চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ ও শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেছেন, ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন এবং মাসিক ভাতার পাশাপাশি তারা আজীবন সরকারি মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। 

উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য বিশ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। 

ফারুক-ই-আজম আরো বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখিনি বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতোদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে  যাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের 'জুলাই শহীদ' এবং আহতদের ' জুলাই যোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেওয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে। 

তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া এই ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন।

চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র।

উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় দিবস হিসাবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে। 

তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তাও অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যে সব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সেটারও সমাধান করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সরক র চ কর ম ক ত য দ ধ ব ষয়ক উপদ ষ ট জ ল ই গণঅভ য ত থ ন ন সরক র একক ল ন অন য য় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

উৎপাদন বন্ধ আরও দুই কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত

ছয় মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আরও দুই কোম্পানিকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ সোমবার থেকে এই দুটি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, নতুন এই দুটি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় শেয়ারবাজারে এখন দুর্বল মানের জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০টিতে। তাতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ কোম্পানি দুর্বল মানের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণির মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০। তার মধ্যে ১০০টি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত।

এদিকে আজ নতুন করে যে দুটি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো হলো বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি বারাকা পাওয়ার ও বস্ত্র খাতের কোম্পানি জাহিন স্পিনিং। এই কোম্পানি দুটির উৎপাদন ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির উৎপাদন টানা ছয় মাসের বেশি বন্ধ থাকলে সেই কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হবে।

কোম্পানি দুটি জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী এগুলোর শেয়ার কেনাবেচায় ঋণ–সুবিধাও বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, জেড শ্রেণির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোনো ঋণ–সুবিধা পান না বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া জেড শ্রেণির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তিতে তিন কার্যদিবস সময় লাগে। এ ও বি শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হয় দুই কার্যদিবসে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বারাকা পাওয়ারের ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ব্যক্তিশ্রেণি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে। সর্বশেষ কোম্পানিটি ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সাড়ে ৩ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ২৬ পয়সা। জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ার খবরে আজ ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা বা ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়।

বস্ত্র খাতের জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি জাহিন স্পিনিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৫ সালে। কোম্পানিটির শেয়ারের ৩১ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৬৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা লোকসান করেছে। আজ জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ার খবরে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬০ পয়সা বা প্রায় ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবশেষে দুই হাত না থাকা জসিমকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নেতাদের ওপর হামলায় জাকসুর নিন্দা
  • ভারতে বাড়ছে ধনীর সংখ্যা, সবচেয়ে বেশি মুম্বাইয়ে
  • খেলনা শিল্পের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান
  • পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস জসিমের, হাত না থাকায় জুটছে না এনআইডি
  • উৎপাদন বন্ধ আরও দুই কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত
  • ২১ দিনে প্রবাসী আয় ছাড়াল ২ বিলিয়ন ডলার
  • সঞ্চয়পত্র কেনাবেচার আলাদা বাজার তৈরির পরামর্শ দিলেন গভর্নর
  • নারায়ণগঞ্জে ভাগাড় থেকে ৫ বস্তা এনআইডি উদ্ধার, জিডি
  • দেশের বাজারের চেয়ে কম দরে ভারতে কীভাবে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে