার মনে হচ্ছে গাছে টাকা ঝুলছে। এক একটি পেঁপে মানে ১০/২০ টাকার নোট।”
তিনি আরো বলেন, “আমি মূলত এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু উপজেলা থেকে ট্রেনিং নিয়ে এবার প্রথম পেঁপের চাষ শুরু করেছি। কীভাবে পেঁপের চাষ করতে হবে, কখন কী পরিচর্যা করতে হবে সবকিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে কৃষি অফিসের লোকজন। আমি নিজেই ওয়ানটাইম চায়ের কাপে পেঁপের চারা উৎপাদন করে রোপন করেছি। জমি চাষাবাদ ও পরিচর্যা করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দিয়েছে। বাকীটুকু নিজের খরচে করেছি।”
জামিরুল বলেন, “আমার এই জমিতে ৪০০ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই আশা করছি এক মণের কাছাকাছি করে পেঁপে পাব। এটা বিক্রির জন্য আমাকে বাজারেও নিতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা এসে বাগান থেকেই পেঁপে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি এই মৌসুমেই আমি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারব। যেখানে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো।”
স্থানীয় কৃষক আয়নাল ইসলাম জানান, এক এক গাছে যে এত পেঁপে ধরে তা কখনো জানতাম না। আমরা জামিরুল এর বাগান দেখে বুঝছি এখন যে পেঁপে চাষ কতটা লাভজনক। তামাকের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক এই পেঁপে চাষ।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম জানান, “আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক উচ্চমুল্য সবজি ও ফল চাষে পরামর্শ প্রদান করছি। সেই সাথে কৃষক জামিরুল ইসলামকে পেঁপে চাষে পরামর্শ প্রদান করেছি। নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা প্রদান করছি। পেঁপে চাষটা বেশ লাভজনক হওয়ায় এরইমধ্যে আরো ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ বৃদ্ধি পেঁয়েছে এই এলাকায়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং উচ্চমূল্য সবজি। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বর্তমানে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পেঁপে চাষে কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছি।”
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, “খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য কৃষকদের নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপকরণ ও সহায়তা প্রদান করছি। সেই সাথে বাজারজাত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। মিরপুর উপজেলা কৃষক জামিরুল ইসলাকে আমাদের প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে পেঁপে চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সাথে তাকে চাষাবাদের জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচও দেওয়া হয়। ফলে তিনি পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেক কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস