মাসুদ রানা (৪০) একটি অনুপ্রেরণার নাম। বাবা মো. খায়রুল ইসলাম ছিলেন কৃষক। দিনাজপুর শহরের নয়নপুর এলাকায় বাড়ি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট মাসুদ। পারিবারিক ১২ বিঘা জমিতেই ফসল ফলানোর কাজ করতেন বাবা। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবাকে হারান মাসুদ। বড় ভাই সংসারের হাল ধরেন। ভাইবোন সবাই বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করতেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার পাশাপাশি মাসুদ সেন্ট্রাল কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ নেন। স্থানীয় চেহেলগাজী স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সময় ১৯৯৯ সালে স্থানীয় রামজীবনপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন।
এরপর তিনি মেজ ভাইয়ের সঙ্গে রাইস মিল সেটিংয়ের কাজে যুক্ত হন। ২০০০ সালে তিনি শহরের রাজবাড়ী এলাকায় এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীর ত্রিবেণী অটো রাইস মিলে মিস্ত্রি হিসেবে যোগ দেন।
মাসুদ রানার জীবনে এর পরের ইতিহাসটা কেবলই জয়ের। মাসুদ রানা তাঁর জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেন যে, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি’। রাইস মিলের চাকরি ছেড়ে মাসুদ রানা পুরোপুরি আড়তদারি ব্যবসায় নেমে পড়েন। ২০১৬ সালে নিজে পুলহাট শিল্প এলাকা–সংলগ্ন মাধবপুর গ্রামে ৩৯ শতক জমিসহ একটি হাসকিং মিল কেনেন। মিল লাগোয়া স্থানে ৫, ১০, ও ২০ শতক করে জমি কিনে বর্তমানে মোট ৯ বিঘা জমি কিনে সেখানে তিনটি ড্রায়ার, দুটি শর্টার, একটি এক হাজার মণ ধান শুকানোর চাতাল ছাড়াও ১০ হাজার বস্তা ধান ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি গুদামসহ তিনটি অটো রাইস মিল গড়ে তুলেছেন। মাসুদ রানার কোম্পানির নাম মেসার্স হাজী ইন্ডাস্ট্রিজ অটো আতপ রাইস মিল।
মাসুদ রানা বলেন, ‘আজকের উন্নতির পেছনে ঢাকা ব্যাংক পিএলসি দিনাজপুর শাখার অবদান বিশাল। ঢাকা ব্যাংক যথাসময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিলে তার আজকের এই সফলতা সম্ভব ছিল না।’ বর্তমানে তাঁর শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় ৪৮ জন ম্যানেজার ছাড়াও ২৫০ জন শ্রমিক স্থায়ীভাবে কর্মরত আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পশুর নদীতে অর্ধনিমজ্জিত ফ্লাইঅ্যাশ বোঝাই কার্গো জাহাজ
মোংলা বন্দরের পশুর ও মোংলা নদীর মোহনায় অর্ধনিমজ্জিত হয়েছে ফ্লাইঅ্যাশ (সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল) বোঝাই কার্গো জাহাজ। তবে যে কোনো সময় এটি নদীতে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মোংলা নদী ও পশু নদীর ত্রিমোহনা সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ এমভি মিজান-১ এর ড্রাইভার শওকত শেখ জানান, তাদের জাহাজটি পশুর চ্যানেলে এ্যাংকর করা অবস্থায় ছিল। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে এমভিকে আলম গুলশান-২ নামক অপর একটি লাইটার কার্গো জাহাজ এ্যাংকর করে থাকা এমভি মিজান-১ কার্গো জাহাজের ওপর উঠিয়ে দেয়। এ সময় লাইটার কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ওই কার্গো জাহাজটি নদীতে অর্ধনিমজ্জিত হয়। ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটিতে ৯১৪ টন ফ্লাইঅ্যাশ ছিল। ভারতের কলকাতার ভেন্ডেল এলাকা থেকে ফ্লাইঅ্যাশ বোঝাই করেছিল মিজান-১। ঢাকার নারায়ণগঞ্জের বসুন্ধরার ঘাটে যাওয়ার পথিমধ্যে যাত্রাবিরতিকালে মোংলা বন্দরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কার্গোর মাস্টার বেল্লাল হোসেন জানান, লাইটার জাহাজের ধাক্কায় তাদের কার্গো জাহাজের পাশ ও তলা ফেটে নদীতে অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। তবে যে কোনো সময় এটি পুরোপুরি ডুবে যেতে পারে। ওই জাহাজে থাকা ১০ জন স্টাফই অন্য নৌযানে কুলে উঠে এখন নিরাপদ রয়েছেন।
এদিকে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের চরে এ নৌযান দুর্ঘটনা ঘটলেও বন্দর চ্যানেল পুরোপুরি নিরাপদ রয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. মাকরুজ্জামান বলেন, কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ অপর একটি লাইটার জাহাজ এমভিকে আলম গুলশান-২ এর ধাক্কায় পশুর নদীর চরে ডুবে গেছে। তবে বন্দর চ্যানেল সুরক্ষিত রয়েছে। বন্দর চ্যানেল দিয়ে সকল ধরনের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।