কোনো শিক্ষকই অস্বীকার করবেন না যে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সঙ্গে তাদের শিক্ষাজীবনের সাফল্য গভীরভাবে জড়িত। বাংলাদেশে বিদ্যালয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যা কিশোর ও কিশোরীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং জ্ঞানার্জন ও সামাজিক পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করে।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এমন এক সংকটের  মধ্যে রয়েছে, যেখানে লাখ লাখ কিশোর-কিশোরী তাদের শরীর, অধিকার ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জীবনদক্ষতা ও জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি কিশোরীদের জন্য আরও গুরুতর, কারণ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ ও কিশোরী গর্ভধারণের হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

২০২৪ সালের নারী নির্যাতনবিষয়ক জরিপে দেখা যায়, ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ৬২ শতাংশ গত এক বছরে কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে, যা অন্যান্য বয়সের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি।

এই বাস্তবতা আমাদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক রীতিনীতি ও ক্ষমতার বৈষম্যমূলক কাঠামো ভাঙার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রাখে।

কিশোরীদের মর্যাদা, ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কিশোরদের মধ্যে সহানুভূতিশীল মনোভাব ও অহিংস দ্বন্দ্ব সমাধানের দক্ষতা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যা পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

এই লক্ষ্যে পাঠ্যক্রমে সংস্কার জরুরি—যেখানে স্বাস্থ্য, সম্মতি ও শারীরিক স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ৩ কোটিরও বেশি কিশোর-কিশোরীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য, সম্মতি ও শারীরিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে  যথাযথ জ্ঞান ও সচেতনতা প্রদান  অত্যাবশ্যক এবং এটি অসমতা ও সহিংসতার চক্র ভেঙে দেওয়ার জন্য জরুরি।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয়টি নতুন পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। জীবনদক্ষতা ও মানসিক-শারীরিক সুস্থতা শিক্ষায় এই সিদ্ধান্ত একটি অসম্পূর্ণ যাত্রা, যা এসডিজি-৪ (গুণগত শিক্ষা), এসডিজি-৩ (সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা) ও এসডিজি-৫ (লিঙ্গসমতা) অর্জনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান, যা মানবাধিকারের মূলনীতি বৈষম্যহীনতা, অন্তর্ভুক্তি এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন দ্বারা অনুপ্রাণিত, তার সঙ্গেও সামঞ্জস্যহীন।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন এক সুযোগ তৈরি করেছে—যেখানে নীতিনির্ধারক, পাঠ্যক্রম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদেরা একসঙ্গে কাজ করে সুস্থতা ও জীবনদক্ষতা শিক্ষাকে একটি স্বতন্ত্র ও বাধ্যতামূলক বিষয়রূপে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

২০২২ সালে চালু হওয়া ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয়টি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, যা কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন এবং সহিংসতা প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন করত। বিষয়টিকে বাদ দেওয়ার পরিবর্তে অন্যান্য শ্রেণিতেও এর পরিধি বাড়ানো উচিত ছিল, যেখানে আরও নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেত।

জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র কর্তৃক প্রায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার গুরুত্ব বাংলাদেশে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। অথচ বৈশ্বিক গবেষণা বলছে—জীবনদক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা সহিংসতা হ্রাস করে এবং কিশোর-কিশোরীদের সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ায়। শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে লিঙ্গসমতার নীতিকে অন্তর্ভুক্ত করলে বাল্যবিবাহ ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে কার্যকর অগ্রগতি সম্ভব।

তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ, ভুল তথ্যের বিস্তার এবং শিক্ষায় অসম সুযোগের এই যুগে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ প্রজন্মের কাছে নির্ভুল, বয়সোপযোগী এবং সংগতিপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করা একটি সহিংসতামুক্ত ও শিক্ষিত জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত।

যদিও প্রতিটি দেশেরই শিক্ষা নীতিমালা নিজস্ব প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক করতে হবে, তবুও একটি সর্বজনীন নীতি থাকা প্রয়োজন, যা সব দেশেই প্রযোজ্য হবে—শিক্ষা হতে হবে এমন, যা শিশুদের নিজ অধিকার রক্ষা ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে। জীবনদক্ষতার সঙ্গে সম্পৃক্ত, লিঙ্গসমতাভিত্তিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক শিক্ষা একটি ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য।

বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তর প্রক্রিয়া ভিন্ন হলেও, সর্বজনীন মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেয়, তাদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখে এবং স্থানীয় সমস্যা সমাধানে কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন এক সুযোগ তৈরি করেছে—যেখানে নীতিনির্ধারক, পাঠ্যক্রম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদেরা একসঙ্গে কাজ করে সুস্থতা ও জীবনদক্ষতা শিক্ষাকে একটি স্বতন্ত্র ও বাধ্যতামূলক বিষয়রূপে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ এবং জীবনদক্ষতা–বিষয়ক শিক্ষা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; এটি একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের তাদের শরীর, স্বাস্থ্য, অধিকার এবং সম্পর্ক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিয়ে তাদের সক্ষম করা হয়, যাতে তারা ক্ষতিকর লিঙ্গভিত্তিক নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে পারে এবং তাদের সম্পর্ক ও জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতন এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে, যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে কৌশলগত ও প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে গঠনমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এই বিষয়ে বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠ উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে UNFPA ও UNESCO সুস্পষ্টভাবে সুপারিশ করছে—স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক শিক্ষাকে একটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং এর জন্য সব শ্রেণিতে নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দের মাধ্যমে পাঠদান নিশ্চিত করতে। বিষয়টি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে কারিকুলাম প্রণয়নের সব আঙ্গিকে এর সমন্বিতকরণ ও বাস্তবায়ন, যা শিক্ষক প্রশিক্ষণ থেকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পর্যন্তও  বিস্তৃত থাকবে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং প্রস্তাবিত সংস্কার নিয়ে চলমান বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে UNFPA ও UNESCO–এর আহ্বান—কিশোর-কিশোরীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারা যেন সহিংসতা, কলঙ্ক, বৈষম্য ও সুযোগবঞ্চনার শিকার না হয়—এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। তরুণ সমাজ যাতে তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কিশোর–কিশোরীদের জ্ঞানী, দক্ষ এবং আত্মবিশ্বাসী করে তাদের সম্ভাবনাকে পরিস্ফুট করার ওপর এবং একই সঙ্গে তাদের অধিকার সুরক্ষা ভালো থাকার ওপর। এর ফলে একটি নিরাপদ এবং সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হবে। জাতীয় পাঠ্যক্রমে শারীরিক স্বায়ত্তশাসন, সম্মতি, মানসিক দৃঢ়তা এবং লিঙ্গসমতার মতো বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনো সাধারণ সংস্কার নয়—এটি প্রতিটি শিশুর জন্য একটি উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

মাসাকি ওয়াতাবে ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, ইউএনএফপিএ, বাংলাদেশ

সুসান ভাইজ প্রতিনিধি, ইউনেসকো, বাংলাদেশ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য স রক ষ ব ষয়ক শ ক ষ ন শ চ ত কর র স রক ষ ক র যকর এমন এক ন র জন ব ষয়ট র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা

খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।

গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।

বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।

গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ