সরকারি তেল কোম্পানি পদ্মা অয়েলের মুনাফা এক বছরের ব্যবধানে ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ কোটি টাকায়। তার আগে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ৪০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পদ্মা অয়েলের মুনাফা ১৫৪ কোটি টাকা বা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।

গত বুধবার সরকারি এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আর্থিক প্রতিবেদনের কিছু তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি। একই সভায় গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের ১৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের জন্য একজন বিনিয়োগকারীকে ১৬ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হবে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

কোম্পানিটির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ১৫৭ কোটি টাকা লভ্যাংশবাবদ বিতরণ করবে। ২৭ নভেম্বর রেকর্ড তারিখে যাঁদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তাঁরা ঘোষিত এই লভ্যাংশ পাবেন।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের পর চলতি বছরই কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৯ সালে কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর প্রায় ১৬ বছর পর এবার ১৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিলেও গতকাল ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন পদ্মা অয়েলের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা কমে দাঁড়ায় ১৯৪ টাকা ৩০ পয়সায়।

পদ্মা অয়েলের বুধবারের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পাশাপাশি চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেরও আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে চলতি বছরের একই প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ১৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১২৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা ৩৪ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ২৭ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি কোম্পানি পদ্মা অয়েল ১৯৭৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটির শেয়ারের মালিকানার ৫০ শতাংশ রয়েছে সরকারের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ শতাংশ, ১৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আর বাকি শেয়ার বিদেশি ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র একই সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসা তিন গুণ, মুনাফায়ও বাটাকে ছাড়িয়ে অ্যাপেক্স 

দেশের বাজারে জুতার ব্যবসায় বহুজাতিক কোম্পানি বাটাকে ক্রমেই পেছনে ফেলছে দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। দেশের জুতা বিক্রিতে বড় হিস্যা এখন অ্যাপেক্সের। বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের ব্যবসা বেড়ে এখন প্রায় তিন গুণ হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ব্যবসা করেছে ৪৮৪ কোটি টাকার। একই সময়ে বাটা শু ব্যবসা করেছে ১৮৪ কোটি টাকার। সেই হিসাবে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে। অর্থাৎ বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের ব্যবসা প্রায় তিন গুণ বেশি।

গত প্রান্তিকে আমাদের বিক্রি বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ২৬ সেপ্টেম্বরে ‘ফাউন্ডারস ডে’র বিক্রি। তাতে সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে। নাসিম মঞ্জুর, এমডি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার

এদিকে চলতি বছরের শুরুতেও মুনাফার দিক থেকে অ্যাপেক্সের তুলনায় এগিয়ে ছিল বাটা শু। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি–মার্চ) বাটা শু মুনাফা করেছিল ৩৭ কোটি টাকা। আর অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা ছিল ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) এসে বছরের শুরুর এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার যেখানে আড়াই কোটি টাকা মুনাফা করেছে, সেখানে বাটা শু লোকসান করেছে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফায় অ্যাপেক্সের চেয়ে বাটা শুর পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ প্রশাসনিক ও পণ্য বিপণন, বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ বেশি খরচ। উল্লিখিত সময়ে ১৮৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে বাটা শুর প্রশাসনিক, বিপণন ও সরবরাহ বাবদ খরচ হয়েছে সাড়ে ৭৯ কোটি টাকার বেশি। সেখানে ৪৮৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে অ্যাপেক্সের এ খাতে খরচ হয়েছে ৮২ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে ১৮৪ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে বাটা শুর পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৬১ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে। আর জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে অ্যাপেক্সের ৪৮৪ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৩৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে। এ তুলনায় দেখা যায়, ১০০ টাকা আয় করতে বাটার উৎপাদন খরচ যেখানে ৬১ টাকা, সেখানে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ৭৩ টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পরও বাটার চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। যার প্রধান কারণ প্রশাসনিক ও বিপণন খরচ বাটার তুলনায় অ্যাপেক্সের কম।

আয় ও মুনাফার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক প্রান্তিকে প্রথম আমরা বাটার চেয়ে মুনাফা বেশি করেছি। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে গত প্রান্তিকে আমাদের বিক্রি বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ২৬ সেপ্টেম্বরে ‘ফাউন্ডারস ডে’র বিক্রি। এ উপলক্ষে দেওয়া বিশেষ ছাড়ে পণ্য বিক্রিতে অবিশ্বাস্য সাড়া পেয়েছি। তাতে সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে। যার সুফল ওই প্রান্তিকে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আমরা পরিচালন খরচ কমাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদনশীলতাও অনেক বাড়িয়েছি। পাশাপাশি মানবসম্পদে আমরা বিনিয়োগ করেছি। যার সুফলও ব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি মানবসম্পদে বিনিয়োগ ছাড়া ব্যবসায় ভালো করা কঠিন। আমাদের কর্মীরাই আমাদের ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। পাশাপাশি সব বয়সের সব মানুষের পছন্দ ও সামর্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পণ্য ডিজাইন, মূল্য নির্ধারণ ও বাজারজাত করার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী। 

দেশে জুতার বাজারে বর্তমানে শীর্ষ দুই কোম্পানি অ্যাপেক্স ও বাটা। জুতার বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে বহুজাতিক বাটাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছে অ্যাপেক্স। তবে এত দিন মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স। বাটা শু তাদের আর্থিক বছরের হিসাব করে পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি–ডিসেম্বর) সঙ্গে মিলিয়ে। আর অ্যাপেক্সের আর্থিক বছর হিসাব হয় অর্থবছরের (জুলাই–জুন) সঙ্গে মিলিয়ে। সেই হিসেবে অ্যাপেক্সের সর্বশেষ হিসাব বছর ছিল ২০২৪–২৫ অর্থবছর। ওই অর্থবছরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার। গত অর্থবছর শেষে অ্যাপেক্সের কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। আর বাটা শু ২০২৪ সালে ব্যবসা করেছে ৯২৭ কোটি টাকার। তাতে গত বছর শেষে বাটা মুনাফা করেছিল সাড়ে ২৯ কোটি টাকার বেশি। 

কোম্পানি দুটির পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, বাটার চেয়ে ৮৪৬ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেও মুনাফায় পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। কারণ, বাটার চেয়ে অ্যাপেক্সের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি। ২০২৪–২৫ হিসাব বছরে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয় করতে পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে ৭১ টাকা। সেখানে বাটার ১০০ টাকা আয়ের পেছনে উৎপাদন খরচ ছিল ৫৩ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চোখের সামনে সুন্দর পদ্মপুকুর, আড়ালে নারীর কষ্টের লড়াই
  • ব্যবসা তিন গুণ, মুনাফায়ও বাটাকে ছাড়িয়ে অ্যাপেক্স