সরকারের অন্যান্য বিভাগ কতটা তৎপর; জানি না। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আলোচনায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনের তৎপরতা স্পষ্ট। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। শিশুদের নাজুকতা বিবেচনায় শিক্ষা প্রশাসনের এ উদ্যোগ স্বাভাবিক। ২৬ জুন থেকে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষায়ও করোনা বিবেচনায় আসন বিন্যাসে দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে। সতর্কতা জরুরি; কিন্তু ২০২০ ও ’২১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা মোকাবিলায় যে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ বাড়লে প্রায় সব দেশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছিল। বাংলাদেশে একই বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে এসেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক সময় ছুটি ছিল। বাস্তবসম্মত কারণেই সে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তখন বিকল্প হিসেবে অনলাইন শিক্ষায় অব্যবস্থাপনা ও সময়ের আলোকে সিদ্ধান্তহীনতা দেখেছি আমরা। শিক্ষা প্রশাসন বাস্তবতার আলোকে অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে না পারায় ভুক্তভোগী হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠে আসে– ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ক্ষত তৈরি করেছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও অটোপাস’ (বণিক বার্তা, ১৬ জুন ২০২৫)। তার মানে, চার বছর পর এসেও আমরা সেই শূন্যতা টের পাচ্ছি। করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছর বন্ধ থাকার ক্ষতি হয়তো আরও কমানো যেত, যদি এর প্রভাব ও শিখনশূন্যতা নিরূপণ করা যেত। 

দীর্ঘ বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রাক্কালে সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড.

ছিদ্দিকুর রহমান বলেছিলেন, শিক্ষার্থীর ‘শিখনশূন্যতা’ পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ (সমকাল, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১)। তখনই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শিখনশূন্যতার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি। সে জন্য তিনি কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন। অথচ তখনও পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। সপ্তাহে এক-দুই দিন শ্রেণি কার্যক্রম চালু ছিল। পুরোপুরি শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয় তারও কয়েক মাস পর। অর্থাৎ বলা যায়, দুই বছর বন্ধ থাকার পর ১৫ মার্চ ২০২২ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়। তখন আমি শিখনশূন্যতা পরিমাপের ওপর জোর দিয়ে লিখেছিলাম ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাই শেষ কথা নয়’ (২৭ মার্চ ২০২২)। কিন্তু শিখনশূন্যতা পরিমাপে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। এই সময়ে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, সেই চিত্রও এসেছে যেনতেনভাবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষাশুমারির দাবি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এসব অব্যবস্থাপনার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
এখন অবশ্য করোনার সেই ভয়ংকর রূপ নেই। ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কভিডের নতুন ধরনে আতঙ্ক নয়; প্রয়োজন সতর্কতা। শিক্ষা প্রশাসন ইতোমধ্যে যে সতর্কতার কথা বলেছে, এটাই আপাতত যথেষ্ট। ঈদের ছুটি শেষে ২২ জুন সব প্রতিষ্ঠান খুলে গেছে। কিছুদিন পরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এই সময়ে পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়। 

রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কন্যার পড়াসূত্রে দেখেছি, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার বিশাল সিলেবাস স্কুল দিয়ে রেখেছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে এত বড় সিলেবাস শেষ করা কঠিন হবে। কারণ এ বছরের উল্লেখযোগ্য সময়জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বছরের শুরুতে বই সময়মতো না পাওয়ায় যেমন শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে, তেমনি রমজান মাস, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মিলে তিন সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে সিলেবাসের অনেক পড়াই বাকি। 
২০২০-২১ সালের করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার ক্ষতি থেকে অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে। মনে আছে, ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অটো পাস পেয়েছিল। সেই অটো পাসের কারণেই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে স্থগিত হওয়া ২০২৪ সালের এইচএসসির পরীক্ষায়ও অন্তর্বর্তী সরকার অটো পাস দিতে বাধ্য হয়। করোনার সময়ে এমন সিদ্ধান্ত না নিলে শিক্ষার্থীরা অটো পাসের দাবি করতে পারত না। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এখনও অনেক শিক্ষার্থীর মানসিকতায় ঢুকে গেছে– এর কথা বললেই বোধ হয় পরীক্ষা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে করোনার দোহাই দিয়েই সম্প্রতি এক দল শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছে। তাদের অযৌক্তিক দাবিতে কর্ণপাত না করায় শিক্ষা প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

করোনা মহামারির প্রথম প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা হতেই পারে। কিন্তু ২০২১ সালেও তার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। ২০২৫ সালে এসেও তা আমরা প্রত্যাশা করি না। করোনা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কী করতে হবে, সেই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা উচিত। কেবল করোনাই নয়; অন্য কোনো মহামারি, বন্যা বা এ ধরনের দুর্যোগেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রয়োজন হয়, তখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ও ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া চাই। করোনা এ ক্ষেত্রে ডিভাইস সংকটসহ গ্রাম-শহরের ইন্টারনেট গতির যে পার্থক্য দেখিয়েছে, সে পরিস্থিতিরও তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। করোনার সময়ে অটো পাস দেওয়া ও অযৌক্তিকভাবে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা প্রভৃতি সিদ্ধান্তও পর্যালোচনায় আসা উচিত, যাতে ভবিষ্যতের যে কোনো সংকটে শিক্ষা প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে।   

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ 
সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ কর ন র স ন র সময় পর ক ষ শ ন যত

এছাড়াও পড়ুন:

উড়োজাহাজের চাকার বক্সে ঢুকে কাবুল থেকে দিল্লিতে আফগান কিশোর

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে এক কিশোর উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে ঢুকে (ল্যান্ডিং গিয়ার বক্স) ভারতের রাজধানী দিল্লি পৌঁছে গেছে। তবে সে সুস্থ আছে।

অবশ্য ১৩ বছর বয়সী ওই আফগান কিশোর ভারত নয়, যেতে চেয়েছিল ইরানে। এ লক্ষ্যে রোববার ভোরে সে গোপনে কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকেছে। তারপর সবার চোখ এড়িয়ে যাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে রানওয়েতে চলে যায়। সেখানে সে কেএএম এয়ারের উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। তাঁর কাছে শুধু একটি লাল রঙের অডিও স্পিকার ছিল।

আফগান কিশোর যে উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে লুকিয়ে পড়েছিল, সেটি প্রায় ৯০ মিনিটের উড়াল শেষে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। কেএএম এয়ার আফগানিস্তানের বেসরকারি মালিকানাধীন একটি বিমান সংস্থা।

আফগান কিশোর যে উড়োজাহাজের চাকা রাখার বাক্সে লুকিয়ে পড়েছিল, সেটি প্রায় ৯০ মিনিটের উড়াল শেষে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিস্ময়করভাবে ওই কিশোর জীবিত এবং একদম অক্ষত অবস্থায় চাকা রাখার বক্স থেকে বেরিয়ে আসে।

বিমানবন্দরের কর্মীরা রানওয়েতে সাদা রঙের কুর্তা-পায়জামা পরা একটি কিশোরকে এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের জানান। তখনই কাবুল থেকে এক কিশোরের বিস্ময়কর যাত্রা সম্পর্কে তারা জানতে পারেন।

পরে সেদিন সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে কাবুলগামী একটি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়।

সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক কর্মকর্তা বলেন, ওই বালক আফগানিস্তানের কেএএম এয়ারের কাবুল থেকে দিল্লিগামী একটি উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে গোপনে উঠে পড়ে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সেটি দিল্লি পৌঁছায়।

সিআইএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে উড়োজাহাজের পেছন দিকের ল্যান্ডিং গিয়ার বক্সের ভেতর লুকিয়েছিল। সে আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের বাসিন্দা।’

বিকেল ৪টার দিকে একই উড়োজাহাজে করে তাকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়।...

কিশোর বেরিয়ে আসার পর উড়োজাহাজটিতে প্রথমে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়। পরে প্রকৌশলীরা সেটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কি না, তা পরীক্ষা করেন। পেছনের ল্যান্ডিং গিয়ার বক্সে একটি ছোট লাল রঙের অডিও স্পিকার পাওয়া যায়।

ওই কিশোরকে বিমানবন্দরের অভিবাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে নেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপর বিকেল ৪টার দিকে একই উড়োজাহাজে করে কিশোরকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়।

বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সাধারণত ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে ওড়ে। ওই উচ্চতায় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। এ ছাড়া উড়োজাহাজ যখন অত উঁচুতে ওড়ে, তখন প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়।

ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩২ জন এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

কেবিন চাপমুক্ত রাখার ব্যবস্থা থাকলেও নিচের চাকা রাখার বাক্সে তেমন ব্যবস্থা থাকে না। তাই সেখানে কেউ থাকলে তার অক্সিজেনের অভাবে, প্রচণ্ড চাপে এবং ঠান্ডায় জমে মরে যাওয়ার কথা। এমনকি চাকা ওঠা-নামার সময় মারাত্মক আঘাত পাওয়া বা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।

উড়োজাহাজের চাকা রাখার বক্সে লুকিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা এটাই প্রথম নয়। এমন ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৭ শতাংশের বেশি।

ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ কাজ করতে গিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন বছরের সাজা এড়াতে পালিয়ে বেড়ান ৪ বছর, অবশেষে ধরা
  • উড়োজাহাজের চাকার বক্সে ঢুকে কাবুল থেকে দিল্লিতে আফগান কিশোর
  • অক্টোবরে সন্তানের জন্ম দেবেন ক্যাটরিনা?
  • বিরল রোগ: চোখের সামনে সন্তান অচল হয়ে পড়লেও কিছু করার থাকে না মা–বাবার