ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তি চরমে
Published: 27th, July 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আজ রোববার ভোর থেকে হঠাৎ করে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতি। মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক বা জেলা উপজেলা ও গ্রামীণ সড়ক বা রাস্তায় সিএনজিচালিত কোনো অটোরিকশা চলাচল করেনি। তিন দফা দাবিতে জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক পরিবহন সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার লাখো মানুষ। বিপাকে পড়েছেন হাজারো পরীক্ষার্থী।
দাবিগুলো হচ্ছে, জেলা পুলিশ লাইনে নানা কারণে আটক শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিনা শর্তে ছাড়তে হবে, জেলার সর্বত্র (ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বাদে) তাঁদের প্রবেশ করতে দিতে হবে এবং ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, নন্দনপুর বাজার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও শহরতলী, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করেনি। বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক, চালক ও তাঁদের লোকজন (শিশু-কিশোর) লাঠিসোঁটা হাতে পিকেটিং করছেন। তাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলতে দিচ্ছেন না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখলেই থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন।
সাজেদ মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মাথায় করে কৃষিপণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন জেলা শহরে। তিনি নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড়ে দুপুর ১২টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইখানে আসতেই মেলা ঝামেলা অইছে। অহন এই বোঝা নিয়া জেলা শহরে যামু কেমনে জানি না।’
কেন হঠাৎ ধর্মঘট ডাকলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গত এক বছরে সরকারকে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। জেলা শহরে ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে রোগী বহন করে ফেরার পথে ৫ হাজার টাকার মামলা খেতে হয়। এক মাস ধরে আমাদের শতাধিক গাড়ি আটক রাখা হয়েছে। আমাদের তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। গত শনিবার রাতে আমরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির মধ্যে অন্য কোনো যানবাহনকে বাধা দেওয়ার কথা নেই। আমরা শুনেছি কয়েকটি স্থানে দুষ্কৃতকারী কিছু লোক এমনটি করেছে। আমরা তাদের বাধা দিয়েছি, তারা আমাদের লোক নয়। রিকশা চলতে আমাদের কোনো বাধা নেই।’
পরীক্ষার্থীরা বিপাকে
হঠাৎ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এখন এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। সকাল–বিকেল চলছে পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আর স্নাতক শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। হঠাৎ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতির ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাঁদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
আকলিমা আক্তার নামের স্নাতক শিক্ষার্থীকে ১২ দিনের শিশু কোলে নিয়ে সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত শাহবাজপুর থেকে জেলা সদরে যেতে দেখা গেছে। দুপুর পৌনে ১২টায় সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ওই শিক্ষার্থী জানান, হঠাৎ করে এমন কর্মবিরতির কারণে তাঁকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তিনি ১৫ কলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি সম্মান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁকে যেতে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজকেন্দ্রে। বেলা ২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও বাকি ১৫ কিলোমিটার পথ যাওয়া নিয়ে তাঁকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সিএনজি মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। তাঁদের যে দাবি ছিল এর মধ্যে ছিল আটককৃত গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া। যাঁদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তাঁদের গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। আর যেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে, তাঁদেরটা আটক থাকছে। পরে প্রক্রিয়া শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে। কোনো অন্যায়–অবিচার এ ক্ষেত্রে করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নামে অভিযোগ করছেন। বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিযুক্ত অভিযোগ থাকলে তাঁরা আমার কাছে দিতে পারেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় পর ক ষ র থ আম দ র দ র কর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ