বেনাপোল কাস্টম হাউসে কলমবিরতি, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন
Published: 23rd, June 2025 GMT
যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবারও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি কর্মকর্তারা। এতে বিপাকে পড়েন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কার ও সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো.
আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারে বসেননি। ফলে এ সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকে। শুল্কায়ন–সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রে কোনো কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেননি। এ সময়ে কোনো পণ্যের শুল্কায়নও হয়নি। এতে ব্যবসায়ী ও পণ্য ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টরা বিপাকে পড়েন বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর ব্যবহারকারী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি কর্মসূচিতে আমাদের সমস্যা হয়। যদিও দুপুরের পরে আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত সব ফাইলে কর্মকর্তারা সই করে দেন। কিন্তু ব্যাংক তো বিকেল চারটার পর আর টাকা জমা নেয় না। এতে পণ্যের শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম নেওয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমেছে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমাদেরও কলমবিরতি করতে হচ্ছে। না হলে আমরা দলছুট হয়ে যাব। তবে আমদানি-রপ্তানিতে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। আমরা দিনের সব ফাইলে বিকেলে স্বাক্ষর করে দিচ্ছি। কোনো ফাইল পেন্ডিং থাকবে না।’
সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যানারে ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন।
২৫ মে রাতে অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়; বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এর ফলে ২৬ মে কলমবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর। এখন আবার সেই কলমবিরতি কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সোমবার কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন শুল্ক–কর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা
আগামী সোমবার সারা দেশের শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
আজ শনিবার বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা বক্তব্য দেন।
এনবিআরে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন করছে। আজকের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তাঁর মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয় বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে। উল্লেখ্য, আগে থেকেই ঐক্য পরিষদ রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৯ জুন এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর ও কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। আবার এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
আজ বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভায় অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারকে সভাপতি ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকাকে মহাসচিব করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সামগ্রিক রাজস্ব সংস্কার ভাবনার অংশ হিসেবে ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত আবেদন দেওয়ার পরও কক্ষ বরাদ্দ প্রদান না করায় তীব্র নিন্দা জানানো করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
গত ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় আজ একটি কমিটি গঠন করা হলো।