অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লা নগরের কান্দির পাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়ক এলাকায় বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গতকাল যে ঘোষণা দিয়েছেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের পূর্বে নির্বাচন হবে”, বিএনপি সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। আমাদের নেতা তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে ঘোষণা এসেছিল, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের সামনে সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে তিনি জানিয়ে দেবেন যেন নির্বাচন মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে হয়। বাংলাদেশের মানুষ বুকভরা আশা নিয়ে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কারণ, বিগত চারটি নির্বাচনে মানুষ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আমরা আশা করব, প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা আগামী দিনে যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গতকাল প্রধান উপদেষ্টা যেসব ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনেক আপত্তি থাকার পরও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সেটিকেও সাধুবাদ জানাই। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই ঠিক করবেন আগামী দিনের বাংলাদেশ কীভাবে চলবে।’

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ বেকার যুবক কোনো কাজ পান না। কারণ, বিগত স্বৈরাচারের আমলে শুধু কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য আর চাকরি তাঁরাই পেয়েছেন, যাঁদের জিনের মধ্যে একটি দল আছে। দেশের মানুষকে কোনো ক্ষেত্রেই তাঁরা কাজ করতে দেননি। কাজেই, যদি সত্যিকারে বৈষম্য দূর করতে হয়, তাহলে যে লক্ষ্য নিয়ে মানুষ ১৬ বছর আন্দোলন করল, জুলাই-আগস্টে শাহাদাতবরণ করল, তাঁদের রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয়, সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আপনার-আমার সবার নৈতিক দায়িত্ব। এটিই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন।’

বিএনপির কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহেরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর রশিদ, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো.

সেলিম ভূঁইয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সদস্যসচিব আশিকুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা, উত্তর জেলার সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বের হওয়া বিজয় শোভাযাত্রা কান্দির পাড় থেকে শুরু হয়ে নগরের মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, সার্কিট হাউস মোড় ঘুরে জিলা স্কুল হয়ে আবার কান্দির পাড়ে এসে শেষ হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র গতক ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ছে, ট্রেন আসবে আরও ঘন ঘন

যাত্রীচাহিদা মেটাতে মেট্রোরেল রাত ১০টার পরও চলবে। সকালে চালু হবে আরও আগে; অর্থাৎ সকালে চালু ও রাতে বন্ধের সময় আধঘণ্টা করে বাড়বে। এ ছাড়া এখন দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতি আরও দুই মিনিট কমে যাবে। এর অর্থ, ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ারে) ৪ মিনিট ১৫ মিনিট পরপর ট্রেন পাওয়া যাবে। বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পরপর ট্রেন চলাচল করে।

নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে সপ্তাহ দুই পর। নতুন ব্যবস্থা আয়ত্ত করতে শুক্রবার থেকে পরীক্ষামূলক চলাচল করা হবে। দুই সপ্তাহ পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সময়সূচি মেনে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে চলার সময়ও সকাল ও রাতের বাড়তি সময়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে যাত্রী পরিবহন করা হবে; অর্থাৎ খালি ট্রেন চালানো হবে না।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানির সূত্র জানায়, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে মেট্রোরেলের সক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বর্তমানে মেট্রোরেলে দৈনিক যাত্রী যাতায়াত করে গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে গত ৬ আগস্ট সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন হয়, ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৬। নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে যাত্রীসংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়াবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।

মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়ার সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করার কথা বলা হয়েছিল। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা ৬ লাখ ৭৭ হাজারে উন্নীত হওয়ার কথা।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীচাহিদা মেটাতে ট্রেনের সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর চিন্তা অনেক দিন ধরেই ছিল, কিন্তু লোকবলের কারণে করা যাচ্ছিল না। এখন তারা প্রস্তুত। নতুন সূচিতে শিগগিরই যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। এতে যাত্রীর সংখ্যা ও আয়—দুটিই বাড়বে। সাধারণ মানুষের ট্রেনের জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। সড়কের ওপরও চাপ কমবে।

সম্ভাব্য নতুন সময়সূচি

বর্তমানে সপ্তাহে (শনি থেকে বৃহস্পতিবার) উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। দুই সপ্তাহ পর নতুন সূচিতে চলাচল শুরু হলে উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে। বর্তমানে উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।

অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল সাড়ে ৭টায়। নতুন সূচিতে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়। এ ছাড়া রাতে মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। নতুন সূচি অনুসারে, মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। মতিঝিল থেকে ছাড়া সর্বশেষ ট্রেনটি এখন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টার পর। এখন শেষ যাত্রী নামবে পৌনে ১১টার দিকে।

এ ছাড়া শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। নতুন সূচিতে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। রাতেও আধা ঘণ্টা চলাচলের সময় বাড়বে।

মেট্রোরেলের সময়সূচিতে ব্যস্ত সময় (পিক আওয়ার) এবং কম ব্যস্ত সময় (অফ পিক আওয়ার) কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার এবং অন্যান্য সরকারি বন্ধের দিনও পিক ও অফ পিক আওয়ারের সময়ের হেরফের আছে। তবে এখন সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পর ট্রেন চলাচল করে। নতুন সূচি চালু হলে পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এর বাইরে ৮ ও ১০ মিনিটের ব্যবধানে যে সময় ট্রেন চলাচল করত, সেই সময়গুলোতেও দুই মিনিট করে কমে আসবে।

মেট্রোরেলের প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলবে।

ট্রেনের সদ্ব্যবহার ও যাত্রীসুবিধা বাড়বে

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের লাইন-৬; অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পথের জন্য ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে। তবে সার্বক্ষণিক লাইনে চলাচল করে ১৩ সেট ট্রেন। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে, এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন ও সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি সাত সেট ট্রেন অব্যবহৃত থাকে। নতুন সময়সূচি কার্যকর হলে ২০ সেট ট্রেন ব্যবহৃত হবে, এতে ট্রেন অলস পড়ে থাকা কমবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দিনে ২৩৭ বার ট্রেন চলাচল (ট্রিপ) করে। নতুন সূচিতে প্রতিটি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান গড়ে দুই মিনিট করে কমে যাবে। এতে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা আরও বাড়বে।

অব্যবহৃত মেট্রোরেলের সেটের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিল ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে অব্যবহৃত ট্রেনের সেট থেকে দুটি কোচ এনে জোড়া দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি সেটে ছয়টি কোচ রয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার সময় দুই কোচ বাড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কারিগরিভাবে দুরূহ এবং নতুন করে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে এই চিন্তা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এর বদলে ট্রেন চলাচলের সময় এবং দুই ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য বাড়তি লোকবলের দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে লোকবল নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। শুরুতে চলাচল করত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে স্টেশনের সংখ্যা বেড়েছে। মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে। এখন কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

২০১২ সালে অনুমোদনের সময় মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ছে, ট্রেন আসবে আরও ঘন ঘন