গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ
Published: 29th, June 2025 GMT
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনের গাজায় থাকা ৪৯ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির দাবিতে তেল আবিবে গতকাল শনিবার হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা গাজায়ও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।
ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর ২৪ জুন যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় ইসরায়েল। এরপর এটিই ছিল গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতে প্রথম বড় সমাবেশ। আশা করা হচ্ছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি গাজা যুদ্ধ শেষ করার ও আটক ব্যক্তিদের ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টায় গতি আনবে।
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরায়েলে জমায়েতের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এর কারণে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সচরাচর প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
গতকাল ‘হস্টেজ স্কয়ার’ হিসেবে পরিচিত তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমবেত হন। তাঁদের ইসরায়েলি পতাকা ও হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার সময় অপহৃতদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে।
ওই ভয়াবহ হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন। তিনি হামাসকে নির্মূল ও জিম্মিদের মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার ২০ মাস পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বন্দিবিনিময়ও হয়েছে। কিন্তু এখনো গাজায় অন্তত ৪৯ জন জিম্মি রয়ে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ২৭ জন বেঁচে নেই বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
বিক্ষোভ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ‘হস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’ বলেছে, ‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। গাজার যুদ্ধও একইভাবে শেষ হওয়া উচিত। এই যুদ্ধ এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে শেষ করতে হবে, যাতে সবাই (জিম্মি) ঘরে ফেরে।’
কয়েকজন বিক্ষোভকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জিম্মিরা মুক্তি পেতে পারেন। তাঁরা ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থনের প্রশংসা করেন।
একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, গাজা সংকট শেষ করুন। নোবেল অপেক্ষা করছে।’ এখানে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের নেতা হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গাজার জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া লিরি আলবাগ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা ইরানের (বিষয়ে) সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন গাজার যুদ্ধে সমাপ্তি টানায় সাহসী সিদ্ধান্ত নিন এবং তাঁদের (জিম্মিদের) বাড়িতে ফিরিয়ে আনুন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মগোপনে থাকা আ.লীগ নেতা বেন্টু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আত্মগোপনে থাকা আজিজুল আলম বেন্টু (৫৩), তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিনের (২৯) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।
রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।
মামলার বাদী আমির হোসাইন জানান, আজিজুল আলম বেন্টু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী গৃহবধূ নাসিমা আলম (৪৮) ও ছেলে রুহিত আমিন (২৯)।
দুদক জানায়, তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলে ৯ দশমিক ৪০০৮১৮৯ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। ফলে আয়বর্হিভূত ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখা যায়।
অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিনী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে নাসিমা আলমের দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে।
২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।
দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় বেন্টুর স্ত্রী-ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘মামলটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’