প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেল শিখে এআই কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে
Published: 30th, June 2025 GMT
উন্নত মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলের আচরণে অস্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ছে। গবেষকেরা বলছেন, এসব মডেল কেবল তথ্য বিশ্লেষণ বা নির্দেশনা পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এগুলো শিখছে প্রতারণা, হুমকি ও ব্ল্যাকমেলের মতো আচরণও।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই মডেল এখন এমন সব আচরণ করছে, যা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া তথ্য ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জানা গেছে, অ্যানথ্রপিকের তৈরি ক্লড–৪ নামের একটি চ্যাটবট মডেল এক প্রকৌশলীকে ব্ল্যাকমেল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল চ্যাটবটটি। অন্যদিকে ওপেনএআইয়ের তৈরি আরেকটি শক্তিশালী মডেল ও১ গোপনে নিজেকে বাইরের সার্ভারে স্থানান্তরের চেষ্টা করে। বিষয়টি ধরা পড়লে মডেলটি তা অস্বীকার করে। এ দুই ঘটনাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গবেষকেরা বলছেন, শুধু তথ্যভিত্তিক ‘হ্যালুসিনেশন’ নয়, এখন এআইয়ের আচরণে দেখা যাচ্ছে কৌশলগত প্রতারণা ও উদ্দেশ্যপ্রসূত মিথ্যাচার।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, এআই মডেলের এই আচরণ আকস্মিক নয়; বরং ‘রিজনিং’ সক্ষমতাসম্পন্ন যেসব মডেল ধাপে ধাপে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের মধ্যেই এমন প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সাইমন গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘চিন্তাশীল মডেলগুলোর ভেতরে এমন আচরণ দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে।’ অ্যাপোলো রিসার্চ নামের একটি এআই পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মারিয়ুস হপবান জানান, ‘ও১ প্রথম বড় মডেল, যেখানে আমরা স্পষ্টভাবে লক্ষ করেছি, এটি মিথ্যা বলছে, তথ্য গোপন করছে এবং নিজের আচরণ ঢাকতে প্রমাণ জাল করছে।’
গবেষকেরা বলছেন, এসব আচরণ এখনো সীমিত পরিস্থিতিতে, মূলত চরম পরীক্ষার সময় প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের আরও উন্নত মডেলগুলো কেমন আচরণ করবে, সেটা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। মেট্রো নামের একটি স্বাধীন মূল্যায়ন সংস্থার গবেষক মাইকেল চেন বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, ভবিষ্যতের এআই মডেলগুলো সত্যবাদী হবে, নাকি প্রতারণার পথেই এগোবে।’
গবেষকেরা বলছেন, সমস্যা চিহ্নিত করলেও তার সমাধানে এখনো যথেষ্ট অগ্রগতি নেই। এর একটি বড় কারণ গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তি ও স্বচ্ছতার অভাব। সেন্টার ফর এআই সেফটির গবেষক মান্টাস মাজেইকা জানান, ‘অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে বড় এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় কয়েক হাজার গুণ কম কম্পিউটিং রিসোর্স রয়েছে। এতে আমরা যথাযথভাবে মডেল পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পারছি না।’ অ্যানথ্রপিক ও ওপেনএআই তাদের তৈরি মডেলগুলোর জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ করলেও স্বচ্ছতা ও গবেষণায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে সেসব তেমন কার্যকর হচ্ছে না বলে দাবি গবেষকদের।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এআই–সংক্রান্ত যে আইন ও নীতিমালা রয়েছে, সেগুলো মূলত মানুষের অপব্যবহার ঠেকানো নিয়েই বেশি চিন্তা করে। মডেল নিজেই যে বিপজ্জনক আচরণ করতে পারে, তা নিয়ে আইনগত কাঠামোয় এখনো তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন এআই আইন প্রযুক্তির মানবিক ব্যবহার নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ দিলেও মডেলগত বিচ্যুতি বা বিকৃতিবিষয়ক কোনো সুস্পষ্ট ধারা নেই।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি বলেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘বিচারকাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। প্রশ্নের জবাব ও সূচনা বক্তব্য দেন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল। এ সময় ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, গ্রেপ্তারের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হট্টগোল সৃষ্টি করে বিচারকার্যের পরিবেশ বিঘ্নিত করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।
সংবাদ সম্মেলন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ফ্যাসিস্ট রেজিমের যাঁরা তল্পীবাহক আছেন, তাঁরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনা। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইনজীবীরা ও দেশের মানুষ মনে করছে, সেই বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার একটা ট্রায়াল (মহড়া) ছিল গত ১১ আগস্ট। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর যিনি গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন, খায়রুল হকের জামিন চাওয়ার নামে আইনজীবীরা যাঁরা ছিলেন, প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট রেজিমের দোসর। তাঁরা সেদিন আদালতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রমাণ করার অপপ্রায়স চালিয়েছিলেন যে আদালত সঠিকভাবে কাজ করছেন না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘খায়রুল হকের কীর্তি বা কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ জানে। তিনি আজকে আইনের আওতায় এসেছেন।…তাঁর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি। বিচার চাই যেন ভবিষ্যতে আর নতুন কোনো খায়রুল হক এই জুডিশিয়ারি থেকে সৃষ্টি না হয়। আর জামিনের বিষয়ে অবশ্যই সবাই চাইতে পারে। কিন্তু জামিন চাওয়ার আবেদন সামনে নিয়ে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করা, আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা—তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
লিখিত বক্তব্যে আদালতের ভেতরে বিশৃঙ্খলাকারী আওয়ামী লীগের দোসর আইনজীবী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানিয়েছে ফোরাম। একই সঙ্গে আদালতের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করে সংগঠনটি।
উন্মুক্ত আদালতে বিচারপতিদের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আদালতের প্রতি অবহেলা এবং সহকর্মী আইনজীবীদের গায়ে হাত তোলা পেশাগত অসদাচরণের শামিল উল্লেখ করে আইনজীবীদের এই অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা’ অনুসারে ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’ গ্রহণ করে সনদ বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিও দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এই সংগঠনটি।