বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ওজন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি হলো দৈনন্দিন ক্যালরি গ্রহণ যেন ক্যালরি ব্যয়ের চেয়ে কম হয়, অর্থাৎ ক্যালরি ঘাটতি তৈরি করা। প্রতিদিন ৫০০-৭৫০ কিলোক্যালরি ঘাটতি তৈরি করলে সপ্তাহে ০.
কী খাবেন
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় কোনো খাবার। যেমন– মাছ, ডিম, মুরগি, ডাল, দুধ, টক দই ও বাদাম। প্রোটিন হজমে সময় নেয়, পেট ভরা রাখে এবং পেশি গঠনে সহায়ক, যা ওজন কমানোর সময় শরীরকে শক্তি জোগায়।
ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার: প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি রঙিন শাকসবজি ও সালাদ। এতে প্রচুর ভিটামিন মিনারেলস ও ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম টাটকা কম মিষ্টি ফল ও শাকসবজি খাবেন। এ ছাড়া ফাইবারযুক্ত কার্বোহাইড্রেট পরিমিত পরিমাণে গোটা শস্য তথা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, মিষ্টি আলু, ভুট্টা রাখলে এই জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ হজম হতে সময় নেয়। ফলে বেশি সময় ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও এনার্জি সাপ্লাই করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের অন্তত ২৫-৩০ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত।
গুড ফ্যাট বা স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, ফ্যাটি ফিশ (ইলিশ, সুরমা, পুঁটি, পাবদা), সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল ও খাঁটি ঘি খেতে পারেন পরিমিত পরিমাণে। গুড ফ্যাট ক্ষুধা কমায়, ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
পানি ও হালকা ডিটক্স পানীয়: প্রতিদিন ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন। মাঝেমধ্যে পান করুন লেবুপানি, জিরাপানি বা গ্রিন টি; যা হজম ও চর্বি কমাতে সহায়ক।
কী খাবেন না: রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা চাল, ময়দা, সাদা পাউরুটি পরিহার করুন। ফাস্ট ফুড (পিৎজা, বার্গার), চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, কেক, ডোনাট, সফট ড্রিংক ও প্যাকেটের জুস থেকেও দূরে থাকুন। এসব খাবার অতিরিক্ত ক্যালরি ও চিনি সরবরাহ করে, মেটাবলিজম ধীর করে এবং পেটের মেদ বাড়ায়।
শারীরিক কার্যক্রম ও ঘুম: নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার শরীরের চর্বি কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধৈর্য ধরে এ পদ্ধতিগুলো মেনে চললে শরীরকে সুস্থ রেখেই সব ধরনের খাবার খেয়েও ধীরে ধীরে আদর্শ ওজন লাভ করা সম্ভব।
বিশেষ পরামর্শ
খাবারের ধরনে পরিবর্তন আনুন ধাপে ধাপে, আমাদের শরীর ‘হোমিওস্টেসিস’ নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। ছোট প্লেটে খাবার খেতে হবে। খাবার খাওয়ার ১০ মিনিট আগে ও পরে পানি পান করতে হবে। খাবার ধীরে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে খান। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার রুটিন মেনে চলুন। প্রতি বেলার খাবার খাওয়ার পর অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। রাত জেগে খাবার খাওয়া বা দেরিতে রাত ৯টার পর ডিনার করা বাদ দিন।
ওজন কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট নয়– চাই ধৈর্য, পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। সবার শারীরিক চাহিদা আলাদা। তাই ওজন কমানোর জন্য ব্যক্তিগত গাইডলাইন পেতে অভিজ্ঞ নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ওজন কমানোর সর্বোত্তম উপায়। v
লেখক: সিনিয়র ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, লং লাইফ হাসপাতাল ঢাকা ও বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওজন কম ত ওজন কম ন ত পর ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৮টি সহজ ঘরোয়া উপায়
১. তরমুজ খান
তরমুজে থাকে সিট্রুলিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে গিয়ে আর্জিনিন নামক আরেকটি পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এই আর্জিনিন শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে। আর নাইট্রিক অক্সাইড হলো একটি গ্যাস, যা রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে, ফলে রক্তচাপ কমে যায়। তরমুজ যেকোনো সময় খেতে পারেন, তবে সকালের নাশতায় খেলে বেশি উপকার পাবেন।
২. খাবারে শাকসবজি যোগ করুনপ্রায় সব ধরনের শাকসবজিই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভালো। কারণ, এসবে ক্যালরি থাকে খুব কম। অন্যদিকে শাকসবজিতে থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তনালিকে শিথিল করে। একটি উদাহরণ দিই, পালংশাকে নাইট্রেট থাকে, যা রক্তপ্রবাহ ভালো করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রচুর শাকসবজি খান।
৩. বাদাম ও বীজ খানপেস্তা, আখরোট, তিসির বীজ ও কুমড়ার বীজে আছে ফাইবার ও আর্জিনিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস রক্তনালিকে শিথিল করে। প্রতিদিন একমুঠো লবণহীন বাদাম বা বীজ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে বাদামে ক্যালরি বেশি থাকে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
৪. বিট খাওয়ার অভ্যাস করুনবিটে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ কমে। তাই ঘরোয়াভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বিট খেতে পারেন। তবে দ্রুত ফল পেতে চাইলে চিনি ছাড়া বিট জুস খাওয়াই ভালো।
আরও পড়ুনপ্রতিদিন বিটরুট খেলে পাবেন ৬টি অবিশ্বাস্য উপকার৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪৫. ফ্যাটযুক্ত মাছ খানফ্যাটযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার প্রায় ১০০ গ্রাম ফ্যাটযুক্ত মাছ খেলে হৃৎস্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে। তবে এ ধরনের মাছের উপকারিতা আরও বেশি পাবেন, যখন সেসব ঝলসে নেবেন সামান্য অলিভ অয়েল ও মসলা দিয়ে। আপনি নিরামিষভোজী হলে আখরোট, তিসিবীজ, চিয়া সিডও হতে পারে ভালো বিকল্প।
৬. সাইট্রাসযুক্ত ফল খানকমলা, লেবু, মাল্টা, জাম্বুরা—এসব সাইট্রাস ফলে থাকে ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা হৃৎস্বাস্থ্যে সহায়ক। প্রতিদিন চারটি কমলার সমপরিমাণ সাইট্রাসযুক্ত ফল খেলে রক্তচাপ কমবে। চাইলে পানিতে সাইট্রাসের ফালি দিয়ে সতেজ পানীয় বানিয়েও খেতে পারেন। তবে আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; কারণ, জাম্বুরা ও জাম্বুরাজাতীয় গ্রেপফ্রুট কিছু কিছু ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুনবয়স ত্রিশের পর গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ০৭ আগস্ট ২০২৪৭. হাঁটুনরক্তচাপ কমাতে যোগব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটিও অত্যন্ত উপকারী। যদিও এসব সকালে খালি পেটে করা সবচেয়ে ভালো, তবে আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো সময় করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অবশ্যই সেটা নিয়মিত করতে হবে এবং অন্যান্য জীবনযাপনসংক্রান্ত অভ্যাস ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, ছোট ছোট পরিবর্তনও বড় পার্থক্য গড়ে তোলে।
সতর্কতাএসব ঘরোয়া উপায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া ওষুধের বিকল্প নয়। রক্তচাপের ওষুধ কখনোই নিজ নিজে হঠাৎ বন্ধ করবেন না। আবার কিছু কিছু খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে, তাই খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র : এমএসএন
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫