চাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবি ইনসানিয়াত বিপ্লবের
Published: 24th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্র সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শাখা ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে শাখা ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কেফায়েত উল্লাহ বলেন, “চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার, চাহিদা, দাবি ও সমস্যাগুলো প্রশাসন ও শিক্ষকমণ্ডলীর নিকট উপস্থাপন করবে। প্রতিটি প্রস্তাবনা পেশ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। চাকসু বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র সংসদকে দলীয়করণ হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।”
আরো পড়ুন:
জবির আবাসিক হল ও ২ বিভাগের নাম পরিবর্তন
খাতা জমা দিতে দেরি করায় ১৬ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, হাসপাতালে ২
তিনি বলেন, “চাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকরী ও যথোপযুক্ত মানবিক ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান-গবেষণার বিকাশ ঘটাতে বছরে অন্তত একবার জার্নাল, গবেষণামূলক সাময়িকী, সৃজনশীল লিখনিমূলক সাময়িকী প্রকাশ করবে।”
চাকসুর কার্যকরী কমিটির সংস্কার প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, “চাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ ছাত্রদের থেকে নির্বাচিত হতে হবে। যেহেতু চাকসু একটি ছাত্র সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ সংসদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার (উপাচার্য) অনুমোদন ও স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক থেকে কোনো তহবিল উত্তোলন ও ব্যয় করা যাবে না এবং প্রতিমাসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। ছাত্র সংসদের উদ্যোগে কোনো ধর্মীয় সভা করা যাবে না এবং ধর্মীয় বিতর্কিত বক্তাকে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে আমন্ত্রণ করা যাবে না। এ সংসদ ধর্মীয় সাম্য বজায় রাখবেন এবং ধর্মীয় ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবেন। ছাত্র সংসদ কোনো একক রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবে না এবং কোনো রাজনৈতিক দলের পদাধিকারী ব্যক্তিকে কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করতে পারবে না। ছাত্র সংসদ সকল রাজনৈতিক দলের বিষয়ে পক্ষপাতমুক্ত ও দল নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখবে।”
লিখিত বক্তব্যে কেফায়েত বলেন, “চাকসু নির্বাচনে প্রার্থীগণ তাদের রাজনৈতিক দলীয় ব্যনারে নির্বাচন করতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। প্রার্থীর বৈধতা যাচাইয়ের জন্য তার পূর্ব কোনো অপরাধের খতিয়ান আছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে এবং ছাত্রত্বের বৈধতার প্রমাণে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। ছাত্র সংসদ তহবিলের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ দুঃস্থ ও গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে।”
এ সময় অন্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন চবি শাখা ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সভাপতি জুয়েনা সুলতানা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক আরিফুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার প্রান্ত, সহ-সভাপতি রেশমা আক্তার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো.
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জবি প্রশাসনের ‘দায়সারা’ জবাবের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়ন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের অগ্রগতি এবং সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর না হওয়ার প্রতিবাদ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে একটি চেয়ারে ‘প্রশাসন’ লিখে বসিয়ে এ প্রতীকী প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
ওই চেয়ারের সামনে রাখা প্ল্যাকার্ডে তারা ‘ছাত্র সংসদ কবে হবে?’, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ কবে শুরু হবে?’, ‘পুরান ঢাকায় দুটি হলের কাজ কবে হবে?’, ‘সম্পূরক বৃত্তি কবে হবে?’ লিখেছেন।
আরো পড়ুন:
রাবিতে বিজয় ফিস্টের খাবার খেয়ে অসুস্থ ৮৩ শিক্ষার্থী
চবি প্রশাসনকে নিয়ে পথনাটক ‘বহুতদিন অইয়ে আর মুলা ন ঝুলায়ো’
এসব প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বক্তব্যের অনুকরণে চেয়ারে লিখে দেন— ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘চিঠি পাঠিয়েছি’, ‘বের হয়ে যাও’, ‘হচ্ছে, চলছে, চলমান’, ‘৮টা টু ৮টা’।
এ বিষয়ে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলার প্রতিফলন। ন্যায্য অধিকার- সম্পূরক বৃত্তি প্রদান ও জকসু নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি— এই নীরবতা চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, “এই জবাবদিহিতা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। গণঅভ্যুত্থানের পর যাদের ক্ষমতায় আনতে আমরা গেট লক কর্মসূচি পালন করেছিলাম, তারাই আজ মৌলিক অধিকার নিয়ে উদাসীন।”
তিনি বলেন, “আবাসন, ভাতা, ছাত্র সংসদ— সবখানেই ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এই প্রতীকী জবাবদিহিতা প্রশাসনের ব্যর্থতা ও গাফিলতির নগ্ন মুখোশ খুলে দিতেই।”
সম্প্রতি জকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন এবং জকসু ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
২০০৫ সালে প্রণীত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ গঠনের বিধান না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জকসু নির্বাচন হয়নি। গত ২ জানুয়ারি ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মে ১০০তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় আরো একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রকে আইন আকারে প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গঠনতন্ত্র প্রণয়নের অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন সময়ক্ষেপণ করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পথ আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী