বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যার বেশির ভাগ ঘটছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে উপকূলীয় বন আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বন সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নানা কর্মকাণ্ডে এ বন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ইভেন্ট অন কোস্টাল ফরেস্ট কো ম্যানেজমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন অ্যান্ড এসডিএসএস টুল’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তারা, আইনবিদ, পরিবেশকর্মী ও উপকূলীয় অধিবাসীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির প্রথম সারিতে রয়েছে। এর মধ্যে নানা ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলা করছি আমরা।’ এ সংকট মোকাবিলায় উপকূলীয় বন রক্ষার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপকূলীয় বন শুধু আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে না, এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন–জীবিকারও উৎস। তাই এ বন রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আলোচনায় বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্যসহ বন রক্ষার কথা বলা হলেও প্রকল্প প্রণয়নের সময় বনের ক্ষতির বিষয়টি সরকার মূল্যায়ন করে না। কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণে সাত লাখ ২০ হাজার গাছ ও ২৬টি পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৯২৭ সালের বন আইনে বনের সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি এবং বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব সম্পর্কেও পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা নেই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বন অধিদপ্তরের বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বন রক্ষায় ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উপকূলীয় বনকে সংরক্ষিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। সংরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত এটি থাকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অধীন। বন দখল হলে এটার দায় দেওয়া হয় বন বিভাগকে।

মিহির কুমার বলেন, বন রক্ষায় সহব্যবস্থাপনা কমিটি (কো–ম্যানেজমেন্ট কমিটি) ভালো কাজ দেয়। এ কমিটির কারণে সুন্দরবনে গাছ কাটা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে।

সহব্যবস্থাপনা কমিটি হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সৃষ্ট একটি কমিটি, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বন রক্ষার একটি প্রয়াস।

অক্সফাম বাংলাদেশের জলবায়ুনীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ যেমন উপকূলীয় বনে চিংড়ি ঘের, গাছ কাটা এসব কারণে প্রতিবছর ১ শতাংশ করে ম্যানগ্রোভ বন কমছে। কৌশলগত অংশীদারত্ব ও সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ সম্ভব।

বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (উন্নয়ন) জ্যাকব ডি লিউন বলেন, বাংলাদেশে আইন আছে পর্যাপ্ত; কিন্তু তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না। জনবলের ঘাটতি, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে আইন প্রয়োগের পথ প্রশস্ত করতে হবে।

কর্মশালায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনের সময় থেকে বন ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার আদায়, বন রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়ে সবাই গুরুত্বারোপ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব কল প ন ই পর ব শ স রক ষ জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

একে একে সবাই উঠে দাঁড়ালেন, করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানালেন: আয়রনম‍্যান আরাফাত

সেই অষ্টম শ্রেণি থেকে প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক আমি। বাসার কাছেই ছিল একটি ওষুধের দোকান। সেখানে পত্রিকা রাখা হতো। স্কুলে যাওয়া–আসার পথে সেই দোকানে বসে পত্রিকা পড়তাম।

কলেজে ওঠার পর প্রথম আলোতে একদিন বাংলা চ‍্যানেল পাড়ি দেওয়ার খবর পড়ি। পড়ে রোমাঞ্চিত হই। চিন্তা করি, কীভাবে সম্ভব সাগরে সাঁতার কাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও সেটি মাথায় ছিল। ২০১৩ সালে সাঁতারু লিপটন সরকার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। বাংলা চ‍্যানেল সাঁতরে পার হওয়ার ইচ্ছার কথা তাঁকে জানালাম। তিনি উৎসাহ দিলেন। শুরু হলো অনুশীলন। ২০১৫ সালে সাঁতরে পাড়ি দিলাম ওই চ্যানেল। সেই খবর ছাপল প্রথম আলো। কাছের-দূরের, কম পরিচিত-বেশি পরিচিত—সবাই খবরটা জেনে শুভেচ্ছা জানালেন। অনেক উৎসাহ পেলাম।

আমার রোমাঞ্চকর যাত্রা অব্যাহত থাকল। ২০১৭ সালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার মিশনে নামলাম। উদ্দেশ্য ছিল ‘দৌড়ের মাধ্যমে সুস্থতা’র বার্তা ছড়ানো। ২০ দিনের সেই যাত্রার গল্প ছাপা হলো ‘ছুটির দিনে’তে। শিরোনাম আজও মনে আছে, ‘দৌড়ে দৌড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’। খবরটি দেখে সেই দিন এতটা নার্ভাস লাগছিল যে সারা দিন আর কোনো কাজ করতে পারিনি।

‘চ্যালেঞ্জ রথ’ ট্রায়াথলনে বাংলাদেশের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ