আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ও শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। সমাবেশে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণতন্ত্রের পথে থাকার অঙ্গীকার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সমাবেশ হয়। এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘গত বছর এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারফিউ ভেঙে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম। আজকের বর্ষপূর্তিতে আবারও সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি।’

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এর পেছনে রয়েছে জুলাই আন্দোলন ও গত ১৬ বছরের শহীদদের রক্ত, নিপীড়ন ও গুম-খুনের ইতিহাস।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দিনটিকে আমরা শুধু বিজয় নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তির প্রতীক হিসেবেও স্মরণ করি।’ জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আন্দোলনে যুক্ত সব সহযোদ্ধাকে অভিনন্দন জানান তিনি।

সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো.

আবুল কালাম সরকার বলেন, ‘আগামী দিনে দেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে—এই প্রত্যাশা নিয়ে এখানে একত্র হয়েছি আমরা। সেই সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম একটি বৈষম্যহীন ও ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আমরা আশা করছি, এখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ পাব। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের মালিকানা চলে গিয়েছিল অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই, ২০২৪ সালের আন্দোলনেও যেন একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ১৬-১৭ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য জীবন ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার থেকে শিশুদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, শুধু বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার জন্য।

সমাবেশ শেষে কলাভবনের সামনে থেকে একটি র‌্যালি বের হয়। টিএসসির রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয় র‍্যালিটি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবারও ষড়যন্ত্র করছে: দুদু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবারও ষড়যন্ত্র করছে। চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা করছে।”

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতীকী যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “তারা যদি আবার ষড়যন্ত্র করে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। সম্মিলিতভাবে আবার তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রত্যাশায় দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক তরুণ প্রাণ ঝরে গেছে, লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে এবং গণতন্ত্র রক্ষায় মানুষ নির্বাসিত জীবনযাপন করছে।”

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “যদি নির্বাচনের ঘোষণা আসে, তাহলে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে আবারও ক্ষমতায় আনবে।”

তিনি বলেন, “আগামী দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসবেন এবং জনগণের ওপর নির্ভর করে দেশকে এগিয়ে নেবেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।”

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলম এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়। আরো বক্তব্য রাখেন—বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, প্রিন্সিপাল শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক,মৎস্যজীবী দলের নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কৃষক দলের নেতা আব্দুর রাজী, ছাত্রদলের নেতা শামীম আখন্দ প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যারা জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা আর কখনো ফিরে আসবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিএনপি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি: মির্জা ফখরুল
  • আ.লীগ ১৫ বছরে অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ফোকলা বানিয়েছে: মঈন খান
  • যারা নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চাচ্ছে, তারা অশুভ শক্তি: আযম খান
  • অরাজক পরিস্থিতিতে ফেলতে চাচ্ছেন, উদ্দেশ্যটা কী:?
  • যারা নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক করছে, তারা গণতন্ত্রের শত্রু
  • শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবারও ষড়যন্ত্র করছে: দুদু
  • জুলাই সনদ প্রশ্নে বিএনপি–জামায়াত মুখোমুখি, সমঝোতার নতুন উদ্যোগ ৯ দলের
  • জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথে ভাঙল ৩ দশকের অচলায়তন
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন সংস্কার: আশার আলো নাকি মরীচিকা