ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকেলে দুই ধাপে মোট ১৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এ সময় অন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রসংগঠনের নেতারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রশাসনিক সহযোগিতা, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ভোট গ্রহণপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতামত দেন।

আলোচনায় ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ডাকসুর নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা, যাতে পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনও নির্দিষ্ট সময়ে হতে পারে; ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ও ৭(ক) ধারা পরিবর্তন করা; শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা সাপেক্ষে ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করা; ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হওয়া এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) আমাদের ডাকসুর গঠনতন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তাবিত দাবিগুলোর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি অথচ আমরা সব ছাত্রসংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের কথা বলেছি। বৈঠকে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনার পর আমাদের মনে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো একটি বিশেষ দলের লোকদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা তাদের সব ধরনের কথা রাখতে গিয়ে ডাকসু নির্বাচন পিছিয়ে নিচ্ছে। এতে করে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একধরনের হতাশা কাজ করছে। আমরা জুন মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছি।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ মাস ধরে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা ও প্রতারণা করে এসেছে। আজ যে গঠনতন্ত্রের ছাপানো কপি আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। এমনকি যেসব ধারা পরিবর্তনের ব্যাপারে সব সংগঠন ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, সেগুলোরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

নূজিয়া হাসিন বলেন, সংস্কার কমিশন কখনোই গঠনতন্ত্রের খসড়া নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। এটি পরিষ্কারভাবে দেখায়, প্রশাসন গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করতে চাইছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনাজুড়ে অনেক আলাপ হয়েছে, যেগুলো নির্বাচন কমিশনের কাজের আওতাভুক্ত নয়। তবে আমরা আমাদের আলাপগুলো প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছি। মোটাদাগে গঠনতন্ত্র সংস্কারের যেসব বিষয়ে সব ছাত্রসংগঠন একমত, যেমন সভাপতি হিসেবে ছাত্র প্রতিনিধি রাখা, সভাপতির ক্ষমতা কমানো, নির্বাচিত ডাকসুর মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন ইত্যাদি বিষয় দ্রুত অনুমোদনের কথা বলেছি।’

মাঈন আহমেদ বলেন, প্রায় সবাই ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরীক্ষা, জুলাই উদ্‌যাপনকে বিবেচনায় রাখার কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন কোনো ফয়সালা না দিলেও নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ফলোআপ মিটিংয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকারবদ্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক গঠনতন ত র আম দ র প রস ত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড় সদর ও পৌর যুবদলের নতুন কমিটি বাতিলের দাবি 

পঞ্চগড় সদর উপজেলা ও পৌর যুবদলের পূর্বের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে সম্প্রতি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে এই কমিটি বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে আগের কমিটির নেতারা। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) পঞ্চগড় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে এ দাবি তোলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. বশির, পৌর যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ময়নুল ইসলাম ও সদস্য সচিব নূর ইসলাম দিপু। 

আরো পড়ুন:

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবি

পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

তাদের অভিযোগ ত্যাগী, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিধিবহির্ভূতভাবে তথাকথিত একতরফা ও পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চগড়-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ কমিটি অনুমোদন করেছেন।

তারা বলেন, মূলত উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু নতুন কমিটির ব্যাপারে জেলার নেতারা কিছু জানে না। এখানে ত্যাগী ও বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়া এবং নির্যাতিতদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, তারা কখনো যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। তারা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদ পেতে অন্তত তিন বছর যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু তারা কেউ যুবদলের রাজনীতি করেনি।

বক্তব্যে পঞ্চগড় পৌর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব নুর ইসলাম দিপু বলেন, ‘‘নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কখনোই যুবদলে ছিলেন না। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই কমিটি বিলুপ্ত না করা হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে ত্যাগী নেতারা।’’ 

সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. বশির বলেন, ‘‘উপজেলার নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে, তিনি কখনো উপজেলা যুবদলে ছিলেন না। তার বাড়ি পৌরশহরে। পৌরসভায় বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও বিধিবহির্ভুতভাবে উপজেলা কমিটিতে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে।’’

পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল বলেন, ‘‘নতুন কমিটির বিষয়ে আমরাও জানতাম না। হঠাৎ করে জানতে পেরেছি কাগজের মাধ্যমে। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেননি।’’ 

ঢাকা/নাঈম/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিধিমালা সংশোধন এক দিনেই করা যায় 
  • পঞ্চগড় সদর ও পৌর যুবদলের নতুন কমিটি বাতিলের দাবি