উপকূলীয় বনসহ দেশের সব ধরনের বনভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারের প্রণীত বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে একটি নীতিগত প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে বনভূমি শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় নয়– মানুষের জীবিকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বিদ্যমান আইনি কাঠামোর সংস্কার ও যুগোপযোগী নীতি প্রণয়ন সময়ের দাবি।

এই লক্ষ্যে সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে কর্মশালার আয়োজন করে বেলা। ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালায় সহযোগিতা করে অক্সফ্যাম বাংলাদেশ, কোডেক ও ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)।

বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, বন আইন ১৯২৭-এ ‘বন’ বলতে কী বোঝায়, তার কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। এমনকি বন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও দায়িত্ব সম্পর্কেও পরিষ্কার নির্দেশনা নেই। ফলে বন রক্ষার কাজে আইনগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্য ও বন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকল্প প্রণয়নের সময় বন ধ্বংসের ঝুঁকি ও পরিবেশগত মূল্যায়ন যথাযথভাবে বিবেচনায় নেয় না। উদাহরণ হিসেবে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণে ৭ লাখ ২০ হাজার গাছ ও ২৬টি পাহাড় কাটা হয়েছে। তিনি অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বন আইনের সমন্বয়, ২০২৪ সালের বন নীতি সংশোধন, বনের মালিকানা পুনর্গঠন, বন উজাড়ের দায় নির্ধারণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপকূলীয় বন সংরক্ষণের জন্য আলাদা নীতি প্রণয়ন করারও সুপারিশ করেন। 

কর্মশালায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, বন ব্যবস্থাপনায়  স্থানভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহায়তা পদ্ধতির মতো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইন সংস্কার ছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সফল হবে না। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভূ-স্থানিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ ইসমত এনান কর্মশালায়  স্থানভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহায়তা পদ্ধতি নামক একটি ভূ-তথ্যভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর টুল উপস্থাপন করে বলেন, এটা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বন, ভূমি ও পরিবেশ সংরক্ষণে মানচিত্র, স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য স্থানিক ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, অনিয়ন্ত্রিত গাছ কাটা ও চিংড়ি চাষে প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকাতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহ-ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের দ্বিতীয় সচিব জেকব ডি লিওন বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় আইন থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, দক্ষ জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি।

প্যানেল আলোচনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.

ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, বহু বছর ধরে সহ-ব্যবস্থাপনার নামে প্রকল্প চলছে, কিন্তু বনবাসীদের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি।

বন বিভাগের প্রধান সংরক্ষক (সিসিএফ) সানাউল্লাহ বলেন, বাস্তবভিত্তিক বন সংরক্ষণে ভূমি প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ উপদ ষ ট ব যবস থ পর ব শ ন স রক ন আইন জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা দক্ষিণে ৩৮৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৮৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

বুধবার (৬ আগস্ট) ডিএসসিসি নগর ভবনের মিলনায়তনে সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এই বাজেট ঘোষণা করেন। এ সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসসিসি পরিচালনা কমিটির ৭ম করপোরেশন সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়। বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৩২০.৪৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৬৩৫.৩৩ কোটি টাকা, ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন ব্যয় ৮৭৬.৬৪ কোটি টাকা এবং মোট ডিএসসিসি, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তায় উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ১৪৬৯.২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুন:

তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ সভাপতির

বাজেট: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা

বাজেটের প্রধান খাতসমূহের মধ্যে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো খাতে ৩৬৫.১১ কোটি, খাল উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন খাতে ১১৫.০০ কোটি, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ৫৭.২০ কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য খাতে ৫৭.৪৪ কোটি, বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ উন্নয়ন খাতে ৫.২৬ কোটি এবং কল্যাণমূলক খাতে ১৩.৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এটি আমাদের কাছে সম্মানিত করদাতাদের আমানত।”

উচ্চাভিলাষী বড় অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন না করে বাস্তবায়নযোগ্য যৌক্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নগরবাসীর অতিরিক্ত করারোপ বা কর হার বৃদ্ধি না করে ক্ষেত্রমত বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে।”

বাজেট উপস্থাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই ঘোষণাপত্রের নীরব প্রতিবাদ জানাতে কক্সবাজার গিয়েছি: হাসনাত
  • নীতিমালা সংশোধনে ইসিকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম সাংবাদিকদের
  • জবি প্রশাসনের ‘দায়সারা’ জবাবের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
  • ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী
  • ঢাকা দক্ষিণে ৩৮৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা
  • জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে আগামী নির্বাচন: জামায়াত