হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, কারণ কী
Published: 7th, November 2025 GMT
চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। তবে চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে দাম। আমদানি না থাকা ও দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।
চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ হয় দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জ থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকার দরে বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বাজারে কোনো আমদানি পেঁয়াজ নেই। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই বাজার চলছে। দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। আমদানির অনুমতি দিলে হয়তো কিছুটা কমবে। নাহয় কয়েক মাসে আগাম পেঁয়াজ এসে যাবে বাজারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামের পেঁয়াজও এখানকার বাজারে চাহিদা পূরণ করবে।আমদানি কমেছে ৯৫ ভাগ
চট্টগ্রামের বাজার মূলত আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। দেশে প্রতিবছর যে পেঁয়াজ আমদানি হয় তাঁর অধিকাংশ ভারত থেকে আসে। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা চট্টগ্রামে তুলনামূলক বেশি। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।
দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। আমদানির অনুমতি দিলে হয়তো কিছুটা কমবে। নাহয় কয়েক মাসে আগাম পেঁয়াজ এসে যাবে বাজারে।মোহাম্মদ ইদ্রিস, সাধারণ সম্পাদক, খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিতবে এ বছর চট্টগ্রামের বাজারে ‘রাজত্ব’ ছিল দেশি পেঁয়াজের। আমদানির অনুমতি বন্ধ ও পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে আমদানি পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে দেশে পেঁয়াজ এসেছে ১৩ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) একই সময় আমদানি ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। দেশের কৃষকদের জন্য এটি ভালো দিক বলে মনে করছেন পাইকারি আড়তদারেরা। তাঁরা বলছেন, কৃষকেরা দাম পাচ্ছেন, পাশাপাশি অন্য দেশের বাজারের ওপর আর দাম নির্ভর করছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে এবারও।
দেশের আমদানি পেঁয়াজের অধিকাংশই ভারতীয়। এ অর্থবছরেও আমদানির ৯৯ শতাংশ এসেছে ভারত থেকে। গত বছর ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়। এরপর দেশে উৎপাদন বাড়লে আমদানি অনুমতি (আইপি) বন্ধ রাখা হয়। তবে গত এপ্রিল ও আগস্ট মাসে দাম বাড়লে আইপি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামে বাড়ছে উৎপাদন
বাজারে সাধারণ ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসে। এরপর জানুয়ারিতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বাজারে এসে যায়। সেটি সরবরাহের মধ্যেই মেহেরপুর, জামালপুরসহ অন্যান্য জেলার পেঁয়াজও বাজারে আসে। গত বছর থেকে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার পেঁয়াজও। গত বছর জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯২ টন। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামের পেঁয়াজও এখানকার বাজারে চাহিদা পূরণ করবে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, দাম বাড়লেও ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা মানিয়ে নেন। এক লাফে ২০ টাকার বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, এক মাস হয়তো দাম একটু বাড়তি। কিছু সার্বিকভাবে কৃষকেরা এবার লাভবান হয়েছেন। আমদানির খবরে বাজারে দাম কিছুটা নেমে আসে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে সামনেই মুড়িকাটা এসে যাবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাবে আবার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ ত নগঞ জ আমদ ন র ব যবস য় সরবর হ আগ ম প বর ম স এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজের দামে সেঞ্চুরি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার দর থেকে মূল্য বৃদ্ধির এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো, স্থানীয় বাজারে সরবরাহের তীব্র ঘাটতি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন বাইরের পেঁয়াজের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে।
বর্তমানে পেঁয়াজ আসছে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীর বানেশ্বর ও তাহেরপুর এলাকা থেকে। ওইসব অঞ্চলেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের প্রতি মণের দাম এখন ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে ওঠা-নামা করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, যেহেতু পেঁয়াজ তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করে উচ্চমূল্যে এই পণ্যটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিবগঞ্জের সানাউল্লাহ নামে এক পেঁয়াজ ক্রেতা বলেন, “বাজারে এসে অবাক হয়েছি পেঁয়াজের দাম শুনে। রাতারাতি ৭০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হয়ে গেছে। এত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হবে ভাবতেই পারছি না। অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি এখন পেঁয়াজও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
নভেম্বর জুড়ে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক্সপার্ট কিউরার মোহা. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “মজুতকারী ও পাইকারদের মধ্যে যাদের কাছে অল্প পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে, তারাও সরবরাহ ঘাটতির সুযোগ নিয়ে দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নভেম্বর মাসজুড়ে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম স্থিতিশীল করতে হলে দ্রুত আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে।”
এদিকে ১ মাস ২৬ দিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন, “সবশেষ এই স্থলবন্দর দিয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ ২৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এরপর ভারত থেকে এই পণ্যটি আমদানি বন্ধ রয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ