শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধের আরও ১০০ মিটার অংশ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারসংলগ্ন এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেয়। এতে ঘাট এলাকার ১০টি দোকানঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে গত ১৫ দিনে বাঁধের ৬০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়েছে। এর ফলে ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ১৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে আরও ৫০টি বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিতে আছে বাজার ও ঘাট এলাকার আরও ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি আলম খারকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবারও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় প্রথম বাঁধভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছরের ৭ জুন ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার এবং বুধবার আরও ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে ৫০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন থামানো যাচ্ছে না।

পাউবো জানায়, জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকেই পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের অংশ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। সেতু এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য সেতু থেকে ভাটির দিকে ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে সেটির সঙ্গে নদীশাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।

মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, গতকাল আবার ভাঙন শুরু হওয়ায় ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ আরও কিছু দোকান সরানো হচ্ছে। বাঁধ থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা এত দিন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছিলেন। এখন ২৫০টি দোকানের মালিক ও কর্মচারী আতঙ্কে আছেন।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, বাঁধটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ভাঙন হচ্ছে। একদিকে ভাঙন রোধের কাজ চলছে, অন্যদিকে নতুন ভাঙন দেখা দিচ্ছে। দোকানগুলো সরানোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘নদীতে এখন পানি ও স্রোত বেশি। এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১০০ ম ট র এল ক র এল ক য় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ