ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আজ রোববার ভোর থেকে হঠাৎ করে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতি। মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক বা জেলা উপজেলা ও গ্রামীণ সড়ক বা রাস্তায় সিএনজিচালিত কোনো অটোরিকশা চলাচল করেনি। তিন দফা দাবিতে জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক পরিবহন সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার লাখো মানুষ। বিপাকে পড়েছেন হাজারো পরীক্ষার্থী।

দাবিগুলো হচ্ছে, জেলা পুলিশ লাইনে নানা কারণে আটক শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিনা শর্তে ছাড়তে হবে, জেলার সর্বত্র (ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বাদে) তাঁদের প্রবেশ করতে দিতে হবে এবং ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, নন্দনপুর বাজার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও শহরতলী, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করেনি। বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক, চালক ও তাঁদের লোকজন (শিশু-কিশোর) লাঠিসোঁটা হাতে পিকেটিং করছেন। তাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলতে দিচ্ছেন না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখলেই থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন।

সাজেদ মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মাথায় করে কৃষিপণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন জেলা শহরে। তিনি নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড়ে দুপুর ১২টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইখানে আসতেই মেলা ঝামেলা অইছে। অহন এই বোঝা নিয়া জেলা শহরে যামু কেমনে জানি না।’

কেন হঠাৎ ধর্মঘট ডাকলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গত এক বছরে সরকারকে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। জেলা শহরে ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে রোগী বহন করে ফেরার পথে ৫ হাজার টাকার মামলা খেতে হয়। এক মাস ধরে আমাদের শতাধিক গাড়ি আটক রাখা হয়েছে। আমাদের তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। গত শনিবার রাতে আমরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির মধ্যে অন্য কোনো যানবাহনকে বাধা দেওয়ার কথা নেই। আমরা শুনেছি কয়েকটি স্থানে দুষ্কৃতকারী কিছু লোক এমনটি করেছে। আমরা তাদের বাধা দিয়েছি, তারা আমাদের লোক নয়। রিকশা চলতে আমাদের কোনো বাধা নেই।’

পরীক্ষার্থীরা বিপাকে

হঠাৎ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এখন এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। সকাল–বিকেল চলছে পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আর স্নাতক শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। হঠাৎ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতির ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাঁদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

আকলিমা আক্তার নামের স্নাতক শিক্ষার্থীকে ১২ দিনের শিশু কোলে নিয়ে সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত শাহবাজপুর থেকে জেলা সদরে যেতে দেখা গেছে। দুপুর পৌনে ১২টায় সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ওই শিক্ষার্থী জানান, হঠাৎ করে এমন কর্মবিরতির কারণে তাঁকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তিনি ১৫ কলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি সম্মান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁকে যেতে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজকেন্দ্রে। বেলা ২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও বাকি ১৫ কিলোমিটার পথ যাওয়া নিয়ে তাঁকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সিএনজি মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। তাঁদের যে দাবি ছিল এর মধ্যে ছিল আটককৃত গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া। যাঁদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তাঁদের গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। আর যেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে, তাঁদেরটা আটক থাকছে। পরে প্রক্রিয়া শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে। কোনো অন্যায়–অবিচার এ ক্ষেত্রে করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘অনেকে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নামে অভিযোগ করছেন। বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিযুক্ত অভিযোগ থাকলে তাঁরা আমার কাছে দিতে পারেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় পর ক ষ র থ আম দ র দ র কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাহরাইনের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্যে ভিসা চালুর অনুরোধ 

ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকসহ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করতে বাহরাইনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

উপদেষ্টা দু’দেশের জনগণের সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ভিসা পুনরায় চালুর এ অনুরোধ জানান।

বাহরাইনে ২১তম আইআইএসএস মানামা সংলাপের ফাঁকে শনিবার (১ নভেম্বর) দেশটির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন খালিফা আল ফাদেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এ সময়ে ভিসা পুনরায় চালুর অনুরোধটি জানান উপদেষ্টা। 

রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে তৌহিদ হোসেন কমিউনিটির কল্যাণ নিশ্চিত এবং সামাজিক সম্পর্ক মজবুতের লক্ষ্যে বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘ফ্যামিলি ভিসা’ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করারও অনুরোধ জানান। 

বাহরাইনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির অর্থনীতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তার দেশের সরকার ধাপে ধাপে ভিসা সুবিধা পুনরায় চালুর জন্য কাজ করছে।

বৈঠকে উভয়ে দু’দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তরে একটি চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।

তৌহিদ হোসেন ২১তম মানামা সংলাপের অধিবেশনের পাশপাশি আরো কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এসব আয়োজনে বিশ্ব নেতা, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নীতি নির্ধারকরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ