জোহরানকে ‘পাগল কমিউনিস্ট ও ভয়ংকর’ বলে বিদ্রুপ করলেন ট্রাম্প
Published: 26th, June 2025 GMT
মার্কিন মুলুকে ইতিহাস রচনা করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বাছাইয়ে) বিপুল ভোট পেয়ে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচিত হলে ৩৩ বছর বয়সী মামদানিই হবেন নিউইয়র্কের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ও প্রথম মুসলিম মেয়র। তাঁর জয়ের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক পোস্টে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী জোহরান মামদানির চেহারা, কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন এবং তাঁকে ‘শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট, ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি জিতে এখন তিনি মেয়র হওয়ার পথে। এর আগেও আমরা উগ্র বামপন্থীদের দেখেছি, তবে এটা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে উঠেছে। তিনি দেখতে ভয়ংকর, বিরক্তিকর কণ্ঠ, তাঁর বুদ্ধিসুদ্ধিও খুব একটা নেই।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প জোহরানকে সমর্থন দেওয়া কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের নিয়েও উপহাস করেন। বিশেষ করে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজকে নিয়ে উপহাস করেছেন। এ ছাড়া ট্রাম্প সিনেটে সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে ‘আমাদের মহান ফিলিস্তিনি সিনেটর’ বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, ‘কান্নাকাটি করা চাক শুমার জোহরানের পেছনে ঘুরঘুর করছেন।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগেজোহরান মামদানি নিউইয়র্ক নগরের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী। এ কারণে সাধারণ নির্বাচনে বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে বেশ মনোযোগ কাড়বে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক নগরের মতো বিশাল শহরে প্রগতিশীল রাজনীতির ভবিষ্যৎ পরীক্ষার মঞ্চ হবে এই নির্বাচন। আর ট্রাম্পের এসব কথাবার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে, রিপাবলিকানরা এই নির্বাচনকে ডেমোক্র্যাটদের বামঘেঁষা প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান।
২০২১ সাল থেকে কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া এলাকা থেকে অঙ্গরাজ্যের আইনসভায় (অ্যাসেম্বলি) প্রতিনিধিত্ব করছেন জোহরান। মেয়র পদে নির্বাচিত হলে তিনি শহরে বিনা ভাড়ায় বাসে চলাচল, অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বৃদ্ধির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সিটি করপোরেশনের নিজস্ব মুদিদোকান চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এর অর্থায়ন হবে ব্যবসা ও ধনীদের ওপর অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলারের কর আরোপ থেকে আয়ের মাধ্যমে।
জোহরান ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনেও বৈদেশিক নীতি আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
জোহরান প্রকাশ্যে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক সফরে এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। কারণ, ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
আরও পড়ুননিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এপস্টেইন–কাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতেই কি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করলেন ট্রাম্প
যৌন নিপীড়নকারী কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বানের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রয়াত এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতেই গতকাল শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ আহ্বান জানান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান চেজ এবং হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। ল্যারি সামারস ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এপস্টেইনের নতুন একগুচ্ছ ই-মেইল প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম এসেছে। এতে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই-মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলো এপস্টেইন পাঠিয়েছিলেন তাঁর সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ওইসব ই–মেইল লিখেছিলেন।
এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও জোরপূর্বক যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন। ই–মেইলে দেখা গেছে, ট্রাম্প ওই মেয়েদের সম্পর্কে জানতেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একজন কিশোরীর সঙ্গে তাঁর নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন।
শিশুদের যৌন নিপীড়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ও নারী পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার এপস্টেইন ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে।
৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইন–কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ছুটি কাটাতে ফ্লোরিডা যাওয়ার সময় ট্রাম্প উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাদের এটা অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। বহু বছর ধরে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে আমার খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল।’
নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টএ বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পকে বারবার এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
২০১৯ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌনকর্মে নারী পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার বিচার প্রস্তুতি চলছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে পরে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এমন একটি যৌন চক্র চালাতেন, যেখানে কিশোরী মেয়েদের যৌনকর্মের জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হতো।
আরও পড়ুনজেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম১২ নভেম্বর ২০২৫ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও এফবিআইকে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল ক্লিনটন, ল্যারি সামারস, রেইড হফম্যান, জে পি মরগ্যান চেজ এবং আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ও জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করবেন।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘নথিতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যক্তিরা এবং আরও অনেকে তাঁদের জীবনের একটি বড় অংশ এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর দ্বীপে কাটিয়েছেন।’
আরও পড়ুনএকই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫