বন রক্ষায় নীতিগত প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করেছে বেলা
Published: 23rd, June 2025 GMT
উপকূলীয় বনসহ দেশের সব ধরনের বনভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারের প্রণীত বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে একটি নীতিগত প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে বনভূমি শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় নয়– মানুষের জীবিকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বিদ্যমান আইনি কাঠামোর সংস্কার ও যুগোপযোগী নীতি প্রণয়ন সময়ের দাবি।
এই লক্ষ্যে সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে কর্মশালার আয়োজন করে বেলা। ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালায় সহযোগিতা করে অক্সফ্যাম বাংলাদেশ, কোডেক ও ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)।
বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, বন আইন ১৯২৭-এ ‘বন’ বলতে কী বোঝায়, তার কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। এমনকি বন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ও দায়িত্ব সম্পর্কেও পরিষ্কার নির্দেশনা নেই। ফলে বন রক্ষার কাজে আইনগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্য ও বন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকল্প প্রণয়নের সময় বন ধ্বংসের ঝুঁকি ও পরিবেশগত মূল্যায়ন যথাযথভাবে বিবেচনায় নেয় না। উদাহরণ হিসেবে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণে ৭ লাখ ২০ হাজার গাছ ও ২৬টি পাহাড় কাটা হয়েছে। তিনি অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বন আইনের সমন্বয়, ২০২৪ সালের বন নীতি সংশোধন, বনের মালিকানা পুনর্গঠন, বন উজাড়ের দায় নির্ধারণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপকূলীয় বন সংরক্ষণের জন্য আলাদা নীতি প্রণয়ন করারও সুপারিশ করেন।
কর্মশালায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, বন ব্যবস্থাপনায় স্থানভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহায়তা পদ্ধতির মতো প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইন সংস্কার ছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সফল হবে না। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভূ-স্থানিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ ইসমত এনান কর্মশালায় স্থানভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহায়তা পদ্ধতি নামক একটি ভূ-তথ্যভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর টুল উপস্থাপন করে বলেন, এটা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বন, ভূমি ও পরিবেশ সংরক্ষণে মানচিত্র, স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য স্থানিক ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, অনিয়ন্ত্রিত গাছ কাটা ও চিংড়ি চাষে প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকাতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহ-ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের দ্বিতীয় সচিব জেকব ডি লিওন বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় আইন থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, দক্ষ জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি।
প্যানেল আলোচনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
বন বিভাগের প্রধান সংরক্ষক (সিসিএফ) সানাউল্লাহ বলেন, বাস্তবভিত্তিক বন সংরক্ষণে ভূমি প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ উপদ ষ ট ব যবস থ পর ব শ ন স রক ন আইন জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআর বিলুপ্ত করে কি টেকসই রাজস্ব সংস্কৃতি নিশ্চিত করা যাবে
‘লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন’ বা ‘ন্যায্য প্রত্যাশা’ মতবাদটি হলো প্রশাসনিক আইনের একটি ‘ডকট্রিন’ বা নীতি। কোর্টরুমে (আদালতে) সাংবিধানিক বিষয়াদি নিয়ে প্র্যাকটিস করা আইনজীবীদের জন্য এটা নিত্য রেফারেন্সের অংশ, যা জুডিশিয়াল রিভিউ বা বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেসব দেশে ‘কমন ল’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, সেসব প্রতিটি দেশেই ‘ন্যায্য বা বৈধ প্রত্যাশা’ নীতির প্রচলন আছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির সিদ্ধান্তটি লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন নীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
২.প্রথা ও আইন অনুযায়ী কোনো চাকরিজীবী আবহমান সময় ধরে কোনো বৈধ সুবিধা ভোগ করে থাকলে কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশে তা বাতিল (রিভোক) করা হলে সেটাকে ন্যায্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সরকারপ্রদত্ত কোনো সুবিধা ভোগ করে থাকলে এবং আদেশের পর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে (কোনো আইন বা অধ্যাদেশের কারণে) ভুক্তভোগী চাকরিজীবী বা নাগরিক ‘ন্যায়বিচারের নীতি’ (প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিস) এবং ন্যায্যতার (ফেয়ারনেস) কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওই আদেশ বাতিলের জন্য চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কর্তৃপক্ষকে ওই কাজ করা থেকে বিরত রাখতে উচ্চ আদালতে জুডিশিয়াল রিভিউর মাধ্যমে নির্দেশনা চাইতে পারেন।
সম্প্রতি এনবিআর বিলুপ্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্যতাপ্রত্যাশী কর্মকর্তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, কারণ নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সচিব তথা সর্বোচ্চ পদপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। যদিও সরকারের নীতি সিদ্ধান্ত (পলিসি) বিষয় নিয়ে রিট করে সুবিধা পাওয়া যায় না, কিন্তু নীতি যদি ভারসাম্যহীনভাবে কারও ন্যায্য প্রত্যাশা যা অনুশীলিত হয়ে আসছিল, তা থেকে বঞ্চিত করে, সে ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের শেষ শর্ত পূরণ করতে জাতীয় রাজস্ব বিভাগ (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। বাজেট সহায়তার ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। পাঁচ মাস আগে বিশ্বব্যাংক সরকারকে ৯টি শর্ত দিয়েছিল। আটটি এর আগে পূরণ করা হয়েছে। (সমকাল, ১৪ মে ২০২৫)
বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে সরকার এর আগে জারি করেছে অডিট অধ্যাদেশ। প্রকিউরমেন্ট আইন সংশোধন করে ১০ শতাংশ কমবেশির নিয়ম তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ক্ষমতা দিয়েছে স্বাধীনভাবে পরিসংখ্যান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে। সামাজিক নিরাপত্তার সব তথ্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ ছাড়া ভালো ও খারাপ ঋণ চিহ্নিত করা, করছাড় যৌক্তিকীকরণ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব আহরণ কৌশল, দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এবং অবসায়নের জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ জারি করেছে। এসবের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করা হয়েছে, যদিও অব্যাহত প্রতিবাদ আমলে নিয়ে বিলুপ্তির আদেশ পুনরায় বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস কাস্টমস ও এক্সাইজ এবং কর ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজস্ব বোর্ড পৃথকের অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা, ২৫ মে ২০২৪)
৩.১৯৯২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোকবল ও কর্মকাঠামোয় প্রথম সম্প্রসারণ ও সংস্কার নিয়ে আসা হয়। এর আগে ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর আইন পাস এবং প্রবর্তন বাংলাদেশের রাজস্ব সংস্কৃতির ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা ছিল। বাংলাদেশে ভ্যাট আইন প্রবর্তনের প্রাক্কালে তৎকালীন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, অনুরূপ অন্য কোনো আইন প্রবর্তনের সময় এত সমালোচনা ও বিরোধিতা অতীতে হয়নি। ব্যাপক বিরোধিতার মুখেও মূসক আইনটি পাস ও প্রবর্তনে দৃঢ়তা প্রদর্শন এবং দূরদর্শিতার পরিচয় দেয় তৎকালীন সরকার।
এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর এখন রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং আদায়—দুটি কাজ করে থাকে। নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে রাজস্বনীতি প্রণয়ন একটি বিভাগ করবে এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। রাজস্ব খাতে হয়রানি কমাতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা রাজস্বনীতি ও আদায় কার্যক্রম—দুটি আলাদা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যেসব নীতি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা কাঠামোগত ও কার্যকর রূপ লাভ করতে পারেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত প্রকৃতি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনবিআর তথা করব্যবস্থার সংস্কার একটা সাধিত না হওয়া বকেয়া বাস্তবতা।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করা হয় জোরালো কোন আলোচনা ছাড়াই। নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দুটি পৃথক বিভাগ তৈরি করেছে সরকার, কিন্তু রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশকে আমলে না নিয়ে ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। তাই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এর মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থায় নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
উন্নত কর সংস্কৃতিচর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্বনীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বতন্ত্র সংস্থা। এমনটা হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব কম খাটানোর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে করনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বার্থের সংঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের সুযোগ থাকবে। প্রকারান্তরে কর আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় নির্বাহী প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আইনি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
৪.বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা দেখেছি, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট আদায়-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন করা যায়নি, হয়রানি ও দুর্নীতি কমেনি, চালান জালিয়াতি বন্ধ হয়নি, কর ফাঁকি আর অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। দেশের কর জিডিপির অনুপাতও বাড়েনি; বরং কমে গেছে এক যুগে। এর মধ্যেই পাবলিক অডিট অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর মাধ্যমে সরকার সিএজির রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষার এখতিয়ার কেড়ে নিয়ে এ ক্ষেত্রে অনিয়মকে জবাবদিহির বাইরে রাখার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এসবের পেছনেও আমলাতন্ত্রের ভেতরে থাকা সংস্কারবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহলের ভূমিকা রয়েছে। তাদের প্রভাবেই আরও একবার নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক্করণের নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো।
আইনি ম্যান্ডেট অনুযায়ী এত দিন এনবিআর রাজস্বনীতি প্রণয়নের পাশাপাশি শুল্ক-কর আদায়ের কাজটি করে আসছিল। এতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জটিলতা ছিল সত্য। এ কারণে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, একই সংস্থার কাছে নীতি প্রণয়ন ও আদায়ের দায়িত্ব থাকায় তাতে কর–ব্যবস্থায় স্থবিরত দেখা দিয়েছে ।
এটা স্বাভাবিক ছিল যে রাজস্ব খাতের নেতৃত্ব আসবে রাজস্ব খাত থেকে। রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞ লোকেরাই এ খাতের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে পারেন। শুল্ক-কর নীতি প্রণয়ন ও আদায় অন্য লোকেরা করলে তা বাস্তবসম্মত না–ও হতে পারে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে সংস্থাটির সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো। ক্ষেত্রবিশেষে সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে পারবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে কোনো সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে শীর্ষ কর্মকর্তা বাইরে থেকে আসায় এনবিআর ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি, আর দেশের কর সংস্কৃতিও অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
নতুন অধ্যাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কর ও শুল্ক ক্যাডার থেকে যে ১৬ জন্য কর্মকর্তা এনবিআরের সদস্য ছিলেন, তাঁদের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এনবিআরে সচিব পদমর্যাদার যেসব পদ ছিল, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? এনবিআর কর্মকর্তাদের শঙ্কা, তাঁদের পদোন্নতির সুযোগ কমে যাবে। এনবিআরের বিলুপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এর সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, এই সংস্কারের ফলে রাজস্ব খাতে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়বে, সীমিত হতে পারে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সুযোগ–সুবিধা ।
এসবের চেয়ে বড় আশঙ্কা রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা নামে যে দুটি বিভাগ করা হলো, তাদের সমন্বয় কীভাবে হবে? মূল উদ্দেশ্য যে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না অর্থাৎ করের আওতা বড় করা সম্ভব হবে কি না—এসব অনিশ্চয়তার সুরহা হয়নি। বাজেটে যে কর আহরণের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এনবিআর কখনোই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যেসব নীতি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা কাঠামোগত ও কার্যকর রূপ লাভ করতে পারেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত প্রকৃতি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনবিআর তথা করব্যবস্থার সংস্কার একটা সাধিত না হওয়া বকেয়া বাস্তবতা।
এম এম খালেকুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী