থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে প্রবেশ করায় স্থলবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য থাই নৌবাহিনী শনিবার (২৬ জুলাই) তাদের সীমান্তের কাছে চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর। 

থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম দ্য নেশন জানিয়েছে, কম্বোডিয়ান সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান সম্প্রসারণের পর, রয়েল থাই নৌবাহিনী সীমান্তের তিনটি পয়েন্টে কম্বোডিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘ট্রাট স্ট্রাইক ১’ অভিযান শুরু করেছে। এর আগে চারটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার কথা জানিয়েছিল থাই বাহিনী।

এদিকে, কম্বোডিয়ার সংবাদমাধ্যম খেমার টাইমস জানিয়েছে, দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে সব ফ্লাইট চলাচল নিষিদ্ধ করেছে।

আরো পড়ুন:

থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চায় কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় থাইল্যান্ডের বিমান হামলা

দেশ দুটির মধ্যে চলমান সংঘাতের ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার (২৫ জুলাই) জরুরি বৈঠক করেছে, সেখানে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড উভয় দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে কম্বোডিয়ার জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ছিয়া কেও বলেন, “আমরা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চেয়েছি—নিঃশর্তভাবে—এবং আমরা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানেরও আহ্বান জানাচ্ছি।” তিনি জানান, নিরাপত্তা পরিষদ উভয় পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন ও কূটনীতি অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরাও এটাই চাইছি।”

থাইল্যান্ড এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সংঘাতের জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “থাইল্যান্ড কম্বোডিয়াকে আহ্বান জানাচ্ছে সব ধরনের আগ্রাসন ও শত্রুতামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং সদিচ্ছা নিয়ে আবারও সংলাপে ফিরে আসতে।”

তবে, উভয় পক্ষের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও শনিবার নতুন নতুন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, শনিবার কম্বোডিয়ানরা দক্ষিণে উপকূলের কাছে একটি নতুন এলাকায় আক্রমণ শুরু করেছিল, কিন্তু নৌবাহিনী তাদের প্রতিহত করেছে।

থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতির জন্য তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন,  “এই সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো প্রয়োজন নেই।” 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ দুটির মধ্যে মুয়েন থম মন্দির ও এর সংলগ্ন অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিবাদ হঠাৎ সংঘর্ষের চেহারা নেয় গত বৃহস্পতিবার। যুদ্ধবিমান, কামান, ট্যাংক নামিয়ে দুই দেশের স্থল বাহিনী মুখোমুখি যুদ্ধে নেমে পড়ে। 

ব্যাংককের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে দেশটিতে ১৯ জন নিহত হয়েছেন- যাদের মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৬ জন সেনা। তারা আরো জানিয়েছেন, প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে ১৩ জন নিহত হয়েছেন- এর মধ্যে ৮ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৫ জন সেনা। তারা আরো জানিয়েছে, প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন।

 

থাইল্যান্ডের দাবি, বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে থাই বাহিনীর ওপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানোয়। তবে কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সেনারা পূর্বের এক চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তবর্তী একটি খেমার-হিন্দু মন্দির এলাকায় অগ্রসর হওয়ায় সংঘর্ষ শুরু হয়। 

মে মাসের শেষদিকে এক কম্বোডিয় সেনার মৃত্যু ঘিরে সীমান্তে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর থেকেই দুই দেশ সীমান্তে সেনা সংখ্যা ও অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতে থাকে। দুই দেশের মধ্যে বিরোধ ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে চলে আসছে, যখন ফরাসিদের কম্বোডিয়া দখলের পর দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ব ড য় র কম ব ড য স ঘর ষ আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা

বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।

এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।

যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ