Samakal:
2025-08-10@01:38:52 GMT

এক দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৯৪

Published: 25th, June 2025 GMT

এক দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৯৪

প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার ৩৯৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এনিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল। গত মে মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়ল আড়াই গুণ।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মে মাসে যেখানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ডেঙ্গু রোগী ছিলেন এক হাজার ৭৭৩ জন, সেখানে জুনের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৯৯ জনে। এর আগে গত রোববার ৩২৯ জন এবং শনিবার ৩৫২ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯৪ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮, ঢাকা বিভাগে ৩৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০, খুলনা বিভাগে ৮ জন এবং রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালে ৪৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। আগের হিসাবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ও নারী সমান। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। 
২২ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগী হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। তার আগে ২০১৯ সালে রোগী ছিল এক লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। 

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয়

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) গতকাল অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ইন্টারনাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা.

নাজমুল হাসান ডেঙ্গু গাইডলাইন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এতে তিনি জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বরের হালকা উপসর্গে (৩-৫ দিন জ্বর, মাথাব্যথা ও হালকা গায়ে ব্যথা) রোগীকে বাড়িতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও তরল পানীয় (স্যালাইন, ফলের রস ও স্যুপ) খেতে হবে।

বিএমইউতে করোনা, ডেঙ্গু ও জ্বরের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ডা. নাজমুল বলেন, জ্বর কমানোর জন্য কেবল প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যাবে। ডেঙ্গুর জন্য অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। জ্বর কমে যাওয়ার পর হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়া, বারবার বমি, পেটব্যথা, রক্তপাত, ঘন ঘন দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা মলিন চামড়া, অস্থিরতা, অজ্ঞান ভাব, মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গ দেখা গেলে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ রোগীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, ফুসফুসে পানি জমার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, এতে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কোনো উপকার হয় না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই। কারণ ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যদি নিশ্চিত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকে (যেমন নিউমোনিয়া), তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতি
 
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু প্রকোপের ঊর্ধ্বগতি থামেনি। সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৭ জন। তার মধ্যে ৯৩ জনই বরগুনার।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, রোববার বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিলেন ১২৬ জন। যার মধ্যে বরগুনাতে ছিলেন ৭৩ জন। এখন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৪৩২ জন। তার মধ্যে ২৪২ জনই বরগুনা জেলায়।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা

খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।

বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।

গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ