আগামী বছরের হজের প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
Published: 26th, June 2025 GMT
এবারের ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
আগামী বছরের হজের জন্য এরই মধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এ বছর ছোটখাটো যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে সেগুলো যেন না হয় তার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
একসঙ্গে জয়া, মেহজাবীন ও রায়হান রাফী
২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ, ১২ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন
এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য এরই মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে।
চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক ড.
নিবন্ধিত সব হজযাত্রী হজ পালন করতে পারার যে দৃষ্টান্ত এ বছর সৃষ্টি হয়েছে-তা যেন এই মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী নীতিতে পরিণত হয় সে বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি।”
হজ এজেন্সিগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। যার মধ্যে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি, চুক্তি পরিপালন এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলো দেখে তাদের এ প্লাস, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে রাখা হবে। এ প্লাস ক্যাটাগরি যারা অর্জন করেছে তাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানানোর নির্দেশনা দেন ড. ইউনূস।
আগামী বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা যেন এখন থেকে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ ব্যব্যবহার করে তাদের নানান প্রশ্নের জবাব পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে পবিত্র ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকরাও যেন এই অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান সেদিকে নজর দিতেও বলেন তিনি।
চলতি বছরের হজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে ২০২৬ সালের হজের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সফল ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “হজযাত্রীদের সৌদি আরবগামী মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে।বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অথবা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের পরিচালক প্রদত্ত সার্টিফিকেটই গ্রহণযোগ্য হবে।”
“সৌদি টাইমলাইন ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে। হজযাত্রী কোটা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
২০২৬ সালের হজ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে জানিয়ে সচিব বলেন, “১০ জুলাই বাংলাদেশের কোটা ঘোষণা করা হবে, ২১ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। ১ ডিসেম্বর বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং আগামী ৪ জানুয়ারি ভেন্ডর ও কোয়াটেশন অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০ মার্চ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান শুরু হবে এবং ১৮ এপ্রিল থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষ ২০২৬ সালের ২৯ মে পবিত্র হজের টেস্ট (সেবা যাচাইকরণ) সম্পন্ন হবে।”
ধর্ম সচিব জানান, এখন পর্যন্ত ৮০৬টি লাগেজ হারানোর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৯০টি লাগেজ পাওয়া গেছে। বাকি ১৬টি লাগেজ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর পর তিন বছর হাজি নিতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং অ্যাপটিতে ৩০ হাজার ২৩৪ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
হজ পালনকালে এ বছর ৩৮ জন ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই মুহূর্তে সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসতাপালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন। গত ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ফেরত এসেছেন ৫১ হাজার ৬১৫ জন হাজি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হজ হজয ত র দ র ২০২৬ স ল র বছর র হজ ন বন ধ র জন য র হজ র এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
আফঈদাদের সঙ্গে এশিয়ান কাপে কারা, বিশ্বকাপের সম্ভাবনা কতটুকু
ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় মুখটা মলিন থাকলেও দিন শেষে বাংলাদেশের মেয়েদের মুখে হাসিই ফিরেছে। মলিন হওয়ার কারণ—এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ পরই হাসি ফেরার কারণ—বাছাইয়ে অন্যদের সব ম্যাচ শেষ হওয়ার পর জানা গেল বাংলাদেশ নিরাপদ জায়গাতেই আছে।
অর্থাৎ, অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্তপর্বে জায়গা করতে ন্যূনতম সেরা তিন রানার্সআপের মধ্যে থাকার যে প্রয়োজনীয়তা ছিল, সেটি বাংলাদেশ পূরণ করেছে। শীর্ষ তিন রানার্সআপের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে ২০২৬ অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়েছেন আফঈদা খন্দকার-মোসাম্মত সাগরিকারা।
অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ‘এইচ’ গ্রুপে দক্ষিণ কোরিয়া, লাওস ও পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে। এই গ্রুপের সব ম্যাচ হয়েছে লাওসে। গত ২ থেকে ১০ আগস্ট সময়ে আরও ৭টি দেশে বাছাইপর্বের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে অংশ নিয়েছে ২৯টি দেশ।
মোট ৩৩টি দল আট গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলেছে ১১টি জায়গার জন্য। আগামী বছরের এপ্রিলে দ্বাদশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ হবে থাইল্যান্ডে। স্বাগতিক হিসেবে থাইল্যান্ডের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ছিল আগেই। ১২ দলের টুর্নামেন্টে বাকি দলগুলোই চূড়ান্ত হয়েছে রোববার শেষ হওয়া বাছাইপর্বে।
আট গ্রুপের আট সেরা দল হিসেবে থাইল্যান্ডের টিকিট কেটেছে দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান, জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়া। প্রতিটি গ্রুপের রানার্সআপগুলোর মধ্যে পয়েন্ট ও গোল ব্যবধানে সেরা তিনে অবস্থান নিশ্চিত করেছে জর্ডান, বাংলাদেশ ও চাইনিজ তাইপে।
যে ১১টি দল বাছাইপর্ব উত্তীর্ণ হয়ে ২০২৬ সালের মূল পর্বে জায়গা করেছে, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বাকি ১০টি দলই এএফসির দ্বিবার্ষিক যুব টুর্নামেন্টে (অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২০) আগেও অংশ নিয়েছে। একবার নয়, একাধিকবার। এশিয়া মহাদেশের নারী ফুটবলের এই প্রতিযোগিতার আগের ১১ আসরের মধ্যে সবচেয়ে কম অংশ নিয়েছে ভারত, তাও তিনবার। কিন্তু বাংলাদেশ কখনো বাছাইপর্বই উতরাতে পারেনি। আফঈদা-সাগরিকাদের ২০২৬ আসরে জায়গা করে নেওয়া তাই বিশেষই।
বিশ্বকাপও কাছেই!থাইল্যান্ডে ১২ দল নিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ শুরু হবে ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল, ফাইনাল ১৮ এপ্রিল। এই টুর্নামেন্টে ১২টি দল মোট ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। কোন দল কোন গ্রুপে আর কোন কোন দলের বিপক্ষে খেলবে, সেটি চূড়ান্ত হয় যে ড্রতে, এএফসি তা এখনো ঘোষণা করেনি। তবে পট চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পট ৪-এ আছে জর্ডান ও ভারতের সঙ্গে। অর্থাৎ, এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্বে এ দুই দেশ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে না। তিন দলই অন্য তিনটি পট থেকে একটি করে দলকে গ্রুপসঙ্গী হিসেবে পাবে। তিন গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এবং সেরা দুই তৃতীয় স্থানধারী খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখান থেকে সেমিফাইনাল হয়ে ফাইনাল।
অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের যে ফরম্যাট, তাতে দলগুলোর সামনে বিশ্বকাপ খেলার হাতছানিও আছে। ২০২৬ ফিফা অনূর্ধ্ব২০ নারী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে পোল্যান্ডে। এই আসরেই প্রথমবারের মতো ২৪টি দল অংশ নেবে। আগের চেয়ে ৮টি দল বেড়ে যাওয়ায় এশিয়া থেকে খেলার সুযোগ পাবে ৪টি দল। আর এই চার দলই চূড়ান্ত হবে এশিয়ান কাপ থেকে। ১২ দলের টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে ওঠা চার দলই পাবে বিশ্বকাপের সেই টিকিট।