মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা এ দাবি জানান। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী—এই বিবৃতি দেন।
মুরাদনগরে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ফজর আলী ও তাঁর সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং তা ভিডিও করে প্রচারের মতো বর্বর ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
নেতারা বলেন, এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। একই সঙ্গে সারা দেশে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অতীতে সংঘটিত দলবদ্ধ ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাঁরা বলেন, জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে নারীরা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদেরকেই সামাজিকভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা রোধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৬ জুন ঘটনাটি ঘটলেও সামাজিক মাধ্যমে আসার আগপর্যন্ত জনসাধারণ তা জানতে পারেনি, এটা সরকারের ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার পরিচায়ক।
নেতারা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। গত শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে ওই নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় সাংবাদিকদের ওই নারী মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এতে তিনি বলেন, “আমি নিজেই মামলা করেছি। কেউ চাপ দেয়নি। এখন আমি মামলা তুলে নিচ্ছি। কারণ আমার স্বামী আমাকে গ্রহণ করছেন না। আমার সঙ্গে কথা বলছেন না। ফোনও ধরছেন না।” ওই নারীর স্বামী দুবাই প্রবাসী।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি বিচার চাই না। আমি শান্তি চাই না। গ্রেপ্তার সবাই মুক্তি পাক।’’
আরো পড়ুন:
ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্তকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু
উখিয়ায় বাসের ধাক্কায় মাদ্রাসাছাত্রী নিহত
ওই নারীকে নির্যাতন করার একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে মুরাদনগর উপজেলার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামে এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।
ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তারা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’’ ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান।
এ মামলায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদের মুরাদনগর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি চারজন হলেন, সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক। তারা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার সকলের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।
দুই দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে ভুক্তভোগী নারীর মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, ভুক্তভোগী নারী ও মূল অভিযুক্তের মধ্যে আগে থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে ওই নারী বলেন, “ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। ওর সঙ্গে শুধু টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হতো। প্রয়োজনে ও আমাকে টাকা দিত, আমি ফিরিয়ে দিতাম।”
হঠাৎ করে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে কেউ ‘চাপ’ দেয়নি বা ‘অর্থের’ প্রলোভন দেখায়নি।
মামলা দায়েরের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘জিদ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমি মামলা করেছিলাম।’’
ঢাকা/রুবেল/বকুল