সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
Published: 24th, July 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে দাবিকৃত ১ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন মোল্লার দোকানপাট ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ২নং ঢাকেশ্বরী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধারা মালিকানাধিন ৪টি দোকান ভেঙে নিয়ে যায় একটি চক্র।
জানা গেছে, বিগত ৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ডাবুইল্লা, মামুন, জাকির, জামাল মিয়াসহ আরও অজ্ঞাত নামা বেশ কয়েকজন ওই মুক্তিযোদ্ধার কাছে এক লাখ টাকা চাদা দাবি করে।
টাকা না দিলে দোকান পাট ভাঙচুর করার হুমকি দেয় তারা। পরে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নং- ২২৯, তারিখ-০৪-১০-২৪ ইং। জিডি করার পরেও তারা ঐ দোকানের ভাড়া জোরপূর্বক তুলতো।
কেনো ভাড়ার টাকা তারা নিয়ে জানতে চাইলে তারা উত্তরে বলে তোদের দোকান ভেঙে দেবো। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই দুপুরে উল্লেখিত দোকানগুলো ভেঙে চুরমার সহ নিশ্চহ্ন করে দেয় ঐ চক্রের সদস্য্যরা।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মহিউদ্দীন মোল্লা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ২নং ঢাকেশ্বরী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কের পাশে ৪টি দোকান নির্মাণ করেছি এবং শান্তিপুর্ণ ভাবো ভোগ দখল করছি। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর কতিপয় লোকজন দোকানগুলো দখল করার পায়তারা সহ এক লাখ টাকা চাদা দাবি করে।
এ ঘটনায় থানায় জিডি করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এরপর আজকে বৃহস্পতিবার দোকানগুলো ভেঙে লুট করে নিয়ে যায় ডাবুউল্লাসহ গংরা।
ডাবুইল্লা ও মামুন গংরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খোকনের লোকজন বলে জানা গেছে। যারা ভাঙচুর করছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকনের নির্দেশে এসব দোকান ভাঙচুর করা হচ্ছে ।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধারা হয়েও চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা সহ দোকানগুলো ফেরত পেতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি। দেলোয়ার হোসেন খোকন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগষ্টের পর বিএনপির কিছু ছেছরা নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে বিভিন্ন মানুষের বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি ও দোকানপাট দখল, লুটপাট ও ভাঙচুর করতে দেখেছি। এখন দেখলাম একজন মুক্তিযোদ্ধার দোকানপাট ভাংচুরের ঘটনা । এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী এলাকাবাসির।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুর আলম জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ায় কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার নির্দেশ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া দেশদ্রোহের শামিল বলে ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা শ্রীভূমির ‘অপরাধী’ কংগ্রেসিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসাম পুলিশকে এই নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, অপরাধী নেতাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সোমবার আসামের করিমগঞ্জ জেলার শ্রীভূমি শহরে কংগ্রেস সেবাদলের বৈঠকে স্থানীয় এক নেতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন করেন। এই গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন বিজেপিশাসিত আসামের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অশোক সিংঘল। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কংগ্রেসের সভায় সেই দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে, যারা উত্তর-পূর্ব ভারতকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।’
অশোক সিংঘলের আরও অভিযোগ, কংগ্রেস ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করে। সেই রাজনীতির মধ্য দিয়ে তারা আসামের জনবিন্যাসের বদল ঘটাতে চায়। তাই তারা কয়েক দশক ধরে অনুপ্রবেশে মদদ দিয়ে আসছে। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস বৃহত্তর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইছে।
ওই পোস্টের পরপরই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরাল হয়ে ওঠে। রাজ্যের বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেশদ্রোহের অভিযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যাঁরা ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে তাঁদের দেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে চান, কংগ্রেস তাঁদের মদদ দিচ্ছে। সে দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া ওই পরিকল্পনাকেই অনুমোদন করছে।
হিমন্ত বলেন, কংগ্রেসের সভা শুরু হচ্ছে ভারতের নয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে। এটা দেশের জনগণ ও জাতীয় সংগীতের অবমাননা। এ কারণে তিনি শ্রীভূমির কংগ্রেস কমিটি ও তাঁর নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের বিভিন্ন ধারায় মামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, কংগ্রেসের নেতাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কংগ্রেসের ওই সভার ভিডিওটি আসাম বিজেপির পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে কংগ্রেসবিরোধী প্রচার।
রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হয়েছে, কংগ্রেস বাংলাদেশের মোহে আচ্ছন্ন। বিজেপি অভিযোগ তুলে লিখেছে, ‘মাত্র কয়েক দিন আগে ভারতের গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে বাংলাদেশ এক মানচিত্র প্রকাশ করেছিল। এখন বাংলাদেশ নিয়ে আচ্ছন্ন কংগ্রেস আসামে গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে। এরপরও কেউ যদি কংগ্রেসের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারেন, তা হলে হয় তিনি অন্ধ, কিংবা মদদদাতা অথবা দুটিই।’
বিতর্ক শুরু হতেই সরব হয় কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি সংস্কৃতির আবেগ। বিজেপি সব সময় বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলার মানুষকে অপমান করে। বাঙালিদের তাচ্ছিল্য করে।
গগৈ বলেন, বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন বোঝে না। বাঙালির ইতিহাস তারা জানে না। বাংলার মানুষ ও বাঙালিদের তারা স্রেফ ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করে। বাঙালির ভাষা, আবেগ ও সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করে না।
গৌরবসহ কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, জ্বলন্ত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এই অপ্রয়োজনীয় ও অনভিপ্রেত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তারা অনাবশ্যক রাজনীতি করছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি লিখেছিলেন ১৯০৫ সালে, ব্রিটিশ রাজ যখন বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ এই গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়।